মনোজিতের অঙ্গুলিহেলনে চলতেন কসবা ল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল, উঠল প্রশ্ন

মনোজিৎ মিশ্রের ভয়ে কি তটস্থ ছিলেন ভাইস প্রিন্সিপাল নয়না চট্টোপাধ্যায়ও, এই প্রশ্নটা এবার সামনে চলেই এলো। কারণ, তদন্তে নেমে এটা স্পষ্ট যে নির্যাতনের সময় কলেজেই উপস্থিত ছিলেন কলেজের  ভাইস প্রিন্সিপাল নয়না চট্টোপাধ্যায়। অ্যাটেনডেন্স রেজিস্টার অন্তত এমনটাই বলছে। এরপর রাত ৯.৫০ মিনিটে কলেজ থেকে বের হন ভাইস প্রিন্সিপাল।

আরও আশ্চর্যের বিষয়, কলেজের রেজিস্টার ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, ঘটনার দিন অর্থাৎ ২৫ জুন সকাল ৯টা ৫০এ তিনি কলেজে ঢোকেন এবং ঠিক সেই সময়েই তিনি কলেজ থেকে বেরিয়ে যান। অন্তত রেজিস্টার তাই বলছে। কিন্তু এখানেই রহস্য। ইন ও আউট টাইম এক হলেও কোথাও সকাল বা বিকেলের উল্লেখ নেই।  আর যদি আউট টাইমটি রাতেরই হয়, তাহলে এটা স্পষ্ট ভাইস প্রিন্সিপাল কি ছাত্রী নির্যাতনের সময় কলেজেই ছিলেন। কারণ, ওই দিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে রাত প্রায় ১১টা পর্যন্ত ছাত্রীটির উপর নির্যাতন চলেছে বলে অভিযোগ। নয়না চট্টোপাধ্যায় আগেই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, তিনি সেদিন বিকেল ৫টা পর্যন্ত ডিনের ঘরে মিটিংয়ে ছিলেন। কিন্তু তার পরে তিনি কলেজে ছিলেন কি না, বা কখন বেরিয়েছেন তা নিয়ে মুখে কুলুপ আঁটেন  তিনি।

এদিকে আবার তিনি এও জানান, ঘটনার দিন কলেজে উপস্থিত থাকলেও এই ঘটনায় কিছু জানতেন না। এমনকি পরের দিন এফআইআর দায়ের হলেও, তাও তিনি নাকি বিষয়টি বুঝতে পারেননি! বরং ৪৮ ঘণ্টা পর, ২৭ জুন কলেজের এক নিরাপত্তারক্ষীর কাছ থেকে বিষয়টি প্রথম শোনেন বলে দাবি করেছেন তিনি।আর এখানেই প্রশ্ন, মনোজিৎ ওরফে ম্যাংগোর কুকীর্তি কি সত্যিই ঘুণাক্ষরেও টের পাননি তিনি?

আরজিকর কাণ্ডের পরে কসবা লকলেজে ছাত্রীর উপর পাশবিক অত্যাচারের ঘটনায় ফের সোচ্চার সমাজের সব শ্রেণির মানুষ। জঘন্য এই কাণ্ডের পর মনোজিৎ মিশ্র নামটা কারও অজানা নয়। এদিকে তদন্তে এও জানা যাচ্ছে, গণধর্ষণের পরেও কোনও হীনমন্যতা ছিল না মনোজিতের মধ্যে। উল্টে বেশ খোশ মেজাজেই ছিল এই মনোজিৎ। কলকাতা পুলিশের তরফে জানা গেছে, এই কাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র এত জঘন্য অপরাধ ঘটানোর পরেও তার সহযোগীদের সাথে ইনস্টিটিউটের গার্ড রুমের ভিতরে মদ্যপান করে যথেষ্ট সময় কাটিয়েছিল।

এরপর গার্ডের ঘরে মদ্যপান করার পর নিরাপত্তারক্ষী পিনাকি বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘটনা সম্পর্কের মুখ বন্ধ রাখার হুমকিও দেয় তারা। মনোজিৎ, প্রমিত মুখোপাধ্যায় ও জায়েব আহমেদ নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যাওয়ার আগে আগে ইএম বাইপাসের একটি ধাবায় রাতের খাবারও খেতে গিয়েছিলেন। এর পাশাপাশি মনোজিৎ এই ঘটনার হাত থেকে বাঁচতে প্রভাবশালীদের পরামর্শ চেয়েছিল বলে জানা গেছে।

শুধু তাই নয়, তদন্তে এও উঠে এসেছে মনোজিৎ রাসবিহারী, দেশপ্রিয় পার্ক, গড়িয়াহাট, ফার্ন রোড এবং বালিগঞ্জ স্টেশন রোড সহ শহরের বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছিল, তা পরামর্শ দাতাদের কাছ থেকে বাঁচার উপায় খুঁজতে। এদিকে এও জানা গেছে, এই জঘন্য কাজের পরিকল্পনা তারা করেছিল আগেই।

প্রসঙ্গত, কসবার এই লকলেজে ম্যাঙ্গোর ওরফে মনোজিতের দাপট প্রশ্নাতীত। কসবার এই ঘটনার পর সাউথ ক্যালকাটা লকলেজে গিয়ে দেখাও যায় দেওয়ালে লেখা রয়েছেমনোজিৎদা ইস ইন আওয়ার হার্ট প্রসঙ্গত, মনোজিতের বাড়ি কালীঘাটে। ২০২২ সালে সাউথ ক্যালকাটা লকলেজ থেকে পাশ করেন। ২০২১২২ সালে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দক্ষিণ কলকাতার জেনালের সেক্রেটারি ছিলেন। কলেজে ভর্তি হন ২০২১২ তে। তবে ২০২২ পর্যন্ত ১০ বছর কলেজই তিনি। আর এখানেই উঠেছে সবথেকে বড় প্রশ্ন। ২০১৭১৮ শিক্ষাবর্ষে রিঅ্যাডমিশন কিভাবে তা নিয়েই।  তবে ঘটনার দিন উপাচার্যের উপস্থিতি প্রশ্ন তুলে দিল পড়ুয়ারা তো বটেই, ভাইস প্রিন্সিপ্যালের উপরেও এই মনোজিৎ চাপ তৈরি করত? তিনিও কি এই মনোজিতের ভয়ে তটস্থ থাকতেন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − three =