‘পিছিয়ে পড়া শ্রেণি’র মানুষ যাতে চাকরি বা শিক্ষার ক্ষেত্রে পিছিয়ে না পড়ে পাঁচজনের মতো সমাজে মাথা উঁচু করে চলতে পারে, তার জন্যই সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এই সংরক্ষণ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে উঠেছে প্রশ্ন। যারা সংরক্ষণের আওতায় পড়ে, তাঁরা সত্যিই সবাই তথাকথিত ‘পিছিয়ে পড়া’ পরিবারের সদস্য কি না তা নিয় সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়েও এই বিষয়টি উঠে এসেছে। এসসি, এসটি অর্থাৎ তফসিলি জাতি-উপজাতির মধ্যে উপশ্রেণি বিভাজনে সম্মতি দিয়েছে শীর্ষ আদালত। সাত বিচারপতির বেঞ্চে উঠে এসেছে বিশেষ পর্যবেক্ষণ। বিচারপতি পর্যবেক্ষণ বলছেন, এসসি-র মধ্যেও ‘ক্রিমি লেয়ার’ চিহ্নিত করা প্রয়োজন।
এখন প্রশ্ন হল, এই ‘ক্রিমি লেয়ার’ বলতে ঠিক কী বোঝাতে চাইছে শীর্ষ আদালত। বিচারপতি গাভাই পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেছেন, পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মধ্য়ে ‘ক্রিমি লেয়ার’ চিহ্নিত করতে হবে। তবেই সমতা আনা সম্ভব। বিচারপতি বিক্রম নাথও বিচারপতি গাভাইয়ের সঙ্গে সহমত। তিনি মনে করেন, ওবিসি-র মতো এসসি-র ক্ষেত্রেও এই ‘ক্রিমি লেয়ার’ আলাদা করা জরুরি। আবার বিচারপতি পঙ্কজ মিথাল মনে করেন, সংরক্ষণের বিষয়টি একটি প্রজন্মেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। অর্থাৎ এক প্রজন্ম সংরক্ষণের সুবিধা পেয়ে থাকলে পরবর্তী প্রজন্ম পাবে না।
এই শব্দের অর্থ জানতে গেলে একটু পিছনে ফিরে তাকাতে হবে। এই শব্দ দুটি ১৯৭১ সালে প্রথমবার ব্যবহার করে ‘সত্যনাথন কমিশন’। সেই কমিশন বলেছিল, সংরক্ষণের আওতা থেকে ‘ক্রিমি লেয়ার’-কে বাদ দিতে হবে। পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালে বিষয়টিকে মান্য়তা দেয় জাস্টিস রাম নন্দন কমিটি। এ ক্ষেত্রে ‘ক্রিমি লেয়ার’ বলতে তাদেরকেই বোঝানো হয়েছে, যারা তথাকথিত পিছিয়ে পড়া শ্রেণির প্রতিনিধি হলেও রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক দিক থেকে অন্যদের থেকে এগিয়ে রয়েছে। তারা সংরক্ষণের সব সুযোগ-সুবিধা পায় না।
মূলত আয়ের ওপর ভিত্তি করেই এই শ্রেণিকে চিহ্নিত করা হয়। ১৯৯৩ সালে ঠিক করা হয়েছিল, কোনও দম্পতির বছরে ১ লক্ষ টাকা আয় হলে তাদের সন্তান ‘ক্রিমি লেয়ার’-এর আওতায় পড়বে। ২০০৪ সালে সেই মাত্রা বাড়িয়ে করা হয় ২.৫ লক্ষ টাকা, ২০০৮ সালে করা হয় ৪.৫ লক্ষ টাকা, ২০১৩ সালে ৬ লক্ষ টাকা, ২০১৭ সালে ৮ লক্ষ টাকা করা হয়। তবে ন্যাশনাল কমিশন ফর ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস পরামর্শ দিয়েছে, ১৫ লক্ষ টাকা হওয়া উচিত এই মাত্রা।
শীর্ষ আদালত উল্লেখ করেছিল, ওবিসি-র রাষ্ট্রপতি, হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারি উচ্চপদস্থ আমলা, সেনাবাহিনীর কর্নেল পদমর্যাদার অফিসারের সন্তানরা এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ ওবিসি হলেও, এই সব পরিবারের সন্তান হলে তাঁরা সংরক্ষণের সুযোগ-সুবিধা পাবে না।
এছাড়া, ডাক্তার, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, ইনকাম ট্যাক্স অফিসার, ইঞ্জিনিয়ার, অভিনেতা, শিল্পী, সাহিত্যিক, খেলোয়াড়, সাংবাদিকদের ক্ষেত্রেও রোজগার বছরে ৮ লক্ষ টাকার বেশি হলে তাঁদের সন্তানেরা ‘ক্রিমি লেয়ার’ হিসেবে গণ্য হবেন।
উল্লেখ্য, ওবিসি-র ক্ষেত্রে এই ‘ক্রিমি লেয়ার’-এক ধারনা থাকলেও, এসসি বা এসটি ক্যাটাগরির ক্ষেত্রে এমন কিছু নেই। অর্থাৎ এসসি বা এসটি হলে, আর্থিক অবস্থা ও সামাজিক পরিচয় নির্বিশেষে প্রত্যেকেই সংরক্ষণের সমান সুবিধা পেয়ে থাকেন। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষেণে বলা হয়েছে, এবার এসসি-এসটি-র ক্ষেত্রেও এই ‘ক্রিমি লেয়ার’ খুঁজে বের করা প্রয়োজন।