পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে শনিবার জেলায় জেলায় হিংসার ছবি দেখা গিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে। অধিকাংশ জায়গায় তাদের ব্যবহারই করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে বিএসএফ সরব রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে। বৈঠক, ফোন এবং চিঠি লিখে তা জানিয়েও দিয়েছেন বিএসএফের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড। বিএসএফের ডিআইজি ইস্টার্ন কমান্ড এসএস গুলেরিয়ার দাবি, কমিশনের সঙ্গে অনেক চিঠি চালাচালি হলেও কমিশনের সদিচ্ছার অভাব ছিল। এ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকেও রিপোর্ট পাঠাচ্ছে বিএসএফ। প্রয়োজনে তা তুলে দেওযা হবে আদালতের হাতেও। একইসঙ্গে তাঁর মত, ভোটের হানাহানি রুখতে রাজনৈতিক দলগুলির আরও দায়িত্বশীল হওয়া দরকার।
এখানে বলে রাখা শ্রেয়, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সুর চড়াল বিএসএফ। একইসঙ্গে রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধেও তোলা হয়েছে অসহযোগিতার অভিযোগ। বৈঠক, ফোন এবং চিঠি লিখে তা জানিয়ে দিল বিএসএফের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড। সূত্রে খবর, রাজ্যে অন্তত সাড়ে ৫ হাজার বুথে পুনর্নির্বাচনের করার সুপারিশ করে রিপোর্ট দিতে চলেছেন আইজি বিএসএফ। কারণ, তিনিই বাহিনী সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিলেন। সমস্ত কেন্দ্রীয় বাহিনীর দেওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতেই তিনি এই সুপারিশ করতে চলেছেন বলে খবর। পুনর্নির্বাচনের সুপারিশ করে নির্বাচন কমিশন এবং হাইকোর্টে রিপোর্ট দেওয়া হবে। সূত্রের খবর, সোমবার লিখিত রিপোর্ট দেওয়ার সম্ভবনা।
বিএসএফের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় বাহিনী সঠিক জায়গায় মোতায়েন করা হয়নি। ভোটের ২৪ ঘণ্টা আগে পর্যন্ত কোথায় কোথায় বাহিনী মোতায়েন হবে, স্পর্শকাতর বুথ কোনগুলি তার তালিকা বারবার চেয়েও পাওয়া যায়নি। একইসঙ্গে বিএসএফের তরফ থেকে এও দাবি, করা হয়েছে, কমিশনের পরিকল্পনাহীনতার জন্য রাজ্য়ে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এত বিশৃঙ্খলা হয়েছে। পুরোদস্তুর সহযোগিতা করেনি রাজ্য পুলিশও। পাশাপাশি বিএসএফের তরফ থেকে এও জানানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় বাহিনী যে যে বুথে ছিল, সেখানে কোনও গন্ডগোল হয়নি। রাজ্য পুলিশ যে যে বুথে ছিল সেখানেই চলেছে লুঠপাট। হানাহানিও হয়েছে। যে বুথগুলি স্পর্শকাতর সে জায়গায় বাহিনী মোতায়েনে ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচন কমিশন।
