তৃণমূলের তালিকা দেখলেই বোঝা যাচ্ছে প্রতিটা আসনের প্রার্থী লড়াই এর জন্য জেতার জন্যই বাছা হয়েছে। জিততে হবে, এটাই প্রথম বিবেচ্য। দ্বিতীয় হল আনুগত্য। প্রার্থী তালিকায় চমক বলতে ব্যারাকপুর থেকে পার্থ ভৌমিক। এদিকে আবার তালিকাতে ঢুকেছেন দেবাংশু ভট্টাচার্য। প্রার্থী করা হয়েছে তমলুক থেকে। নাম ভাসছিল বা ভাসানো হচ্ছিল কুনাল ঘোষের। আরামবাগে গতবার সামান্য ভোটে, হাজার বারোশ ভোটে জিতেছিলেন অপরুপা পোদ্দার। এবারে সেই আরামবাগের টিকিট গেল মিতালি বাগের কাছে। একদিকে মহিলা অন্যদিকে জাতি সমীকরণে এগিয়ে। সঙ্গে রয়েছে সংগঠনের জোর। সব মিলিয়ে আরামবাগ ধরে রাখার জন্য পরিবর্তন। মতুয়া ভোট ব্যাঙ্ক দখলে রাখতে রানাঘাট- বনগাঁতে মুকুটমণি অধিকারি, বিশ্বজিৎ দাস কে দাঁড় করানো হল। অন্যদিকে আলিপুরদুয়ার এ একটা রিগিং এর অভিযোগও শোনা যায়নি। পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়েওএকটা অভিযোগও বিজেপির তরফ থেকেও আসেনি। ফলাফল জেলা পরিষদে বিজেপি শূন্য। ১৮ টা আসনই তৃণমূলের দখলে। আর যে নেতার হাত ধরে এই জয় এসেছিল তাকে রাজ্য সভায় পাঠানো হল। এবার সেই প্রকাশ চিকবরাইক নিজেই প্রার্থী। পুরুলিয়াতে গতবারে হেরেছিলেন ডাক্তার মৃগাঙ্ক মাহাতো, এবার তাঁর বদলে শান্তিরাম মাহাতো। মৃগাঙ্ক মাহাতোর থেকে অনেক বেশি বলিয়ে কইয়ে। ঝাড়গ্রাম থেকে এক্কেবারে নতুন মুখ কালিপদ সোরেন। সাঁওতালি ভাষার গবেষক, পদ্মশ্রী পেয়েছেন। আকাদেমি পুরস্কার আছে। তবে শোনা যাচ্ছিল সদ্য পদত্যাগ করা ঝাড়গ্রামের বিজেপি সাংসদ কুনার হেমব্রমের নাম। তা ছিল নেহাতই গুজব সেটা বোঝা গেছে প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরই। বিজেপির সিটিং এম পির পদত্যাগ এখানে বিজেপিকে বিব্রত করবে সন্দেহ নেই। মেদিনীপুরে জুন মালিয়া। গত ক বছর ওখানেই পড়ে আছেন, দিলীপ ঘোষকে সম্ভবত মেদিনীপুর দেওয়া হচ্ছে না। জুন মালিয়া এবারে বিধায়ক থেকে দিল্লি যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে লড়াই খুব খুব কঠিন। এদিকে তমলুকে বাঘ মারতে পাঠানো হল দেবাংশুকে। সামনে থাকবেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। কদিন আগেও মনে হচ্ছিল ‘ভিনি- ভিডি-ভিসি’-র মতো উনি দাঁড়াবেন, প্রচারে নামবেন আর জেতার সার্টিফিকেট নিয়ে বেরিয়ে আসবেন। এখন মনে হচ্ছে লড়াই খুব কঠিন। শুভেন্দু অধিকারি প্লাস অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়ের বদলে লড়াইটা শুভেন্দু অধিকারূ বনাম দেবাংশু ভট্টাচার্যের এবং প্রায় সমানে সমানে। এই আসন বিজেপি অনায়াসে জেতার কথা। অভিজিৎবাবু এই আসনকে কঠিন করে দিয়েছেন। যে আন্দোলনের মধ্যমণি হয়ে তাঁর ইমেজ তৈরি হল, সেই নিয়োগ দুর্নীতির আন্দোলন, চাকরি প্রার্থীদের দীর্ঘ আন্দোলন ধরণা, সবকিছুকেই এমনভাবে নস্যাৎ করলেন তিনি যা দেখে নিজলিঙ্গাপ্পার নাম মনে পড়তে বাধ্য। ওদিকে লকেট হুগলিতে জিতেছিলেন এবং তারপর থেকেই হুগলির বিজেপি রাজনীতিতে গোষ্ঠিদন্দ্ব এক বড় খবর। সেখানেও রচনা কে বাঘ মারতে পাঠানো হল। রচনা জিতলে লকেটের রাজনীতির সামনে প্রশ্ন চিহ্ন ঝুলবে সেটা বলাই বাহুল্য। তবে রচনার রাজনীতিতে আসার মধ্য দিয়ে একটা বৃত্ত প্রায় সম্পূর্ণ হল, রচনা, শ্রাবন্তী, মিমি, নুসরাত, কনটেমপোরারি অভিনেত্রীরা প্রত্যেকেই রাজনীতিতে নামলেন, ২০২৬ এ ঋতুপর্ণা মাঠে আনলেই সম্পুর্ণ হবে। মালদা উত্তর আর মালদা দক্ষিণের প্রার্থী চয়ন বলে দিচ্ছেন মালদায় গণি খান আজ অতীত, কোতোয়ালি বাড়ির রাজনীতি মালদাকে ঘিরে থাকতো আষ্টেপৃষ্টে, সে ঘেরাটোপ আর নেই। কংগ্রেস অবশ্য সে বংশের বাতিটুকু জ্বালিয়ে রাখার চেষ্টা করবে, তার জন্য শেষ বল পর্যন্ত খেলা দেখতে হবে। মাথায় রাখুন মালদা জেলা পরিষদের ৪৩ জনের মধ্যে ৩৪ জন তৃণমূল, ৫ জন মাত্র কংগ্রেস আর ৪ জন বিজেপির। সেই হিসেব মাথায় রেখেই একধারে একজন আই পি এস অফিসার অন্যদিকে অক্সফোর্ডের পি এইচ ডি ডিগ্রিধারী নতুন মুখ কে হাজির করেছে তৃণমূল। ওদিকে মিমি চক্রবর্তী আর নুসরত জাহানের টিকিট কাটা গেছে, বাঁচা গেছে, এরকমটাই বলছেন অনেক তৃণমূল নেতা কর্মী। বদলে অতিথি শিল্পী নয় পুরোদস্তুর রাজনীতিতে নামা সায়নী ঘোষ মিমি চক্রবর্তীর বদলে আর বসিরহাটে নুসরাতের জায়গাতে হাজি নুরুল ইসলাম। ইনিও দলের কর্মী, বহুদিন ওই এলাকাতেই লড়ে যাচ্ছেন। ভূমিপুত্রও বটে, সন্দেশখালির রেশ কাটিয়ে তিনি জিততে পারেন কিনা সে দিকে চোখ থাকবে সবার।