প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় মঙ্গলবার মুখবন্ধ খামে আদালতে রিপোর্ট জমা দিল দুই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই আর ইডি। এদিনের এই রিপোর্টে আদালতে জানানো হয়, লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের আটটি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে সাড়ে সাত কোটি টাকা। এদিকে এদিন বিচারপতি অমৃতা সিনহার নির্দেশে আরও বিপাকে পড়তে চলেছে কালীঘাটের কাকু ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। এদিন বিচারপতি সিনহার নির্দেশ দেন, ‘চিকিৎসকদের নিয়ে একটি টিম গঠন করবে ইডি। যাঁরা সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠস্বরের নমুনা টেস্ট করতে পারবে।’ এই প্রসঙ্গে বুধবার ইডি-র যুগ্ম অধিকর্তাকে আদালতে হাজির থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।এর পাশাপাশি হাসপাতালের এক চিকিৎসককেও হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুটি ক্ষেত্রেই ভার্চুয়াল মাধ্যমে হাজিরা চায় আদালত।
এদিকে নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’ সংস্থার ভূমিকা নিয়ে উঠেছিল প্রশ্ন। সেই মামলায় মঙ্গলবার হাইকোর্টে রিপোর্ট পেশ করার সময় ইডির তরফ থেকে জানানো হয়, এই মামলার সূত্র ধরে যাঁদের নাম সামনে এসেছে, তাঁদের একে একে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সঙ্গে এও জানানো হয়, যে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির হদিশ মিলেছে তা বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
এদিকে এদিন যে রিপোর্ট সিবিআইয়ের তরফ থেকে আদালতে জমা দেওয়া হয় তাতে জানানো হয়েছে, ‘এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানি শুধুমাত্র একটি স্টাম্প। এর আড়ালে বেআইনি নিয়োগ করা হত।’ সিবিআই জানায়, ‘এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানির কোনও অনুমোদন ছিল না। রেজিস্ট্রেশনের জন্য যে অনলাইন পোর্টাল করা হয়েছিল তা সম্পূর্ণ বেআইনি। এমনকী, সংস্থায় কোনও কর্মীও নেই। ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষার সমস্ত নথি নষ্ট করা হয়েছে।’
পাশাপাশি নিয়োগ দুর্নীতি প্রসঙ্গে সিবিআই রিপোর্টে বলা হয়, ‘সিঙ্গল রোল নম্বরে মাল্টি রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছিল যাতে আসল পরীক্ষার্থীকে চিহ্নিত না করা যায়। অয়ন শীল হলেন এই ওএমআর কেলেঙ্কারিতে অন্যতম অভিযুক্ত। তিনি এখন জেলে রয়েছেন। তাঁকে গিয়ে জেরা করেছে সিবিআই। ১৭টি পুরসভায় দুর্নীতি করে নিয়োগ করেছে অয়ন শীল।’
উল্লেখ্য, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পরীক্ষার ওএমআর শিট দেখার পর নম্বর দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানিকে। এর আগেও সিবিআই-এর তরফে দাবি করা হয়েছিল, অযোগ্যদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নেপথ্যে হাত রয়েছে সংশ্লিষ্ট সংস্থার। সংস্থার দুই কর্মী কৌশিক মাজি এবং পার্থ সেনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ফলে এবার নতুন করে এই সংস্থার বিরুদ্ধে উঠল চাঞ্চল্যকর অভিযোগ।
এদিকে ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’ সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। বর্তমানে তিনি এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর কন্ঠস্বরের নমুনা বা ভয়েস স্যাম্পল পেতে রীতিমতো হয়রান হতে হচ্ছে ইডি-কে। এমনকী এসএসকেএম-এ গিয়েও ফিরে আসতে হয়েছে। এ কথা জেনে বিচারপতি এদিন নির্দেশ দিয়েছেন, ইডি-কে একটা টিম তৈরি করতে হবে, যেখানে একজন চিকিৎসক থাকবেন, যিনি ভয়েস টেস্ট করতে পারেন। অনলাইনেও কথা বলতে পারবেন। ইডি-র জয়েন্ট ডিরেক্টরকেও থাকতে হবে সেই টিমে। বিচারপতি অমৃতা সিনহা জানিয়েছেন, ইএসআই-এর কাছ থেকে জানতে চাওয়া হবে যে, কণ্ঠস্বরের নমুনা পরীক্ষার জন্য কতদিন সময় লাগতে পারে।
উল্লেখ্য, গ্রেফতার হওয়ার কিছুদিন পরই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। তাঁর হার্ট অপারেশনও করা হয়। এরপর জেলে নিয়ে যাওয়া হলে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তারপর থেকে এসএসকেএম-এই রয়েছেন সুজয়কৃষ্ণ। এদিকে, প্রমাণ হিসেবে পাওয়া একটি কন্ঠস্বর ‘কাকু’র কি না, তা জানতে মরিয়া ইডি।