সন্দেশখালির ঘটনায় রাজ্যের তরফে সব ধরনের সাহায্যের নির্দেশ হাইকোর্টের

সন্দেশখালিতে ধর্ষণের ঘটনায় সিবিআইয়ের কাছে যাতে কোনও এফআইআর দায়ের করা না হয়, এই মর্মে মহিলাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, এমনটাই অভিযোগে  আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়ালের। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি টি এশ শিবজ্ঞানমের বেঞ্চ বলে, ‘মানুষের মনে আস্থা বাড়ানোর জন্য সিবিআইকে পদক্ষেপ করতে হবে। নিরাপত্তার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে সিবিআই-কে। মহিলাদের ভয় দূর করার জন্য প্রয়োজন হলে মহিলা আধিকারিক নিযুক্ত করবে সিবিআই।’ এই প্রসঙ্গে আইনজীবী অলোক শ্রীবাস্তব বলেন, ‘মণিপুরে এই ধরণের সমস্যায় নতুন টিম গড়ে দেওয়া হয়। মহিলা সিবিআই অফিসার নির্দিষ্ট করা যেতে পারে।’

আদালত সূত্রে খবর, সন্দেশখালি কাণ্ডে কলকাতা হাইকোর্টে তদন্তের অগ্রগতি রিপোর্ট জমা দিল সিবিআই। বৃহস্পতিবার মুখবন্ধ খামে স্ট্যাটাস রিপোর্ট জমা দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর তরফ থেকে। সেই রিপোর্ট পড়েন প্রধান বিচারপতি। যদিও রিপোর্ট গোপন রাখার আবেদন করা হয়। তবে রিপোর্ট দেখে বিচারপতির মন্তব্য, সিবিআইয়ের তদন্ত সঠিক পথেই এগোচ্ছে। এদিকে জমির রেকর্ড নিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে কিছু অসহযোগিতার অভিযোগ তোলা হয়েছে এই রিপোর্টে। এই প্রসঙ্গে আদালতের তরফ থেকে জানানো হয়, আদালত আশা করে যে, রাজ্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে। যেহেতু, মামলায় সুপ্রিম কোর্টের কোনও স্থগিতাদেশ নেই, তাই কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ যথাযথ ভাবে মানতে হবে বলে জানান প্রধান বিচারপতি। এরই পাশাপাশি সন্দেশখালির জমি দখল সংক্রান্ত মামলায় সিবিআইকে সাহায্য করার জন্য রাজ্যকে নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের।

এদিকে হাইকোর্ট সূত্রে খবর, জমি দখল সংক্রান্ত ৯০০ অভিযোগ সিবিআইযের কাছে জমা পড়েছে। এরপরই সিবিআইকে এই জমি দখল মামলায় সাহায্য করতে নির্দেশ দেওয়া হয় রাজ্যকে। সঙ্গে এও নির্দেশ দেওয়া হয়, প্রয়োজনীয় কর্মীর অভাব থাকলে অন্য জায়গা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে দ্রুত সিবিআইকে সাহায্য করতে হবে। প্রসঙ্গত, রাজ্যের সহযোগিতা মিলছে না বলে আদালতে অভিযোগ জানানো হয়েছে সিবিআইয়ের তরফ থেকে।

এদিকে অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল অশোক চক্রবর্তী এদিন আদালতে জানান, ইতিমধ্যেই শীর্ষ আদালতে শুনানি জুলাই মাসে স্থির হয়েছে। তবে প্রধান বিচারপতি আদালতে এদিন জানান, জমির রেকর্ড নিয়ে বহু অভিযোগ এসেছে। সিবিআই-এর বক্তব্য রাজ্যের সহযোগিতা মিলছে না। এটা একটি গোপন রিপোর্ট। রাজ্য সহযোগিতা করবে এটা আদালত আশা করছে। অন্যদিকে, ন্যাশানাল হিউম্যান রাইটস কমিশন আবেদন করে এই মামলায় যুক্ত হওয়ার। আদালতকে তারা আর্জি জানিয়েছে, এই মামলায় তাদের তরফ থেকেও সহযোগিতা করা হবে। ফলে তাদের রিপোর্ট যেন আদালতে গ্রহণ করা হয়।

এদিকে আদালত সূত্রে খবর, আগামী ১৩ জুন ফের শুনানি এই মামলার। ওইদিন সিবিআইকে ফের তাদের পরবর্তী রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এদিকে, সন্দেশখালির ঘটনার পর উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসককে নির্দেশ ছিল সন্দেশখালি রাস্তায় এলইডি লাইট ও সিসিটিভি লাগানোর ব্যাবস্থা করতে হবে। কিন্তু সেই ব্যাপারে রাজ্য এখনও কোনো পদক্ষেপ না করায় প্রধান বিচারপতি স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে জানান, আগামী শুনানির আগে যদি রাজ্য প্রশাসন এই বিষয়ে পদক্ষেপ না করে তাহলে আদালত অবমাননার রুল ইস্যু করবে। প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহেই সন্দেশখালিতে তল্লাশি অভিযান চালায় সিবিআই। বেশ কিছু অস্ত্র ভাণ্ডার সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়। সাহায্য নেওয়া হয় এনএসজি কম্যান্ডোর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 − 11 =