জামালের দামাল হয়ে ওঠার কাহিনি

সোনারপুরের বাসিন্দারা বলেন তিনি নাকি বেকার। কিন্তু, তাঁর রয়েছে এক প্রাসাদোপম বাড়ি। যা চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার মতোই। বঙ্গ রাজনীতি থেকে কলকাতা ও তার উপকণ্ঠের বাসিন্দারা যখন আড়িয়াদহের জয়ন্ত সিংকে নিয়ে ব্যস্ত ঠিক তখনই এই জামালউদ্দিন সর্দারের খবর প্রকাশ্যে আসে। শিকল দিয়ে এক মহিলাকে মারধরের অভিযোগ উঠে।

খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, সোনারপুরের প্রতাপনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের সাঙ্গুরের বাসিন্দা জামালউদ্দিন সর্দার। স্থানীয়রা তাঁকে একটা সময় দেখেছেন মুহুরির কাজ করতে। তবে বলিয়ে-কইয়ে লোক। অভিযোগ, ধীরে ধীরে প্রশাসন ও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে ভাব জমে ওঠে তাঁর। মুহুরির কাজ ছেড়ে দেন। শুরু করেন জমির দালালি। সেখান থেকেই উত্থান শুরু জামালের। এরপর ধীরে ধীরে এলাকায় প্রভাব বাড়তে থাকে জামালের। এরপর এলাকার সমস্যা মেটাতে তাঁরই দ্বারস্থ হতে হত। বাড়িতেই বসাতেন সালিশিসভা। সেখানে ‘বিচারক’ হিসেবে উপস্তিত থাকতেন জামাল। সম্ভবত আদালতে মুহুরির কাজ করতেন বলেই বোধহয় ছিল তাঁর এত তোপ। তাঁর বিচার না মানলেই হত অত্যাচার। বিভিন্ন সমস্যা মেটানোর নামে লক্ষ লক্ষ টাকাও নিয়েছেন এই জামাল।

মঙ্গলবার প্রথম জামালের নাম প্রকাশ্যে আসে। এক মহিলা অভিযোগ করেন, পারিবারিক সমস্যা মেটানোর নামে তাঁর স্বামীকে শেকল দিয়ে বেঁধে উল্টো করে ঝুলিয়ে মারেন জামাল। স্বামীকে বাঁচাতে গেলে তাঁকেও মারধর করা হয়। এই ঘটনা থেকেই শুরু। এরপর জামালের নামে একের পর এক অভিযোগ সামনে আসে। কারও অভিযোগ জমি হাতিয়ে নেওয়ার। কেউ বলছেন, সমস্যা মেটানোর নামে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়েছেন জামাল।

এদিকে আবার ২০২১ সালে ভোট পরবর্তী হিংসায় মৃত্যু হয়েছিল হারান অধিকারী নামে এক ব্যক্তির। অভিযোগ উঠছে, সেই ‘খুনে’ মূল মাথা জামাল। হারানের মৃত্যুর পর কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছিল জামালকেও। কিন্তু, ঘটনাস্থলে জামাল থাকার কোনও প্রমাণ তদন্তকারীরা পাননি। ফলে দু’মাস পরেই মুক্তি পান তিনি।

এদিকে জামালের প্রাসাদোপম বাড়ি দেখলে চোখ সরানো যাবে না। সোনারপুরে একদম রাস্তার ধারেই জামালের এই বাড়ি। বিশাল বড় গেট। গেট থেকে বাড়ি পর্যন্ত যাওয়ার জন্য ঝা চকচকে রাস্তা। দু’ধারে গাছ লাগানো। রিসর্ট না বাড়ি তা হঠাৎ দেখলে বোঝা মুস্কিল। বাড়ির ভিতর ও বাইরে মোট ৫০ টি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো। বাড়ির মধ্যে রয়েছে সুইমিং পুল। শুধু তাই নয়। সেই সুইমিং পুলে রয়েছে কচ্ছপ। বেআইনিভাবে এই কচ্ছপ বাড়ির সুইমিংপুলে রাখার জন্য সর্বোচ্চ তিন থেকে সাত বছরের জেল ও ২৫ লক্ষ টাকার জরিমানা হতে পারে বলে জানিয়েছেন ডিএফও মিলন মণ্ডল। ঘোড়াও পুষতেন জামাল। দেখাশোনার জন্য ছিল লোকও। এছাড়া আরও ৭ জন তাঁর বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। তবে এলাকায় খোঁজ খবর নিতেই জানা গেল অন্যের জমি হাতিয়েই নাকি এই প্রাসাদ গড়েছেন জামাল।

এদিকে একের পর এক অভিযোগ সামনে আসার পর থেকেই পলাতক জামাল। খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না তাঁর। তৃণমূল বলছে, তাদের দলের সঙ্গে জামালের কোনও সম্পর্ক নেই। এতদিন এত ঘটনার কোনও খবরই কি ছিল না পুলিশের কাছে। স্থানীয় বিধায়ক তো হাত ধুয়ে রেখেছেন জামালের ঘটনা সামনে আসতেই। অবাক কাণ্ড। কিন্তু সত্যিই কী তাই! কার ছত্রচ্ছায়ায় সোনারপুরের ত্রাস হয়ে উঠেছিলেন এই জামাল তা নিয়ে কিন্তু থেকে গেল বড় প্রশ্ন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 − one =