নির্ঘণ্ট প্রকাশ না হলেও লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের সময় বিভিন্ন জনসভায় রাজনৈতিক দলের নেতাদের ভাষণ নিয়ে কড়া বার্তা দিল নির্বাচন কমিশন। একইসঙ্গে হুঁশিয়ারি, নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ হলে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
২০২৪-এর নির্বাচনে রাজনৈতিক দল, প্রার্থী এবং তারকা প্রচারকদের যে পরামর্শ দিতে দেখা গেছে নির্বাচন কমিশনকে তার মধ্যে প্রথমেই রয়েছে জাত এবং ধর্মের ব্যাপারে সতর্কবার্তা। বলা হয়েছে, জাত বা সাম্প্রদায়িক অনুভূতিকে হাতিয়ার করে প্রচার করা যাবে না। এমন কোনও কার্যকলাপ করা যাবে না যা পারস্পরিক ঘৃণার জন্ম দেয় অথবা বিভিন্ন জাতি বা সম্প্রদায় বা ধর্মীয় বা ভাষাগত গোষ্ঠীর মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। এরই পাশাপাশি রাজনৈতিক দল ও নেতারা মিথ্যা বিবৃতির থেকে বিরত থাকতে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। স্পষ্ট ভাষায় জানানো হয়েছে, এমন কোনও বক্তব্য় পেশ করা যাবে না যা ভোটারদের বিভ্রান্ত করে।
সঙ্গে এও বলা হয়েছে, প্রমাণ ছাড়া বা বিকৃত তথ্যের ভিত্তিতে বিরোধীদের সমালোচনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। পাশাপাশি এড়িয়ে চলতে হবে ব্যক্তিগত আক্রমণকে। সঙ্গে বজায় রাখতে হবে রাজনৈতিক আলোচনায় শালীনতা। নির্বাচনী প্রচারের জন্য উপাসনালয় ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে কঠোর ভাবে। পাশাপাশি ধর্ম সম্পর্কিত কোনও মন্তব্য থেকে বিরত থাকতেও বলা হয়েছে।
এছাড়াও যে বিজ্ঞাপনগুলি দেওয়া হবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তরফ থেকে তা সত্য এবং বিভ্রান্তিকর নয় এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে। অর্থাৎ, বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন দেওয়া চলবে না। ভোটারদের প্রলুব্ধ করার চেষ্টা বা ভোট পাওয়ার জন্য খয়রাতির রাজনীতির ক্ষেত্রেও বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে এও জানানো হয়েছে, সোশ্য়াল মিডিয়াতে এমন কোনও পোস্ট করা চলবে না যা প্রতিদ্বন্দ্বীদের অপমান বা খারাপ বা নিম্ন রুচি বলে প্রতিপন্ন হয়। মহিলাদের মর্যাদা ও সম্মান ক্ষুন্ন করে বা আঘাত হানে এমন কোনও কাজ বা বক্তব্য থেকে বিরত থাকার ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
নির্বাচনী নির্ঘণ্ট এখনও প্রকাশ করা না হলেও আশা করা হচ্ছে মার্চের মাঝামাঝি নির্বাচন কমিশন ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করতে পারে। উল্লেখ্য, এবার থেকে অ্যাপের সাহায্যে নির্বাচনের আয়-ব্যয় সংক্রান্ত সমস্ত বিষয়ের ওপর নজর রাখতে পারবে নির্বাচন কমিশন। কমিশন সূত্রে খবর, যে মুহূর্তে ২২টি এজেন্সি কোনও কিছু তথ্য পাবে, সেই তথ্য তখনই আপলোড করা হবে অ্যাপে। একইসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলিও যদি কোনওরকম ভাবে কমিশনের নিয়ম বহির্ভূত কাজ করতে যায় তাও অ্যাপের মাধ্য়মে ধরা পড়বে। অর্থাৎ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এক নিমেষে সকল কাজকে হাতের মুঠোয় আনতে চাইছে নির্বাচন কমিশন।
এছাড়াও শুক্রবার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের তরফে একজন আন্ডার সেক্রেটারি পদাধিকারী সহ ২ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল আসে। যেখানে কমিশনের সব প্রযুক্তির ওপর নির্ভরকারী অ্যাপকে নিয়ে তাঁরা বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেন। এই অ্যাপগুলিতে সবকিছুতেই নির্ধারণ করা রয়েছে সময়। সেই সময়ের মধ্যেই সংশ্লিষ্ট কাজ শেষ করতে হবে। না হলে কাজ করবে না অ্যাপটি। অর্থাৎ, কোনও প্রার্থী তাঁর মনোনয়ন জমা করার পর সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে ওই অ্যাপের মধ্যে তা আপলোড করতে হবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলে অ্য়াপে কোনও কাজ করা যাবে না। শুধু তাই নয়, কেন উক্ত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা গেল না সেই বিষয়ে জবাবদিহি করতে হবে কমিশনের কাছে। নির্বাচনে কোনও রকম ফাঁক ফোকড় না রাখতে কমিশন এবার সব দিক থেকেই রীতিমতো কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে। আগামী লোকসভা নির্বাচনে কোনও বিষয়ে কাউকে রেয়াত করে রাজি নয় নির্বাচন কমিশন।