আরজি কর হাসপাতালে তিলোত্তমাকে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় আন্দোলন চলছে গোটা দেশে। এবার তারই আঁচ লাগল কলকাতা পৌরসভার মাসিক অধিবেশনে। শুক্রবার অধিবেশন শুরুর আগে বিক্ষোভ দেখাতে দেখা যায় বাম-কংগ্রেসকে। অধিবেশন শুরু হলে বিজেপি সজল ঘোষ এবং বিজয় ওঝা অধিবেশন কক্ষে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বড় অংশের মতে, এদিনের অধিবেশনে আরজি কর কাণ্ডের প্রভাব যে পড়বে সে বিষয়ে একপ্রকার নিশ্চিত ছিল তৃণমূল নেতৃত্ব। যে কারণে পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ ছিল গোটা এলাকা। এদিন অধিবেশন শুরুর আগে বামেদের দু’জন কাউন্সিলর মধুছন্দা দেব ও নন্দিতা রায় এবং কংগ্রেস কাউন্সিলর সন্তোষ পাঠক বুকে তিলোত্তমার জন্য বিচার চেয়ে প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে পুরসভার করিডোর দিয়ে হেঁটে বিক্ষোভ দেখান। এখানেই শেষ নয়, মেয়র ফিরহাদ হাকিমের ঘরের সামনেও দেখানো হয় বিক্ষোভ। তারপর সোজা চলে যান কলকাতা পৌরসভার চেয়ারপার্সন মালা রায়ের ঘরের সামনে। সেখানেও চলে বিক্ষোভ। সেই প্ল্যাকার্ডই বুকে ঝুলিয়ে তাঁরা অধিবেশন কক্ষে ঢুকেও বিক্ষোভ দেখান।
এদিকে অসুস্থতার কারণে এদিন আসেননি মালা রায়। তাঁর জায়গায় অধিবেশনের অধ্যক্ষ বা চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব সামলান ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী। অধিবেশনের শুরুতে নিয়মমাফিক শোক প্রস্তাবও পাঠ হয়। কিন্তু, বিজেপির দুই কাউন্সিলর সজল ঘোষ এবং বিজয় ওঝার দাবি, তিলোত্তমার নামে পাঠ করতে হবে প্রস্তাব। কিন্তু, এটা নিয়মবিরুদ্ধ বলে দাবি করেন অরূপ চক্রবর্তী। এমনকি এটা বিচারাধীন বিষয় বলে এভাবে শোক প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না বলেও দাবি করেন। এরপরই বিজেপি, বাম এবং কংগ্রেস কাউন্সিলররা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। নিজেদের দাবিতে অনড় থেকে শুরু করে দেন বিক্ষোভ।
এর মধ্যে অরূপ চক্রবর্তী মেয়রের কথায় সায় দিয়ে এক মিনিটের জন্য নীরবতা পালন করেন। কিন্তু, বিজেপি কাউন্সিলররা তখনও অনড় তাঁদের দাবিতে। কলকাতার বুকে যে নৃশংস ঘটনা ঘটেছে সে বিষয়টি কি মাথায় রেখে এদিনের অধিবেশন পর্ব মুলতুবি করে দেওয়ারও দাবি ওঠে। কিন্তু, তাতে রাজি হননি অধিবেশনের অধ্যক্ষ। এরপরই শুরু হয়ে যায় ব্যাপক চিৎকার-চেঁচামেচি। ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিরোধী শিবিরের লোকজন। পাল্টা তৃণমূল বিজেপি কাউন্সিলরদের দুষে স্লোগান শুরু করে দেয়। দু’পক্ষের চিৎকারে সরগরম হয়ে ওঠে অধিবেশন কক্ষ। এরপরই ওয়াকআউট করে বেরিয়ে যান বিজেপি কাউন্সিলররা। বাইরে এসেও বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। অধিবেশন কক্ষের গেটে বসেও চলতে থাকে বিক্ষোভ। একেবারে অধিবেশনের শেষ পর্যন্ত যার রেশ থেকে যায়। যদিও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম সাংবাদিক বৈঠকে তোপ দেগেছেন বিরোধীদের। সবটাই বিজেপির নাটক বলে কটাক্ষ করেছেন।