একই সঙ্গে বিএসএফ-র আইজি এ অভিযোগও এনেছেন যে, শনিবার সকাল পর্যন্ত বিভিন্ন ক্যাম্পে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বসিয়ে রাখা হয়। দুপুর হয়ে যাওয়ার পর তাদের নিয়ে এলাকা ঘুরতে বের হয় রাজ্য পুলিশ। তাতেই আর লাগাম দেওয়া যায়নি অশান্তিতে। একইসঙ্গে রিপোর্টে সিভিক ভলান্টিয়ারদের কথাও থাকতে পারে বলে খবর। অর্থাৎ অভিযোগে এটাই স্পষ্ট যে, নির্বাচন কমিশনের একাধিক ভুলভ্রান্তির জন্য পঞ্চায়েত ভোটে এই বেলাগাম অশান্তি।
এই প্রসঙ্গে রবিবার ডিআইজি ইস্টার্ন কমান্ড এসএস গুলেরিয়া জানান, কিছু কিছু বুথে এমন হিংসা দেখা গিয়েছে যা না হওয়াই কাম্য ছিল। একইসঙ্গে তিনি বলেন, যে স্পর্শকাতর বুথের হিসাব রাজ্য নির্বাচন কমিশন দিয়েছে, তার থেকে এই সংখ্যা আরও বেশি হলেই ভাল হত। সঙ্গে এও জানান, ‘বাহিনী মোতায়েনের দায়িত্ব ফোর্স কোঅর্ডিনেটের ছিল। রাজ্য পুলিশ ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের থেকে স্পর্শকাতর এলাকার তথ্য় নিয়ে তারপরই মোতায়েন করা হয় বাহিনী। তিনি তেমনটাই করেছেন। তবে আমার মনে হয় সংবেদনশীল পোলিং বুথ আরও বেশি হওয়ার কথা ছিল। ৪ হাজার ৮৩৪ বুথের কথা আমাদের রেকর্ডে আছে। আমাদের কাছে ফোর্স অনেক বেশি ছিল। তাই ৪ হাজারের বদলে সংবেদনশীল বুথের সংখ্যা ১০-১২ হাজার হলে, আরও ভাল হত। তাহলে সেখানে সেন্ট্রাল আর্ম পুলিশ ফোর্সেস মোতায়েন করা যেত। নির্বাচন কমিশন থেকে যে তথ্য আমাদের জানার কথা ছিল, তা জানানো হয়নি।’
ডিআইজি ইস্টার্ন কমান্ডের কথায়, যেখানে বাহিনী ছিল, সেখানে কোনও হিংসার ঘটনা ঘটেনি। দু’ এক জায়গায় ঝামেলা পাকানোর চেষ্টা করা হলেও বাহিনী তা নিয়ন্ত্রণেই রাখে। তবে বারবার তাঁর গলাতেও ধরা পড়ে একই অভিযোগ, যা শনিবারই জানিয়েছেন বিএসএফ-এর আইজিও।বলেন, ‘কমিশনের সঙ্গে সমন্বয়ের একটা অভাব ছিল।’ সঙ্গে সংযোজন, ‘নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না। কারণ, ওদের কাজ আলাদা, আমাদের ভূমিকা আলাদা। তবে আমাদের মধ্যে একটা সমন্বয় থাকা দরকার ছিল। এরজন্য একাধিক বৈঠকও হয়। আমাদের জন্য সবথেকে বড় সমস্যা ছিল, স্পর্শকাতর বুথের যে সংখ্যা আগাম তা আমাদের জানানো হয়নি। বারবার চিঠিতে জানিয়েও কাজের কাজ হয়নি। তার জন্য অসুবিধা হয়েছে। আগে থেকে সেটা পেলে খুব ভালভাবে কাজ হতে পারত। এ সংক্রান্ত রিপোর্ট তৈরি করে আমরা বিএসএফ হেডকোয়ার্টারের পাশাপাশি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে পাঠাব। কোর্ট চাইলে সেখানেও রিপোর্ট দেব।’
এদিকে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহার বক্তব্য, ‘জেলা স্তরে যাঁরা কাজ করেন, সন্ত্রাস আটকানোর দায়িত্ব তাঁদের। আমার দায়িত্ব ব্যবস্থা করা। আমরা সবরকম ব্যবস্থা করেছি। তবে তারপরও তো কেউ গ্যারান্টি দিতে পারবে না, কে কাকে গুলি করে দেবে, কাকে মেরে দেবে। কিন্তু ব্যবস্থা আমরা সবরকম ব্যবস্থা নিয়েছি যাতে ভোটাররা ভোট দিতে পারেন।’