নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এখনও রয়েছে কাঁটা

স্কুল সার্ভিস কমিশনের নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আর কোনও বাধা নেই। ২০২৫এ তৈরি করা এসএসসির রুলকেই মান্যতা দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। সব কিছু ঠিক থাকলে সেপ্টেম্বরেই পরীক্ষা হবে বলে সূত্রের খবর। তবে এরই মাঝে কাঁটার মতো বিঁধছে কয়েকটা ইস্যু। আর এই সব ইস্যুকে হাতিয়ার করেই চাকরিহারারা এবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারেন। তাঁদের তরফ থেকে এই সব ইস্যুকে সামনে এনে দাবি করা হচ্ছে, নতুন রুলে এমন অনেক বিষয় আছে, যার জেরে এবার পরীক্ষাতেই বসতে পারবেন নাযোগ্যচাকরিহারারাও।

চালেকাঁকর মিলেমিশে এক হয়ে যাওয়ায় যোগ্যঅযোগ্য সবার চাকরিই বাতিল করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। গত ৩ এপ্রিল যে নির্দেশ দেওয়া হয়, তাতে শিক্ষকশিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী মিলিয়ে প্রায় ২৬০০০ জনের চাকরি বাতিল হয়ে যায়। এর মধ্যে শিক্ষকশিক্ষিকাদের নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে এসএসসি। সেই বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা হলেও শেষ পর্যন্ত আদালত এসএসসিকে ক্লিনচিট দিয়েছে।তারপরও রয়ে গিয়েছে বেশ কিছু জট।

মূলত কয়েকটি বিষয় নিয়ে মামলা হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে। প্রথমত, চিহ্নিত অযোগ্য বাদে বাকিদের বয়সে ছাড় দেওয়া নিয়ে আপত্তি ছিল চাকরিপ্রার্থীদের একাংশের। দ্বিতীয়ত, শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকলে অতিরিক্ত ১০ নম্বর দেওয়ার কথা বলা আছে রুলে। সেটা নিয়েও আপত্তি ওঠে।

এদিকে সুপ্রিম কোর্টের অর্ডারে স্পষ্ট বলা আছে যে, চিহ্নিত অযোগ্য বাদে বাকিদের বয়সে ছাড় দিতে হবে। এসএসসির বিজ্ঞপ্তিতেও সেটা স্পষ্টভাবে লেখা আছে। অন্যদিকে, অতিরিক্ত ১০ নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রেও হাইকোর্ট কোনও আপত্তি জানায়নি। মূলত ২০১৬র প্যানেলে ওয়েটিং লিস্টে থাকা প্রার্থীরা দাবি করেছিলেন, তাঁরা ওই ১০ নম্বর থেকে বঞ্চিত হবেন। তবে রাজ্য তথা এসএসসির যুক্তি ছিল, যে কোনও চাকরিতেই অভিজ্ঞতার দাম দেওয়া হয়। সেই কারণেই ১০ নম্বর দেওয়ার কথা বলেছে সরকার। আর সেই রুলকেই মান্যতা দেয় হাইকোর্ট।

এছাড়াও অন্য একটি মামলায় হাইকোর্টের রায়ে নিয়োগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন চিহ্নিত অযোগ্যরা। নতুন করে নিয়োগের জন্য এসএসসির যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে, সেখানে যোগ্যতা, বয়স, আবেদনের নিয়ম সহ সবটাই উল্লেখ করা আছে। সেই বিজ্ঞপ্তিতে যোগ্য বা অযোগ্যদের কথা উল্লেখ করা নেই। প্রশ্ন ওঠে, এ ক্ষেত্রে চিহ্নিত অযোগ্যরা সুযোগ তো পাবেনই, সেই সঙ্গে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার জন্য ১০ নম্বর গ্রেসও পেয়ে যাবেন। সেই মামলায় রাজ্য ও এসএসসি অযোগ্যদের পাশে দাঁড়িয়ে সওয়াল করলেও হাইকোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দেয় দুর্নীতি করে যাদের চাকরি হয়েছে, তাদের নিয়োগে সুযোগ দেওয়া যায় না।

এদিকে হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, ২০২৫এর রুল অনুযায়ীই পরীক্ষা দেবেন চাকরিপ্রার্থীরা। আর সেই রুলে বলা আছে, শিক্ষাগত যোগ্যতা হল স্নাতকে ৫০ ন্যূনতম শতাংশ। অর্থাৎ ৫০ শতাংশ না পেলে পরীক্ষা বসতে পারবেন না প্রার্থীরা। এদিকে, ২০১৬র রুলে বলা ছিল, ৪৫ শতাংশ পেলেই প্রার্থীরা পরীক্ষায় বসতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে ২০১৬য় যাঁরা যোগ্য হিসেবে চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই এবার আর আবেদন করতে পারবেন না।

এদিকে যাঁরা ২০১৬র রুল অনুযায়ী ৪৬ বা ৪৭ শতাংশ পেয়েই চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এবার বাধা থাকবে। অর্থাৎ যোগ্যতাতেই আটকে যেতে পারেনচাকরিহারা যোগ্যরা এই বিষয়ে হাইকোর্টে সওয়াল করার সুযোগ পাননি বলে দাবি চাকরিহারা শিক্ষক চিন্ময় মণ্ডলের। তিনি জানিয়েছেন, এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে কথা বলবেন তাঁরা।

২০২৫এর রুলে বলা আছে, ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার্স এডুকেশন থেকে অনুমোদনপ্রাপ্ত কোনও প্রতিষ্ঠান থেকে বি এড কোর্স করতে হবে। প্রশ্ন হল, ২০১৬ সালে চাকরি পাওয়া অনেকেই রিহ‍্যাবিলেশন কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া থেকে স্পেশাল বিএড করেছিলেন। এসএসসির নতুন বিজ্ঞপ্তিতে তাদের পরীক্ষায় বসার কথা উল্লেখ নেই। সে ক্ষেত্রে কী হবে, যোগ্য হিসেবে আদৌ তাঁরা বিবেচিত হবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।

এদিকে স্কুল সার্ভিস কমিশনের বক্তব্য, হল কারা চাকরিতে যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে, সেটা রাজ্যই ঠিক করবে। রাজ্য যে প্রার্থীকে সেরা বলে মনে করবে, সেই প্রার্থীকেই নেবে। সেটা ভেবেই এই রুল তৈরি করা হয়েছে। এসএসসির আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘নতুনদের কথাও ভাবতে হবে। পুরনোদের জন্য ১০ নম্বরের ছাড় তো আছেই। নতুনদের মধ্যে থেকেও নিয়োগ করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − four =