বিভিন্ন বুথ ফেরত সমীক্ষার রিপোর্ট বাংলায় পদ্ম শিবিরকে নির্বাচনী দৌড়ে এগিয়ে রাখলেও এখনই উচ্ছ্বাসে গা-ভাসাতে রাজি নয় বঙ্গ-বিজেপি নেতৃত্ব। আর সেই কারণেই মঙ্গলবার ভোটের সম্পূর্ণ ফল প্রকাশ না-হওয়া পর্যন্ত দলীয় কর্মীদের ‘বিজয়-উৎসবে’ লাগাম টানা হয়েছে বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের তরফ থেকে। বঙ্গের স্য়াফ্রন ব্রিগেড সূত্রে খবর, এ ব্যাপারে শনিবারই রাজ্য বিজেপি দফতর থেকে সতর্ক করা হয় জেলাগুলিকে। দলের নিচুতলার নেতা-কর্মীদের বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব স্পষ্ট ভাষায় বুঝিয়ে দেন, গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত লড়াই শেষ হচ্ছে না। ফলে এক্সিট পোলের রিপোর্ট দেখে ফুরফুরে মেজাজে ঘুরে বেড়ানোর জো নেই।
শুধু বঙ্গ-বিজেপি নয়, একই মনোভাব দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেরও। শনিবার সন্ধ্যায় এক্সিট পোলের রিপোর্ট দেখে উত্তরপ্রদেশের কিছু এলাকায় গেরুয়া আবীর মেখে রাস্তায় নেমে পড়েন অতি-উৎসাহী বিজেপি কর্মীরা। এরপরই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দলের রাজ্য শাখাগুলিকে জানিয়ে দেন, সংযত থাকতে হবে। ৪ জুন ফল প্রকাশ হওয়ার আগে পর্যন্ত দেশের কোথাও বিজয়-উৎসব পালন করা যাবে না। বিভিন্ন বুথ ফেরত সমীক্ষার রিপোর্ট এগিয়ে রেখেছে বিজেপিকে। তাতে গেরুয়া নেতৃত্ব থেকে কর্মী-সমর্থকরা উৎফুল্ল হলেও তার প্রভাব যেন কোনওভাবেই গণনাকেন্দ্রে না-পড়ে, তা নিশ্চিত করতে চাইছে বিজেপি শিবির। প্রসঙ্গত, প্রায় সব সংস্থারই বুথ ফেরত সমীক্ষায় দাবি, তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে নরেন্দ্র মোদি। বাংলাতেও বিজেপির আসন বৃদ্ধির আভাস মিলছে একাধিক বুথ ফেরত সমীক্ষার রিপোর্ট থেকে। যদিও বিজেপি নেতৃত্বও জানেন, এক্সিট পোলের রিপোর্ট অতীতেও উল্টে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তাই দলের কর্মী-সমর্থকদের অতি উৎসাহকে কোনওরকম গুরুত্ব দিতে চাইছে না বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁদের যুক্তি, গণনা মিটুক, জয় উপভোগ করার জন্য অনেক সময় পাওয়া যাবে। আপাতত মুখে কুলুপ এঁটে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।
এ প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার জানান, ‘মঙ্গলবার গণনা। কাউন্টিং এজেন্টদের আমরা বলেছি, এক্সিট পোলে কী দেখিয়েছে, তা নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভুগলে চলবে না। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত গণনাকেন্দ্রগুলিতে মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হবে।’ বিজেপির আশঙ্কা, ভোট-গণনায় বড়সড় কারচুপি করার পরিকল্পনা করছে তৃণমূল। সুকান্ত-সহ রাজ্য বিজেপির তাবড় নেতারা দফায় দফায় বৈঠক সারেন দলের কাউন্টিং এজেন্টদের সঙ্গে। তাঁদের বারংবার বলা হয়েছে, এক্সিট পোলে বিজেপি জিতে গিয়েছে দেখে গণনাকেন্দ্রে ফুরফুরে মেজাজে থাকলে জোড়াফুল শিবির শেষবেলায় খেলা ঘুরিয়ে দিতে পারে। এই প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির এক বর্ষীয়ান নেতা জানান, ‘শনিবার সন্ধ্যায় বিভিন্ন বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে এক্সিট পোল দেখে আমদের কর্মীরা খুশিতে ডগমগ হয়ে উঠেছেন। ভয়টা এখানেই। জিতেই তো গিয়েছি গোছের মনোভাব নিয়ে তাঁরা গণনাকেন্দ্রে গেলে সর্বনাশ। তাই রবিবার দিনভর নিচুতলার নেতা-কর্মীদের কাছে এই বার্তাই পৌঁছে দেওয়া হয়েছে যে, ৪ তারিখ ফল প্রকাশের পরই বোঝা যাবে আমরা জিতেছি কি না। গণনা কেন্দ্রে দলের এজেন্টদের ঢিলেঢালা মনোভাব বরদাস্ত করা হবে না।’