মুখ্যমন্ত্রীর তোপে সামনে এল প্রত্যেক পুরসভার হাল-হকিকৎ

সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর তোপের মুখে কাউন্সিলর থেকে বিভিন্ন এলাকার নেতামন্ত্রীরা। রাস্তাঘাট, নিকাশি ব্যবস্থা, পানীয় জল সরববরাহ, মিউটেশন, বাড়ির নকশা অনুমোদন-সহ সব কিছু নিয়েই এদিন উষ্মা প্রকাশ করেন মমতা। সঙ্গে ১৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে বলেন, আশা করি, এই সময়ের মধ্যে আমি কিছু ফল পাব। সরকারের অনুমতি না নিয়ে কোনও কাজ করা যাবে না বলে রীতিমতো হুঁশিয়ারি দেন মুখ্যমন্ত্রী। একইসঙ্গে এও বলেন, পুরসভায় ক্যাজুয়াল স্টাফ নেওয়া হচ্ছে। ফুটপাত দখল হয়ে যাচ্ছে, পুলিশের চোখে পড়ে না। মানুষ উন্নয়ন না পেলে সেই পুরসভা-পঞ্চায়েত রেখে লাভ কী? জমি জবরদখল নিয়েও ক্ষোভ উগড়ে দেন মমতা। তিনি বলেন, রাজ্য সরকারের জমি বেঁচে দিচ্ছে। কোথাও জবরদখল হলে কেন পদক্ষেপ করা হচ্ছে না? রাজারহাটে সুজিত বসু লোক বসাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, বিধাননগর কর্পোরেশনের কাউন্সিলররা কোনও কাজ করে না। তিনি বলেন, পুরসভাগুলি নিজেদের ইচ্ছেমতো লোক নিয়েছে। অনুমতি না নিয়ে ট্যাক্স বাড়িয়ে দিচ্ছে। কোনও পুরসভা কোনও কাজ করে না। রাস্তাঘাট পরিষ্কার হয় না, ড্রেন সাফাই হয় না, যে যার মতো বহুতল বাড়ির অনুমোদন দিয়ে টাকা কামিয়ে নিচ্ছে। এক শ্রেণির পুলিশ অফিসার, আমলাও টাকা খাচ্ছেন। সঙ্গে এও বলেন, রাস্তা দখল হয়ে যাচ্ছে। পুলিশ দেখেও দেখে না। হাত গুটিয়ে বসে থাকে। কোথাও এমএলএ, কোথাও কাউন্সিলর টাকা খাচ্ছেন। টাকার বিনিময়ে বাংলার সংস্কৃতি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। এরপর তো শহরে বাংলায় কথা বলার মতো লোক থাকবে না। আপনারা চুরি করছেন। আর আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। যারা বাংলার সর্বনাশ করছে, তাদের আমি ছাড়ব না। আমি টাকা তোলার মাস্টার চাইছি না, জনসেবক চাইছি। যারা টাকা নিয়ে যাচ্ছে তারা ভোটাও পাচ্ছে। আমাদের লোক কিছু আছে। কেউ টাকা খেয়ে আবার কেউ টাকা খাইয়ে কাজ করছে। হাওড়া কর্পোরেশনের কথা তুলে মমতা বলেন, হাওড়া জঞ্জাল পরিষ্কার হচ্ছে না কেন? হাওড়ার ১২ট বাজিয়ে দিয়েছে রথীন।

শুধু তীব্র ভর্ৎসনাই নয়, ‘ভাল-খারাপে’র রিপোর্ট কার্ডও পড়ে শোনালেন মমতা। বেস্ট অ্যান্ড ওয়ার্স্ট পারফরম্যান্স’- এই বলেই একে একে বলে গেলেন পুরসভাগুলির নাম। সল্টলেক, বালি, হাওড়া, বিধাননগর ও শিলিগুড়ি পুরসভার নাম করে ভর্ৎসনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে পানীয় জলের ক্ষেত্রে ভালো পুরসভা উলুবেড়িয়া, হালিশহর, বৈদ্যবাটি,  কলকাতা এবং বাঁকুড়া। খারাপের তালিকায় রয়েছে, আলিপুরদুয়ার, শিলিগুড়ি, বালি, বরাহনগর, শান্তিপুর। আবাসনের সূচকে সেরা পুরসভার তালিকায় রয়েছে, উলুবেড়িয়া, জঙ্গিপুর, হাবড়া, কৃষ্ণনগর, মধ্যমগ্রাম। হাউসিং অর্থাৎ নির্মাণের ক্ষেত্রে মমতার রিপোর্ট বলছে উলুবেড়িয়া, জঙ্গিপুর, হাবড়া কৃষ্ণনগর, মধ্যমগ্রামে ভাল কাজ হয়েছে আর সবথেকে খারাপ কাজ হয়েছে বিধাননগগর, আসানসোল, রায়গঞ্জ ও কাঁথিতে। এই প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘সব নিজেদের সম্পত্তি করে রেখে দিয়েছে, ভেঙে দেব আমি।’ পরিচ্ছন্নতার মাপকাঠিতে কলকাতা, বসিরহাট, বৈদ্যবাটি, উত্তরপাড়া, নবদ্বীপ, উত্তর দমদম পাশ করেছে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। পরিচ্ছন্নতায় ফেল কাঁথি, ডালখোলা, পানিহাটি, কুপার্স ক্যাম্প, সিউড়ি। এই রিপোর্ট কার্ড পেশ করে নগরোন্নয়ন দফতরকেও একহাত নেন মমতা। রাজ্য সরকার বিপুল টাকা দেওয়া সত্ত্বেও কেন কাজ হচ্ছে না, সেই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় ফিরহাদ হাকিমের দফতরকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 − two =