সন্দেশখালি মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ। একইসঙ্গে এও নির্দেশ দেওয়া হয়, শেখ শাহজাহানকে হস্তান্তর করতে হবে সিবিআই-এর হাতে। প্রসঙ্গত, শেখ শাহজাহানকে রাজ্য পুলিশ গ্রেফতার করার পরই ইডি-র তরফ থেকে বারবার অভিযোগ করা হচ্ছিল, রাজ্য পুলিশ, সিআইডি-র হাতে শেখ শাহজাহান থাকলে, পিএমএলএ মামলা ও ইডি-র ওপর হামলার তদন্ত- দুটো ক্ষেত্রেই তথ্য প্রমাণ নষ্ট হতে পারে। সে কারণে এর আগেই ইডি-র তরফ থেকে দ্রুত শুনানির আর্জি জানানো হয়েছিল। এদিকে ইডি প্রথম থেকেই তাঁদের ওপর হামলার ঘটনার তদন্তে যে সিট গঠন করা হয়েছিল, তার বিরোধিতা করে। সিবিআই তদন্তের আর্জি জানিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ ইডি-র দাবিকে মান্যতা দিয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়। আর ইডি-র আর্জি মেনেই, মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে চারটের মধ্যে শেখ শাহজাহানকে সিবিআই-এর হাতে হস্তান্তর করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই প্রসঙ্গে ইডি-র বক্তব্য, শেখ শাহাজাহন যতক্ষণ পর্যন্ত সিআইডি হেফজতে থাকবে, তত বেশি তথ্য প্রমাণ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকছে। সেক্ষেত্রে অতি দ্রুত, মঙ্গলবার বিকাল চারটের মধ্যেই শেখ শাহজাহানকে সিবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ন্যাজাট থানার দুটি মামলা অর্থাৎ ইডি আধিকারিকদের ওপর হামলার ঘটনায় ইডির দায়ের করা মামলা, দ্বিতীয়ত পুলিশের স্বতঃপ্রণোদিত মামলা ও তৃতীয়ত, শঙ্কর আঢ্যকে ওই দিনই গ্রেফতার করতে গিয়ে ইডি আধিকারিকদের ওপর হামলার ঘটনার প্রেক্ষিতে দায়ের হওয়া মামলা হস্তান্তর করতে হবে। জানা যাচ্ছে, স্পেশ্যাল ক্রাইম ব্রাঞ্চ এই মামলার তদন্ত করবে। সিজিও কমপ্লেক্স থেকেই এই তদন্ত নিয়ন্ত্রিত হবে।
এদিকে এই নির্দেশ যেহেতু খোদ প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের সেই কারণে এবার রাজ্য সরকারের কাছে কলকাতা হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করার আর কোনও সুযোগ থাকছে না। সেক্ষেত্রে রাজ্যের কাছে খোলা থাকছে সুপ্রিম কোর্টের দরজা।
উল্লেখ্য, রেশন দুর্নীতি মামলায় সন্দেশখালির দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়িতে হানা দেয়। কিন্তু, দরজা না খোলায় তাঁর বাড়ির তালা ভাঙতে যায় সিআরপিএফ জওয়ানেরা। সেই সময়েই ইডি আধিকারিকদের উপর হামলার অভিযোগ ওঠে শাহজাহান অনুগামীদের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় গুরুতর আহত হন তিন ইডি আধিকারিক। এই ঘটনার পর থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সন্দেশখালি। ঘটনার দিন থেকেই বেপাত্তা হয়ে যান শেখ শাহজাহান। এই ঘটনার কয়েকদিনের মধ্যেই শাহজাহানের বিরুদ্ধে উঠতে থাকে একের পর এক অভিযোগ। নারী নির্যাতনের ঘটনায় জড়িয়ে যায় উত্তম সর্দার, শিবু হাজরার মতো স্থানীয় নেতাদের নামও। এদরে বিরুদ্ধে পথেও নামেন মহিলারা। আর এই অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেথার করা হয় শিবু, উত্তম এবং অজিত মাইতির মতো নেতাদের।
এদিকে শেখ শাহাজাহান দীর্ঘদিন নাগালের বাইরে ছিলেন। তাঁর গ্রেফতারির ক্ষেত্রে এজেন্সি নির্বিশেষে হস্তক্ষেপ করতে পারবে বলে জানানো হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের পক্ষ থেকে। এই নির্দেশের পরেই অবশ্য গ্রেফতার করা হয়েছিল সন্দেশখালির এই নেতাকে। তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সন্দেশখালিকে সামনে রেখে শাসকদলকে বিঁধতে শুরু করে বিরোধীরা। শুধু তাই নয়, রাজ্যে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও সন্দেশখালি নিয়ে সরব হতে দেখা যায়। মঙ্গলবার এই মামলারই তদন্তভার গেল সিবিআই-এর হাতে।