আরজি কর ঘটনায় প্লেস অফ অকারেন্সে প্রবেশ ‘নিষিদ্ধ’ ছিল সহকর্মী, সাংবাদিকদেরও। কিন্তু সেদিন সেমিনার রুমে দেখা মিলেছে ‘বহিরাগত’দের অনেকেরই। যাঁদের সে সময়ে সেখানে থাকার কথাই ছিল না। অন্তত এমনটাই নাকি ধরা পড়েছে এক ভিডিও-তে। যে ভিডিয়ো সামনে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, সেমিনার রুমের বাইরে শান্তনু দে-কে। তিনি আইনজীবী। স্বাস্থ্য ভবনের একাংশের মতে, এই শান্তনু দে হলেন সন্দীপ ঘোষের ছায়াসঙ্গী। আর এখানেই প্রশ্ন, সেখানে আইনজীবী কী করতে গিয়েছিলেন? শুধু তাই নয়, একইসঙ্গে প্লেস অফ অকারেন্সে দেখা মিলেছে সন্দীপ ঘোষ ঘনিষ্ঠ ফরেনসিক চিকিৎসক দেবাশিস সোমেরও। তিনি আরজি করের কর্মীই নন। অথচ ঘটনার পর মুহূর্তেই সেমিনার রুমে দেখা গিয়েছে তাঁকে। দাবি স্বাস্থ্য ভবনের একাংশ। হেলফ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের ডিটেইমেন্ট পোস্টিং দেবাশিসের। তাহলে তিনি সেমিনার রুমে ঘটনার পরই কী করছিলেন তা নিয়েও তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।এদিকে আবার এই দেবাশিসবাবুকেই সোমবার নিজার প্যালেসে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছেন তদন্তকারীরা।
আরও একজনের ছবি সামনে এসেছে ওই ভিডিওতে। তিনি প্রসূন চট্টোপাধ্যায়। তিনি আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ছায়াসঙ্গী। স্বাস্থ্য ভবনের একাংশের মতে, প্রসূন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে তিনি ডেটা এন্ট্রি অপারেটর হিসাবে কাজ করেন।
খুব স্বাভাবিক ভাবেই এরপর প্রশ্ন উঠেছে, ক্রাইম সিনে কীভাবে রয়েছেন ফরেনসিক মেডিসিনের ডেমনস্টেটর, সন্দীপ ঘোষের ছায়াসঙ্গী আর সন্দীপ ঘনিষ্ঠ আইনজীবী তা নিয়েই। সঙ্গে এ প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে, এঁদেরকে কে ডেকে পাঠিয়েছিলেন? আর এখানেই বিরোধী শিবিরে জল্পনা শুরু, তাহলে কি সেখানে পরিকল্পনা চলছিল, কীভাবে সেখানে তথ্য প্রমাণ লোপাট করা যায়? তবে আইনজীবী শান্তনু দে এব্যাপারে সাফাই গেয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি সেদিন অর্থোপেডিকে বহির্বিভাগে চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন। কিন্তু বহির্বিভাগের টিকিট তিনি দেখাতে পারেননি। উল্লেখ্য, সন্দীপ ঘোষও অর্থোপেডিক সার্জন।
এদিকে প্লেস অফ অকারেন্সে বহিরাগতরা কীভাবে তা নিয়ে সরব চিকিৎসক মহলের একাংশ। চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, ‘দেহ তড়িঘড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার থেকে শুরু করে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা। ওখানকার চিকিৎসকরাই আমাদের জানান, সেদিন সেমিনার রুমে কারা কারা এসেছিলেন, কাদের ডাকা হয়েছিল সেখানে। সন্দীপ ঘোষ সিন্ডিকেটটা চালান। আমরা সিজিও কমপ্লেক্স অভিযান চালাব, কেন তাঁদের তদন্তের আওতায় আনা হচ্ছে না।’
এই প্রসঙ্গে চিকিৎসক নেতা সজল বিশ্বাস জানান, ‘সকালেই তড়িঘড়ি আমরা দেখি, শাসকদলের প্রভাবশালী চিকিৎসক নেতা হিসাবে পরিচিত, তাঁরা অকুস্থলে আসেন। এমনকি সেমিনার রুমে, যেখানে বডি পাওয়া গিয়েছিলেন, সেখানে মিটিং করে। ওই চিকিৎসক নেতারা কেউই আরজি করে কর্তব্যরত নন। স্বাস্থ্য দফতরের উচ্চ পদাধিকারীও নন। কেন তাঁরা সেখানে গিয়েছিলেন, তা তদন্তের আওতায় আনতে হবে।’এদিকে আবার চিকিৎসক উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায়ের জানাচ্ছেন,‘যেখানে সংংস্কারের নামে ভাঙচুর করা হয়েছিল তাতে ক্রাইম সিনে আশপাশের এলাকা ভাঙা হয়। আমরা জেনেছিলাম, উপস্থিত ইঞ্জিনিয়ররা ওয়ার্ক অর্ডার ছাড়া কাজ করতে চাননি, তবুও চাপ দিয়ে তাঁদেরকে দিয়ে কাজ করানো হয়েছে। ওইদিন পদাধিকারী যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা তদন্ত বিলম্ব করতে চেয়েছিলেন।’ এদিকে আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘আমার তো আশঙ্কা ধৃত আসলে দাবার বড়ে। একজন সিভিক ভলান্টিয়র চিকিৎসককে খুন করলেন, কেউ দেখলেন না, সেটা বিশ্বাস করা কঠিন। যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, হাসপাতালের চিকিৎসকের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয় কীভাবে?’