মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের বিরুদ্ধে রাজ্যপালের করা মানহানির মামলার শুনানিতে সোমবার সব পক্ষ সওয়াল করে বিচারপতি কৃষ্ণা রাওয়ের বেঞ্চে। মুখ্যমন্ত্রী সহ তৃণমূল নেতারা সম্মানহানিকর মন্তব্য থেকে বিরত থাকুক, আদালতের কাছে এই আর্জি জানিয়ে মানহানির মামলা করেছিলেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। তবে মুখ্যমন্ত্রীর আইনজীবী সওয়াল করেন, ‘রাজ্যপালের সম্মানহানি হয়, এমন কোন মন্তব্য করা হয়নি। ’ এদিকে আদালত সূত্রে খবর, শুনানি শেষে রায়দান স্থগিত রাখা হয়েছে। এই মামলায় বিধায়ক সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষকেও যুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তাঁরাও সোমবার সওয়াল করেন।
সোমবার বিচারপতি কৃষ্ণা রাওয়ের বেঞ্চে ওই মামলার শুনানিতে রাজ্যপালের আইনজীবী বলেন, ‘রাজ্যপাল সম্পর্কে মানহানিকর মন্তব্য করা হয়েছে। দুই নবনির্বাচিত বিধায়কের শপথ নিয়ে রাজ্যপাল চিঠি দিয়েছিলেন। সেই চিঠিতে কোনও ভয়ের কথা ছিল না। তার পরেও মহিলারা রাজভবনে যেতে ভয় পান এই ধরনের মন্তব্য করা হয়েছে। এটা বিদ্বেষমূলক মন্তব্য।’ মুখ্যমন্ত্রীর আইনজীবীর পালটা সওয়াল, ‘মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্য মানহানিকর নয়। তিনি শুধু একটি মন্তব্য করেছেন। সাধারণের স্বার্থে এমন কথা বলেছেন। সংবাদমাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কেন সবাইকে রাজভবনে যেতে হবে? মহিলারা সেখানে যেতে নিরাপদ বোধ করেন না। মহিলারা তাঁকে সে কথা বলেছেন। এটা মানহানি হতে পারে না। জনসমক্ষে একথাই মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন। এটা তাঁর বাক্স্বাধীনতা।’ একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর আইনজীবী সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় এদিন বলেন, ‘যদি সম্মানহানিই না হয়ে থাকে, তাহলে আদালতের অন্তর্বর্তী নির্দেশ জারি করার কোনও প্রয়োজন নেই।’ তিনি উল্লেখ করেন, একজন জন প্রতিনিধি হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন যে তিনি রাজ্যপালের জন্য তাঁর দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। এরই সূত্র ধরে আইনজীবীর প্রশ্ন, এতে কীভাবে সম্মানহানি হয়? মুখ্যমন্ত্রীর তরফে আরও দাবি করা হয়েছে, রাজভবনে যে ঘটনা ঘটেছে বলে মূল অভিযোগ, সেটা ইতিমধ্যেই মানুষের সামনে এসেছে, কিন্তু সেটা নিয়ে রাজ্যপাল কোনও চ্যালেঞ্জ করেননি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তিনি মহিলাদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছেন যে তারা রাজভবনে যেতে ভয় পাচ্ছে। এমনই সওয়াল করেন মুখ্যমন্ত্রীর আইনজীবী। বিধায়ক সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানিয়েছেন, কেন রাজভবনে যেতে ভয় পাচ্ছেন তিনি। তাঁর আইনজীবী এদিন জানান, রাজভবনের এক মহিলার সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছিল বলে অভিযোগ করা হচ্ছে, সেটা সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় জানতে পেরেছেন। সেই কারণেই তিনি একজন মহিলা হিসেবে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। পাল্টা রাজ্যপালের আইনজীবী বলেন, ‘সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যপালকে চিঠি লিখে জানাতে পারতেন যে তিনি রাজভবনে আসতে ভয় পাচ্ছেন, সেটা তিনি করেননি।’ সেই সঙ্গে রাজ্যপালের আরও প্রশ্ন, ‘সবাই বলছেন যে তাঁরা বিভিন্ন ব্যক্তি বা মহিলাদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছেন, তাই তাঁরা রাজভবনে যেতে ভয় পাচ্ছেন। কিন্তু সেই বিভিন্ন ব্যক্তি বা মহিলা কে বা কারা? আসলে কেউ নেই।’ এরই পাশাপাশি রাজ্যপালের আইনজীবী এও প্রশ্ন তোলেন, দুই বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁরা শপথ নেবেন। এটা প্রশাসনিক কাজকর্মের মধ্যে পড়ে। কিন্তু সেখানে অন্য বিষয় কেন জুড়ে দেওয়া তা নিয়েও। এদিকে কুণাল ঘোষের দাবি, তিনি এমন কোনও মন্তব্য করেননি যাতে রাজ্যপালের মানহানি হয়।
প্রসঙ্গত, লোকসভা নির্বাচন চলাকালীন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ তোলেন এক অস্থায়ী মহিলা কর্মী। এই অভিযোগ নিয়ে জোর চাপানউতোর তৈরি হয়। রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাতে জড়ায় আরও একবার। এই টানাপোড়েনের মাঝেই আবার বরাহনগর এবং ভগবানগোলার দুই বিধায়কের শপথ নিয়ে নজিরবিহীন জটিলতা তৈরি হয়। সে প্রসঙ্গে উষ্মাপ্রকাশ করতে গিয়ে রাজ্যপালের শ্লীলতাহানির প্রসঙ্গ টেনে আনেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
,