লোকসভা নির্বাচনের পর কলকাতা শহর তথা রাজ্যের হকার নীতি ঠিক করতে বেশ কিছু কড়া পদক্ষেপ নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময়েই কলকাতা পুরসভাকে শহরের জন্য সুষ্ঠু হকার নীতি প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার পর কলকাতা শহরে বৈধ হকার ঠিক করতে ডিজিটাল সমীক্ষাও চালানো হয় কলকাতা পুরসভার তরফ থেকে। কলকাতা পুরসভার একটি সূত্র জানাচ্ছে, পুজোর আগে শহরের হকারদের নিয়ে সমীক্ষা করেছিল পুরসভা। সেখানে ৫৪ হাজার ১৭৮ জন হকারের নাম নথিভুক্ত করা হয়। কোন হকার কোন এলাকার ফুটপাতের কোথায় কতটা জায়গা নিয়ে বসে আছেন, সমীক্ষায় তার লোকেশন জিপিএস ট্যাগিং করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁদের আধার ও প্যান কার্ডের কপি নেওয়া হয়েছিল। সেই সব শর্ত পূরণ করে এখন চূড়ান্ত অনুমোদনের পালা।
এদিকে কলকাতা পুরসভার সমীক্ষা অনুযায়ী যে ১৪ হাজারের কিছু বেশি হকারের বসার জায়গা নিয়ে সমস্যা রয়েছে, তাঁদের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। হকার নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে নভেম্বর মাসের শেষের দিকে টাউন ভেন্ডিং কমিটির বৈঠক বসছে। সেই বৈঠকে হকার নীতিতে সিলমোহর দেওয়া হতে পারে। পুরসভা সূত্রে খবর, ফুটপাতের নির্দিষ্ট জায়গায় স্টল গড়ে ব্যবসা করছেন কমবেশি ৪০ হাজার হকার। তাঁদের নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু বাকি ১৪ হাজার হকার নিয়ে জটিলতা রয়েছে। এই অংশের হকারদের কারও একাধিক ডালা থাকার সন্ধান মিলেছে। কেউ রাস্তার দিকে মুখ করে ব্যবসা করছেন, কেউ আবার একই নামে ফুটপাতের দু’দিকে স্টল করেছেন। কেউ আবার বিভিন্ন মোড়ে বা ফুটপাতে নির্দিষ্ট জায়গা না ছেড়ে ব্যবসা করছেন দিনের পর দিন। আপাতত তাঁদের শংসাপত্র দেওয়া হবে না বলেই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর। অনিশ্চয়তায় থাকা এই হকারদের নিয়ে টাউন ভেন্ডিং কমিটির বৈঠকে আলোচনা হবে বলে জানা গিয়েছে।
তবে, পুরসভার এক আধিকারিক জানান, দ্রুতই ওই ১৪ হাজার হকার নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কলকাতা পুরসভা। আপাতত টাউন ভেন্ডিং কমিটির বৈঠকে তাদের নিয়ে আলোচনা হবে। পুরসভার একটি সূত্র জানাচ্ছে, এক নামে একাধিক ডালা বসিয়ে বিকিকিনির আড়ালে ব্যবসা খুলে বসেছেন অনেকে। এমন ব্যক্তিকে কেবলমাত্র একটি ডালা দেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ওই ১৪ হাজার হকারের মধ্যে এমন হকারের সংখ্যা কত তা জানতে চাইছে কলকাতা পুরসভা। সেই বিষয়ে স্পষ্ট চিত্র পাওয়ার পরেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে, কলকাতা পুরসভার এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, কোনও বৈধ হকারকে বঞ্চিত করা হবে না। কিন্তু অসাধু উপায় যদি কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় এক নামে একাধিক হকারের ডালার সন্ধান পাওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে পুরসভা রেয়াত করবে না। সুষ্ঠু হকার নীতি প্রণয়ন করে হকারদের নির্দিষ্ট পরিধি অনুযায়ী ব্যবসার বন্দোবস্ত করে দিচ্ছে কলকাতা পুরসভা।