৮ অগাস্ট রাতের ঘটনায় মুখ খুললেন রোগীর পরিবার, মিলল বিস্ফোরক তথ্য

গত ৮ অগাস্টের রাতে আরজি করের সেমিনার রুমে তিলোত্তমার ওপর ঠিক কত জন অত্যাচার চালিয়েছিলেন তা নিয়ে এখনও রয়েছে ধোঁয়াশা। বিশিষ্ট চিকিৎসকদেরও অনেকে মনে করেছেন, এই ঘটনায় একজন নয়, আরও অনেকেই জড়িত থাকতে পারে। এই মামলার সূত্র এখনও অধরা। ঘটনার দেড় মাস পর সামনে এল এক বিস্ফোরক বয়ান। এই বয়ান দিলেন সেই রাতে চিকিৎসাধীন এক রোগীর পরিবার।

ঘটনার রাতে ১টা পর্যন্ত সেমিনার রুমের উল্টোদিকের ঘরে স্লিপ স্টাডি রুমে ছিলেন আরজি করে চিকিৎসাধীন রোগী মিঠু দাস। মিঠুর ছেলে সায়নের দাবি, ঘটনার রাতে ১ টা পর্যন্ত নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, নিরাপত্তারক্ষী-সহ অন্তত ৭ জন জেগে ছিলেন। মিঠুর স্লিপ স্টাডি পরীক্ষা হয় রাত সাড়ে বারোটা পর্যন্ত। সেই সূত্রে সেখানে অনেকেই ছিলেন। এই প্রসঙ্গে সায়ন এও জানান, ‘স্যার বলেছিলেন, সন্ধ্যাবেলা থেকে পরীক্ষা করা হবে। ৬.৫০ মিনিট নাগাদ থেকে পরীক্ষা চালু হয়। মায়ে শুয়ে পড়ে। ডাক্তারবাবু মেশিন লাগিয়ে দিয়ে বলেন, যদি মা নাড়াচাড়া করে, মেশিন খুলে যায়, তাহলে আমি এসে ঠিক করে দেব। ১২.১৫ মিনিট নাগাদ থেকে আমি স্যরকে ফোন করি, ২-৩ বার ফোন করি, স্যর ফোন রিসিভ করেননি।  ডাক্তারবাবু সাড়ে বারোটা নাগাদ চলে আসেন। মেশিন খুলে দেন। মাকে বেডে দিয়ে চলে যাই।’

সঙ্গে এও জানান, সেমিনার রুমের দরজা ভেজানো, ঘর একদম ফাঁকা ছিল। কেউ ছিলেন না। বাইরের দিকে দু’জন সিস্টার বসেছিলেন। স্লিপ স্টাডি রুমের পাশেই আবার আইসিইউ রুম চেস্ট ডিপার্টমেন্টের। সেখানেও লোক ছিল, দরজা বন্ধ ছিল। চেস্ট আইসিইউ-এর সামনে ওয়ার্ডের যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা চেয়ারে বসেছিলেন।

এরই রেশ টেনে সায়ন এও জানান, ‘মাকে নিয়ে যখন বেরিয়ে আসেন তখন রুমের বাইরে দুজন সিস্টার বসেছিলেন। ওঁরা জিজ্ঞাসা করেন, তিনি এদিকে কোথায় ছিলেন সে ব্যাপারেও। তবে এই সময় বহিরাগত কাউকে তিনি দেখিনি। ওখানকার স্টাফ, সিস্টার, আর ছিলেন তাঁর মা। তবে একজন সিকিউরিটি গার্ডও ছিলেন বলে জানান সায়ন। তবে এই স্লিপ স্টাডি চলার সময়ে ওঁদের ইউনিটের একজন এসেছিলেন। ঘর অন্ধকার ছিল বলে মুখ দেখা যায়নি। তবে পুরুষ এ ব্য়াপারে নিশ্চিত সায়ন। কোনও ইন্টার্ন আসেননি। সায়নের কথায়, ড. অর্ক সেন ছাড়া চেস্টেরই আরেকজন ডক্টর এসেছিলেন। তিনি অর্ক সেনের খোঁজেই এসেছিলেন।

অর্থাৎ সায়নের কথা অনুযায়ী, রাত ১টা পর্যন্ত এমনিতেই সেমিনাররুম চত্বরে নার্সিংস্টাফ-সহ ৭-৮ ছিলেন। এখনও পর্যন্ত আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের চেস্ট মেডিসিনের পিজিটি-রা সকলেই মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন। তাঁরা যে অসহযোগিতা করছে, সে বিষয়েও আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানায় সিবিআই। প্রশ্ন উঠছে, নার্সিং স্টাফরা জানিয়েছিলেন, ওই রাতে সেমিনাররুম চত্বরে কেউ ছিলেন না। তাহলে এই বিষয়টাকেই  সমর্থন করছে না সায়ন দাসের বক্তব্য। কারণ রাতে ১টা পর্যন্ত সেখানে ৭-৮ মতো ছিলেন। সঙ্গে এ প্রশ্নও উঠছে, স্লিপ স্টাডি পরীক্ষা সাধারণত সারা রাত ধরে চলে। কিন্তু মিঠু দাসের ক্ষেত্রে কীভাবে তা সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে রাত সাড়ে বারোটাতেই শেষ হয়ে গেল তা নিয়েও। পিজিটি অর্ক সেন কেন সন্ধ্যা থেকে পরীক্ষা করালেন বা কেন তাঁকে তিন-চার বার ফোন করেও পাওয়া যায়নি তা নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা। সঙ্গে এ প্রশ্নও উঠছে, এই সময় তিনি কোথায় ছিলেন তা নিয়েও।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × 2 =

preload imagepreload image