একাধিক দাবিতে যাদবপুরের উপাচার্যের ঘরে তালা ঝোলালো প্রথম বর্ষের পড়ুয়ারা

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার প্রশ্নে জারি করা হয়েছিল একাধিক নিয়ম। তার মধ্যে অন্যতম ছিল রাত ১১টার পর হোস্টেলের প্রবেশ বন্ধ। রাত ১১টার পর বন্ধ হয়ে যায় হস্টেলের দরজা। এক হস্টেল থেকে অন্য হস্টেলে কোনও দরকারি কাজেও যাওয়া যায় না। তাতেই আপত্তি একাংশের পড়ুয়ার। তাই হস্টেলগুলিতে অবাধে প্রবেশের দাবি জানিয়ে আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের পড়ুয়ারা। শুধু প্রতিবাদেই তারা ক্ষান্ত থাকেনি, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অফিসে ঝুলিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।

এর পাশাপাশি হস্টেলের যাবতীয় দৈনিক ব্যবহারযোগ্য সামগ্রী, যেমন, লাইট, ফ্য়ান, ওয়াটারকুলারের সমস্যা মেটানোর জন্যও সাত দিনের ডেডলাইন দেওয়া হয়েছে তাদের তরফ থেকে। এছাড়াও, দাবি জানানো হয়েছে, ২৪ ঘণ্টা হস্টেলের ছাদের দরজা খুলে রাখারও।

গত কয়েক বছরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই হস্টেলগুলি একাংশের মানুষের কাছে যে আতঙ্ক হয়ে গিয়েছে, সেই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। মূলত, ব়্যাগিংয়ের জেরে ঘটা বেশ কয়েকটি পড়ুয়া মৃত্যু ঘটনার পরই ছড়িয়েছে এই আতঙ্ক। প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের মধ্য়েই বেড়েছে ভয়। আর সেই ভয়কে কাটাতেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক পরিবর্তন এনেছে কর্তৃপক্ষ। জারি হয় বেশ কিছু নিয়ম। যার মধ্যে এই রাত ১১টার পর অবাধে প্রবেশ বন্ধ অন্যতম। আর তাতেই ক্ষেপে গিয়েছে একাংশের পড়ুয়ারা।

অন্যদিকে বহু সংঘাতপূর্ণ পথ অতিক্রম করে গত বছরই নতুন উপাচার্য পেয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্য়ালয়। প্রায় তিন মাসের টালবাহানার পর সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন স্থায়ী উপাচার্য হয়েছেন বৈদ্যুতিন দূরসংযোগ বিভাগের অধ্যাপক ভাস্কর গুপ্ত। রাজ্যের দেওয়া নামেই সিলমোহর দিয়েছেন আচার্য সিভি আনন্দ বোস। এবার সেই নতুন উপাচার্যের অফিসেই তালা ঝুলিয়ে দিল প্রথম বর্ষের পড়ুয়ারা।

সাম্প্রতিককালে একাধিকবার প্রশ্নের মুখে পড়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। কখনও মিলেছে মাওবাদী-যোগ, কখনও আবার পড়ুয়া-মৃত্যুতে ভয় ধরেছে মানুষের। একটা বিশ্ববিদ্যালয়, যতটা খ্যাতি লাভ করেছে তার পড়াশোনার মান উন্নয়নের জন্য। ততটাই আবার ব্যাকফুটে পড়েছে ব়্যাগিং, মাওবাদী কার্যকলাপের মতো ঘটনার জেরেও।

এবার সেই যাদবপুরের দিকে ওঠা প্রশ্নগুলিকে নিরিক্ষণ করে, গাফিলতিগুলিকে একেবারের মতো মিটিয়ে দিতে চাইছে কর্তৃপক্ষ। তখনই যেন বেঁকে বসল এক দল প্রথম বর্ষের পড়ুয়া। বিশ্ববিদ্য়ালয়ের অন্দরে নাকি রাতের দিকে অবাধে যাতায়াত কমছে, এমনটাই দাবি তাদের। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই প্রতিবাদে নেমে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অফিসে তালা ঝোলাল তারা।

এই ঘটনা প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন খোদ উপাচার্য ভাস্কর গুপ্ত। তাঁর দাবি, ‘এই সকল নিয়ম ইউজিসি-র গাইডলাইন মেনেই তৈরি। যেখানে এক বছর আগে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে, সেখানে দাঁড়িয়ে এই গাইডলাইন আমাদের মেনে চলাই উচিত।’ অফিসে তালা ঝোলালর ঘটনা তিনি বলেন, ‘এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। যারা করছে, তাদের কিছু সিনিয়রা বেপথে চালনা করছে।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × four =