কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিদের একাংশের রাজনৈতিক সংস্রব তাঁদের রায়েই ধরা পড়ছে বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ। এই প্রসঙ্গে তাঁকে সরাসরি প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম উল্লেখ করতেও শোনা গেল। এরই রেশ টেনে প্রবীণ এই আইনজীবীর বক্তব্য, বিচারপতিদের একাংশের এই বিষয়টা ‘অত্যন্ত উদ্বেগের এবং দুর্ভাগ্যজনক’।
প্রসঙ্গত, শনিবার ‘দেশ বাঁচাও গণমঞ্চ’র ডাকে কলকাতায় দু’টি সভা করেন প্রশান্ত ভূষণ। এদিকে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের রায়ের প্রেক্ষিতে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল নেতৃত্ব সরব হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিদের একাংশের বিরুদ্ধে। এমনকী, মুখ্যমন্ত্রী ‘বিজেপির বিচারালয়’ বলে কটাক্ষও করার ঘটনায় তাঁর মত কী জানতে চাওয়া হলে প্রশান্ত ভূষণ জানান, ‘আমি ঠিক এ ভাবে বিষয়টাকে ব্যাখ্যা করব না। তবে এটা ঠিক যে, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিদের নানা মন্তব্য, এমনকী রায়ের মধ্যে তাঁদের রাজনৈতিক সংস্রব ধরা পড়ছে। যা অত্যন্ত উদ্বেগের এবং দুর্ভাগ্যজনক। এটা আরও পরিষ্কার হয়েছে প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মাধ্যমে। তিনি তো সরাসরি বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন।’ তবে প্রশান্তের ইঙ্গিত, কেবল কলকাতা হাইকোর্ট নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই আদালত নিয়ে এই ধরনের অভিযোগ সামনে আসছে।
অন্যদিকে আবার কেন্দ্রের মোদি সরকার সম্প্রতি অস্বস্তিতে পড়েছে ইলেক্টোরাল বন্ড নিয়ে। সুপ্রিম কোর্ট এই বন্ডকে অসাংবিধানিক বলে রায় দিয়েছে। এমনকী, সু্প্রিম-চাপেই প্রকাশ্যে এসেছে কোন কোম্পানি কত টাকা কোন রাজনৈতিক দলকে দিয়েছে। ওই মামলায় কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে যে সব আইনজীবী সওয়াল করেন, প্রশান্ত ভূষণ তাঁদের অন্যতম প্রধান। এই প্রসঙ্গে এদিন কলকাতার সভায় ইলেক্টোরাল বন্ড নিয়ে নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর দল বিজেপির সমালোচনাও করতে দেখা যায় তাঁকে। আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ জানান, সম্প্রতি আরও একটি মামলা তিনি সুপ্রিম কোর্টে ফাইল করেছেন। যেখানে দাবি করা হয়েছে, এই বন্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো যে সব টাকা তুলেছে, সেগুলো তাদের ফেরত দিতে হবে। কারণ, হিসেবে প্রবীণ এই আইনজীবী জানান, ‘এটা যে একটা দুর্নীতি, তা নিয়ে এখন আর কোনও সন্দেহ নেই। এই দুর্নীতির টাকা আসলে মানুষের টাকা। সেই টাকা ফেরত দিতেই হবে। আমি আশা করছি, সুপ্রিম কোর্ট এই ব্যাপারে সঠিক ন্যায়বিচার করবে।’
এর পাশাপাশি বিজেপি বিরোধীদের সুরে প্রশান্ত ভূষণকে এদিন ইডি-সিবিআই-আয়কর দফতরের মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোকে ব্যবহার করে দেশে যে এক ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে তা নিয়ে নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহকে কটাক্ষ করতেও শোনা যায় এদিন। তিনি তোপ দাগেন ইডি-সিবিআইয়ের অফিসারদের একাংশের বিরুদ্ধেও। প্রশান্ত ভূষণের কথায়, ‘ইলেক্টোরাল বন্ডের মতো এত বড় দুর্নীতি হয়েছে। যেখানে মানি লন্ডারিং স্পষ্ট। সে সব দেখেও ইডি-সিবিআইয়ের যে সব অফিসার কোনও তদন্ত করেননি বা চুপ করে বসেছিলেন। আর এই প্রসঙ্গে তিনি হুঁশিয়ারির সুরে এও জানান, তাঁদের বিরুদ্ধেও তদন্ত হবে। তাঁদেরও জেলে যেতে হবে।’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ইলেক্টোরাল বন্ড নিয়ে সত্যিকারের তদন্তের জন্য সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে সিট গঠন করতে হবে মামলায় এই দাবিও রাখা হয়েছে। সঙ্গে এদিন প্রশান্ত এও জানান, তাঁর ধারনা, এবার মোদি ক্ষমতায় আসছেন না। সেটা তাঁর আচার-আচরণ, সাম্প্রদায়িক কথাবার্তা, আদানি-আম্বানিকে নিয়ে তাঁর মন্তব্য এবং শেয়ার মার্কেটে ধস নামাই প্রমাণ করে দিচ্ছে।
এ দিনের সভায় প্রশান্ত ছাড়াও ছিলেন আরটিআই অ্যাক্টিভিস্ট ও সমাজকর্মী অঞ্জলি ভরদ্বাজ। তিনি বলেন, ‘একটা সরকার গত চার বছরে তথ্য জানার আইনকে দুর্বল করবে বলে পার্লামেন্টে কোনও আলোচনা ছাড়াই দু’বার সংশোধনী এনেছে। এর মাধ্যমেই স্পষ্ট যে, তাঁরা কতটা দুর্নীতিগ্রস্ত।’