কাজল সিনহা
বঙ্গ রাজনীতিতে বিজেপির উত্থানের সময় থেকেই দলের মহিলা নেত্রী হিসাবে প্রথম সারিতে দেখা যেতো রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কে। পরবর্তী ক্ষেত্রে দলের মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রীও হন রূপা। উত্তর হাওড়া বিধানসভা কেন্দ্রে একবার পদ্মের প্রার্থীও হয়েছিলেন। রাজ্যসভার সাংসদও ছিলেন। তবে চব্বিশের লোকসভা ভোটের প্রচারে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে রাজ্যনেতারা মিটিং-মিছিল করলেও প্রচারের ময়দানে দেখা যাচ্ছে না রূপাকে। যা নিয়ে বিজেপির অন্দরেই শুরু হয়েছে জোর জল্পনা।
স্যাফ্রন ব্রিগেডের একাংশ অবশ্য জানাচ্ছেন, এবার তারকা প্রচারকদের তালিকায় রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো পুরনো নেত্রী তথা সেলিব্রিটিকে রাখা হয়নি। অথচ তিনি যখন মহিলা মোর্চার সভানেত্রী তখন একাধিক কর্মসূচিতে তিনিই থাকতেন মূল ভূমিকায়। কলকাতার বুকে বিজেপির কমর্সূচিতে বাইকের পিছনে বসেও র্যালিতে দেখা গিয়েছিল রূপাকে। একুশের ভোটের আগে রাজ্য বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় সঙ্গেও অত্যন্ত সুসম্পর্ক ছিল তাঁর। দলের আদি নেতাদের কথায়, এখন বঙ্গ বিজেপিতে রূপার মতো নেত্রীরা ব্রাত্য। ভোট প্রচারে বাংলায় চল্লিশজনের তারকা প্রচারকদের তালিকা তৈরি করেছিল বিজেপি। সেই তালিকায় মোদি, অমিত শাহ-সহ কেন্দ্রীয় নেতামন্ত্রী ও বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা রয়েছেন। বঙ্গ বিজেপির নেতা, সাংসদ ও বিধায়করা আছেন। কিন্তু রূপার নাম নেই। এর পাশাপাশি বিজেপির অন্দরে কান পাতলে এও শোনা যাচ্ছে, মহিলা মোর্চার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরই দলের সাংগঠনিক কাজকর্মে রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের সক্রিয়তা অনেকটাই কমে গিয়েছিল। এখন দলে নতুনদের দাপটে পুরনোরা কোণঠাসা। সে কারণেই হয়তো এবার লোকসভা ভোট প্রচারে দেখাই যাচ্ছে না দাপুটে এই অভিনেত্রীকে।
তবে শুধু রূপাই নয়, একসময় বিজেপির পরিচিত মুখ রাজ্যনেতা সায়ন্তন বসু ও দলের বর্তমান রাজ্য সহ সভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়কেও সে ভাবে প্রচারে নজরে আসছেন না। যে লোকসভা কেন্দ্রে পুরনোরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের অনুরোধে দু-একটি জায়গায় গিয়েছেন সায়ন্তন, রাজুর মতো পুরনো ও একদা বিজেপির দাপুটে নেতারা। মেদিনীপুর থেকে সরিয়ে এবার বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয় বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন ও সফলতম সভাপতি দিলীপ ঘোষকে। দিলীপের প্রচারে এবার দেখা গিয়েছিল তাঁর পুরনো সতীর্থ সায়ন্তন ও রাজুকে। আবার দিলীপের হয়ে প্রচারে যেতে দেখা যায় বিজেপি থেকে সাসপেন্ড হওয়া নেতা তথা দলের পরিচিত মুখ রীতেশ তিওয়ারিকেও। কয়েকটি জায়গায় প্রচারে যান দলের আরেক পুরনো নেতা তথা প্রাক্তন রাজ্য সহ সভাপতি রাজকমল পাঠক। এই প্রসঙ্গে রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘আমাদের যদি প্রচারকদের তালিকায় রাখত পার্টি তাহলে নিশ্চয়ই সর্বত্র যেতাম। প্রচারকদের তালিকায় না থাকলে কী করে যাব। দিলীপদা ব্যক্তিগতভাবে চেয়েছিলেন তাই প্রচারে গিয়েছি।’
এদিকে সায়ন্তনের বক্তব্য, ‘যে যে প্রার্থী অনুরোধ করেছেন তাদের প্রচারে গিয়েছি। দিলীপদা ও লকেটের হয়ে প্রচারেও গিয়েছি।’ বঙ্গ বিজেপি সূত্রে খবর, এবার লোকসভা ভোটের প্রচারে দলের পুরনোদের একটা বড় অংশই হয় একেবারেই নামেনি নাহলে শুধুমাত্র বুড়ি ছোঁয়া ছুঁয়েছেন। আবার পুরনো দুই নেতানেত্রী দিলীপ ও লকেটের হয়েই শুধুমাত্র প্রচারে দেখা গিয়েছে পুরনো মুখ রাজু এবং সায়ন্তনদের। আবার লোকসভা ভোট শুরু হওয়ার পর প্রাক্তন আইপিএস তথা দলের কেন্দ্রীয় মুখপাত্র ভারতী ঘোষকে বিভিন্ন জায়গায় প্রচারে দেখা যাচ্ছে না কেন, তা নিয়েও দলের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে। সূত্রের খবর, এবার লোকসভা ভোটে মেদিনীপুর কিংবা বসিরহাট থেকে ভারতী ঘোষকে প্রার্থী করা হবে বলে চর্চা চলছিল। কিন্তু ভারতীকে প্রার্থী করার ক্ষেত্রে সবুজ সংকেত দেয়নি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। প্রার্থী তালিকায় নাম না থাকার পর থেকেই তিনি দলের প্রচারেও সেভাবে নেই।