মহিলাদের রাত দখল কর্মসূচিতে ব্যর্থতার দায় মেনে নিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার

মহিলাদের রাত দখল কর্মসূচির মাঝে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তাণ্ডবের ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পড়ে কলকাতা পুলিশের ভূমিকা। ঘটনায় ব্যর্থতার দায় কার্যত মেনে নিতে দেখা যায় কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে। শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে দুটি ভিডিও দেখিয়ে হামলার মুহূর্তের ব্যাখ্যাও দেন পুলিশ কমিশনার।
সাংবাদিক বৈঠকের শুরুতে এদিন দুটি ভিডিও দেখান পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। একটি ১ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের এবং অপর ভিডিওটি ১ মিনিট ৮ সেকেন্ডের। কীভাবে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে বহিরাগতরা ঢুকে পড়ে তা ওই ভিডিও দুটির মাধ্যমে দেখানো হয়। এরপর বিনীত গোয়েল বলেন, ‘যখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে জমায়েত হয়, নেতা থাকে না, নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। সেদিন সারা শহরে জমায়েত ছিল। অনেক পুলিশ মোতায়েন করতে হয়েছিল। আরজি করে ডিসিপি ছিলেন। ফেসবুকে ছবি, ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে।’
ব্যর্থতার দায় কার্যত স্বীকার করে নিয়ে তিনি এদিন এও জানান, ‘আরজি করের সামনে আন্দোলন যে আচমকা হিংসাত্মক হয়ে উঠবে, ভাবতে পারিনি। আমাদের ভাবনায় ভুল ছিল। একে আমাদের ব্যর্থতা বললে বলতে পারেন।’ পুলিশ সেদিনের তাণ্ডব রুখতে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলেও উঠেছে অভিযোগ। সে প্রসঙ্গে সিপি বলেন, ‘ডিসিপির মাথা ফাটায় আমাদের ফোর্স ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েছিল, সামলে নিতে সময় লাগে। আমাদের উপর হামলা চালানো হয়।’
এদিকে পুলিশ প্রকৃত অপরাধীকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ। সে অভিযোগও এদিন খারিজ করে দেন পুলিশ কমিশনার। আরজি কর কাণ্ড নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় গুজব না ছড়ানোর অনুরোধ করেন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। সেগুলোর কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে সেই বিষয়টি নিয়ে সচেতন করলেন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের গুজব ঘোরাফেরা করছে, যার কোনও ভিত্তি নেই। আর গুজবের ওপর ভিত্তি করেই অনেক বিশেষজ্ঞরা কথা বলছেন, সেগুলোরও কোনও ভিত্তি নেই। যেমন অনেক বিশেষজ্ঞকেই বলতে শোনা যাচ্ছে, এটা গণধর্ষণের ঘটনা। কিন্তু এই ধরনের গুজবের ওপর ভিত্তি করে কোনও মন্তব্য করা উচিত হয়।’
সাংবাদিক বৈঠকে বেশ কয়েকটি গুজবের ব্যাপারে স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছেন পুলিশ কমিশনার। সিপি বলেন, ‘এই ঘটনাটি নিয়ে অনেক রকমের গুজব ছড়াচ্ছে। কখনও বলা হচ্ছে এটা গণধর্ষণের ঘটনা, কখনও বলা হচ্ছে ১৫০ গ্রাম সিমেন পাওয়া গিয়েছে, কখনও আবার মহাপাত্র পদবিধারীকে বিশেষ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের পদবির সঙ্গে জুড়ে দোষী হিসাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এই ধরনের গুজব নিয়ে বিশ্লেষণও হচ্ছে। যা সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রভাব ফেলছে।’ এই প্রসঙ্গে কলকাতা পুলিশ কমিশনার এও মনে করিয়ে দেন, ‘আমাদের প্রমাণ দরকার। প্রমাণ ছাড়া কাউকে আমরা ধরতে পারি না। আমাদের কাউকে বাঁচানোর নেই। প্রমাণের অপেক্ষায় রয়েছি। দয়া করে গুজব ছড়াবেন না।’
এর পাশাপাশি সিপি এদিন এও বলেন, ‘কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলছেন। এখন এই ঘটনার তদন্ত করছে সিবিআই। এই ঘটনা এখন তদন্ত সাপেক্ষ। বৈজ্ঞানিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই তদন্ত করছেন আধিকারিকরা।’
সিপি বলেন, ‘অনেক সময় বলা হচ্ছে পুলিশ নাকি বলেছে একটা আত্মহত্যার ঘটনা। কিন্তু এটাও সম্পূর্ণ ভুল। কারণ পুলিশ এটাকে অস্বাভাবিক মৃত্যু বলেছে। সাপে কাটা হোক কিংবা রাস্তায় দুর্ঘটনায় মৃত্যু- এই ধরনের মৃত্যুর ক্ষেত্রেও পুলিশ প্রথমে অস্বাভাবিক মৃত্যু বলেই মামলা রুজু করে। এটাই আইন। ভারতে যে কোনও রাজ্যেই এটা হয়।’ কিন্তু পুলিশ যে কখনই এটাকে ‘আত্মহত্যা’ বলেনি, সেটাও স্পষ্ট করেন সিপি। তবে সিপি বলেন, ‘আমাদের প্রমাণ দরকার। প্রমাণ ছাড়া কাউকে আমরা ধরতে পারি না। আমাদের কাউকে বাঁচানোর নেই। প্রমাণের অপেক্ষায় রয়েছি। দয়া করে গুজব ছড়াবেন না।’ সিপি জানিয়েছেন, ‘আমাদের কাছে যা যা তথ্য ছিল, তা সবই সিবিআই-কে দেওয়া হয়েছে। আমাদের অফিসাররাও নতুন তদন্তকারী সংস্থাকে সাহায্য করছে।’ শুধু তাই নয়, সিবিআইয়ের উপর আস্থা রাখার কথাও বলেন পুলিশ কমিশনার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × 5 =