প্রকাশ্যে এল সন্দেশখালি স্টিং অপারেশনের দ্বিতীয় ভিডিও

শনিবার রাতে প্রকাশ্যে এল ‘সন্দেশখালির স্টিং অপারেশন’-এর দ্বিতীয় পর্ব। প্রথম ভিডিয়োর মতো এখানেও গঙ্গাধরকেই কথা বলতে শোনা যায়। যদিও গঙ্গাধর দাবি করছেন, প্রথম ভিডিয়োটি ‘বিকৃত’। এই ঘটনায় সিবিআইয়ের দ্বারস্থও হয়েছেন তিনি। এরপরই প্রকাশ্যে এসেছে দ্বিতীয় ভিডিয়ো, যেখানে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, সন্দেশখালিতে যে মহিলারা আন্দোলন করেছিলেন, তাঁদের আর্থিক সাহায্য করা হয়েছে। এর পর তিনি জানান, ভোট করাতে গেলে ঠিক কী কী প্রয়োজন।

দ্বিতীয় এই ভিডিওতে প্রশ্নকর্তাকে জিজ্ঞেস করতে শোনা যাচ্ছে, ভোট পর্যন্ত গঙ্গাধরের কত পরিমাণ মদ লাগবে তা নিয়ে। জবাবে গঙ্গাধর জানান, ‘আদিবাসী এলাকায় বেশি লাগে। তফসিলি এলাকায় একটু কম। তিনটে অঞ্চলে প্রায় ৫০টি বুথ রয়েছে। সন্দেশখালিতে ১০টি বুথ রয়েছে। সেখানে বেশি মদ লাগবে। এখানে তফসিলি উপজাতি বেশি। মুসলিমরা সংখ্যায় ৩০০ জনের মতো।’ এরপরেই প্রশ্নকর্তা জিজ্ঞেস করেন, ভোট পর্যন্ত গঙ্গাধরের মণ্ডলে কত খরচ লাগবে তাও। গঙ্গাধর প্রথমে জানান, তাঁর এই বিষয়ে সঠিক ধারণা নেই। এই প্রসঙ্গে প্রশ্নকর্তা জানান, এখন থেকে ‘বাজেট’ না করলে শেষ মুহূর্তে সামলে ওঠা যাবে না। প্রত্যুত্তরে গঙ্গাধর জানান, বুথ প্রতি ৫ হাজার করে ধরাই শ্রেয়। অর্থাৎ, ৫০টি বুথে খরচ পড়বে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা। গঙ্গাধরের হিসাবে, এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মহিলা এবং ৭০ শতাংশ পুরুষ মদ্যপান করবেন। এরপরই প্রশ্নকর্তা জিজ্ঞেস করেন, এর মধ্যে আন্দোলনকারী মহিলারাও অন্তর্ভুক্ত কি না।  জবাবে গঙ্গাধর বলেন, ‘আন্দোলনকারী মহিলারা তো সকলে মদ্যপান করে না।’ এরপরই প্রশ্নকর্তার প্রশ্ন,‘যারা খাচ্ছে, তারাও আন্দোলনকারীদের মধ্যে থাকবেন তো? খরচও ওর মধ্যেই ধরা হচ্ছে তো?’ জবাবে গঙ্গাধর বলেন, ‘হ্যাঁ, তারা থাকবেই। তবে আলাদা আলাদা। পুলিশের সামনে তারা আসবে না। পুরুষেরা পিছন থেকে সাহায্য করবে।’ এরই পাশাপাশি ভোটে জয় নিয়েও গঙ্গাধর নিশ্চয়তা প্রদান করেন প্রশ্নকর্তাকে। সঙ্গে এও জানান, ‘পাঁচ হাজার টাকাটা অনেক কম বলেছি আপনাকে। সবাইকে বলেছি, অন্তত প্রথম লোকসভাটা জেতাও। পরে বিধানসভার ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা। আপনারা রয়েছেন যখন, তখন আমার একটু সুবিধা হয়ে যাবে।’

ভিডিয়োর কথোপকথনে গঙ্গাধরকে অস্ত্রের হিসাব দিতেও শোনা গিয়েছে। গঙ্গাধর জানিয়েছেন, কোরাকাটি এবং মণিপুরের জন্য অস্ত্র লাগবে। তবে সন্দেশখালির জন্য অস্ত্রের প্রয়োজন নেই। তিনি এও জানিয়েছেন, বোমার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন পিস্তলের। কতগুলি প্রয়োজন, তা-ও জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘কোরাকাটির জন্য ৩০ আর মণিপুরের জন্য ২০টা। মোট ৫০টা হলে ঠিক আছে।’ পাশাপাশি, এও জানান, ওই দুই এলাকার বাসিন্দারা পিস্তল চালাতেও পারেন। তাঁর কথায়, ‘কোরাকাটি আর মণিপুরের ওরা অভ্যস্ত। কিন্তু সন্দেশখালিতে বিজেপির কেউ সে ভাবে অভ্যস্ত নয়।’ কার্তুজের হিসেবও দিয়েছেন গঙ্গাধর। পিস্তল পিছু ১২টি করে কার্তুজ দাবি করেন তিনি। সব মিলিয়ে ৩৬০। না হলে ২৪০। সঙ্গে এও বলেন, ‘ডবল না থাকলে মুশকিল।’ প্রশ্নকর্তা হুঁশিয়ারি দেন, কাজের শেষে অস্ত্র কোথাও মেলা চলবে না। তাহলে ‘চাপ’ রয়েছে। তখন গঙ্গাধর বলেন, ‘আমাকে আবার ওদের আলাদা ভাবে ডাকতে হবে।’ গুলি যদি চালানো হয়, অস্ত্র নষ্ট করে দেওয়ার আশ্বাসও দিতে শোনা যায় গঙ্গাধরকে।

এদিকে শনিবার রাতে স্টিং ভিডিয়োর দ্বিতীয় পর্বটি যখন প্রকাশ্যে আসে, ঘটনাচক্রে সেই সময়ে কলকাতায় ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রবিবার রাজ্যে তাঁর চারটি জনসভা। প্রথম সভা ছিল বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিংহের হয়ে ব্যারাকপুরে। সেখানে স্টিং ভিডিয়ো নিয়ে সরাসরি কোনও কথা বলেননি মোদি। শুধু বলেন, ‘সন্দেশখালি নিয়ে নতুন খেলা শুরু করেছে তৃণমূল।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 − seven =