‘ওরা ২৬, আমরা ৩৮’, বেঙ্গালুরুর পাল্টা হুঙ্কার দিল্লি থেকে

‘ওরা ২৬, আমরা ৩৮।’ বেঙ্গালুরুর পাল্টা হুঙ্কার এল দিল্লি থেকে। ২০২৪-এর আগে রণকৌশল ঠিক করতে সোমবার থেকে বিজেপি বিরোধী দলগুলি দু’দিনের বৈঠকে বসেছে বেঙ্গালুরুতে।মঙ্গলবার মূল বৈঠক। ২০২৪-এ প্রত্যাবর্তনের রাস্তা খুঁজতে বেঙ্গালুরুতে এক ছাতার তলায় বিজেপি বিরোধী শিবির। এরই মধ্যে সোমবার বিকেলে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা জানান, এনডিএ-র শরিক দলগুলির বৈঠকে যোগ দেবে ৩৮টি দল। জেপি নাড্ডা এদিন এও বলেন,’উন্নয়নের অ্যাজেন্ডার প্রতি সাধারণ মানুষের প্রবল আকাঙ্খার কারণেই এনডিএ আরও প্রসারিত হচ্ছে। গত ন’বছরে মোদিজীর নেতৃত্বে সুশাসন চলেছে। এটা একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।’শুধু তাই নয়, এদিন বেঙ্গালুরুতে সনিয়া গান্ধির বিরোধী শিবিরের প্রতিনিধিদের জন্য আয়োজিত নৈশভোজ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চর্চা চলছে। এর পাল্টা দিয়ে হিসাবে কাল এনডিএ জোটের শরিকদের জন্যও বিশেষ নৈশভোজের ব্যবস্থা করেছে বিজেপি। দলীয় সূত্রের দাবি, প্রধানমন্ত্রী-সহ সরকারের শীর্ষ স্তরের মন্ত্রীদের উপস্থিতিতে এই নৈশভোজও হবে চোখে পড়ার মতো।
তবে নাড্ডার এই দাবি নিয়ে বিরোধীরা কটাক্ষ ছুড়ে দিতে দেরি করেনি। তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের টুইটে বিদ্ধ করে জানান,’বেঙ্গালুরু বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলি যে একটা ন্যারেটিভ তৈরি করছে,সেটা পরিষ্কার। সেজন্যই বিজেপি রিঅ্যাক্ট করছে। ১৮ জুনই ‘৩০ দলের’ বৈঠক ডাকা হয়েছে।’ এরপর শ্লেষের সুরে তিনি পরিসংখ্যান দিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, এনডিএ শরিক বলে যে দলগুলির কথা বলা হচ্ছে, তাদের সঙ্গে নাকি বড় সংখ্যা রয়েছে? আটটি দলের সাংসদ সংখ্যা শূন্য,ন’টি দলের একজন করে এবং তিনটি দলের দু’জন করে সাংসদ রয়েছেন।
রাজনৈতিক চাপানউতোর যাই চলুক না-কেন, একই দিনে কেন্দ্রের শাসক ও বিরোধী–দুই শিবিরের এই মহাবৈঠক যে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ,তাতে সন্দেহ নেই। সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে নাড্ডার এও দাবি করেন,’দেশের আমজনতা বুঝে গিয়েছে, বিরোধীদের এই জোট আসলে ২০ লক্ষ কোটি টাকার দুর্নীতি ঢাকার চেষ্টার জোট। এদের না আছে নীতি,না আছে আদর্শ। আমাদের নীতি স্পষ্ট, ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ।’আর এই লক্ষ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে জোট শরিকরা বিরোধীদের টেক্কা দেওয়ার পথ খুঁজবেন মঙ্গলবারের বৈঠকে। এদিকে এনডিএ শিবিরেও যে সবকিছু মসৃণ রয়েছে,এমনটা নয়। মঙ্গলবারের বৈঠকে ৩৮টি দল হাজির থাকবে বলে দাবি করলেও গেরুয়া শিবিরের নেতাদের কাছে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হলো চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলেগু দেশম এবং পঞ্জাবের শিরোমণি অকালি দলকে পাশে পাওয়া। এনডিএ-র প্রাক্তন শরিক এই দুই দল শেষমেশ জোটে সামিল না হলে গোটা বিষয়টি বিজেপি তথা এনডিএ জোটের গলায় কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এনডিএ-র অপর শরিক লোক জনশক্তি পার্টির মধ্যেও রয়েছে ধোঁয়াশা। এর আগে রামবিলাস পাসোয়ানের পুত্র চিরাগ পাসোয়ান এনডিএ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর কাকা পশুপতি পরস আবার এনডিএ-র সঙ্গে ছিলেন। এদিন শাহের সঙ্গে দেখা করার পরে চিরাগের এনডিএ-তে যোগদানের কথা জানিয়েছেন নাড্ডা। তবে কোন অঙ্কে তিনি বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোটে গেলেন, সেই অঙ্ক এখনও পরিষ্কার নয়। বিজেপি অবশ্য চিরাগ ও পরস শিবিরের মধ্যে ফাঁক বোজাতে মরিয়া। সব মিলিয়ে খুব স্বস্তিতে যে আছে এনডিএ শিবির তা কিন্তু নয়। আর তা সম্য়ক বুঝতে পারছেন নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে অমিত শাহ আর জেপি নাড্ডারাও। ফলে মঙ্গলবার এনডিএ জোট শরিকদের নিয়ে যে বৈঠক হবে নয়াদিল্লির অশোকা হোটেলে, সেখানে ‘২৪-এর গণ্ডি টপকানোর কৌশল হিসাবে কী কী পদক্ষেপ করা হবে আগামী দিনে,তা নিয়েও আলোচন হবে শরিকদের মধ্যে। পুরোনো শরিকদের জোটে ধরে রাখার পাশাপাশি নতুন কয়েকটি দলকে পাশে পাওয়ারও লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে বিজেপি।৷ তা নিয়েও এদিনের বৈঠকে আলোচনা হতে পারে।
এদিকে গেরুয়া শিবির সূত্রের খবর,হিমাচল প্রদেশ,কর্নাটকের মত দু’টি বিধানসভা নির্বাচনে যেভাবে বিজেপি ধরাশায়ী হয়েছে তা থেকে প্রতিষ্ঠান বিরোধী ভোটের প্রভাব নিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মনে আর কোনও সন্দেহ নেই৷ এই মর্মে বিরোধী অধ্যুষিত দক্ষিণ ভারত,পূর্ব ভারত নিয়ে রীতিমতো চিন্তায় বিজেপি। এদিকে আবার চলতি বছরের শেষে নির্ধারিত চারটি বড় রাজ্যের বিধানসভা ভোটও। ছত্তিসগড়, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং তেলঙ্গানার মধ্যে একমাত্র মধ্যপ্রদেশে বিজেপি ক্ষমতায় আছে। সেখানে ক্ষমতা ধরে রাখার পাশাপাশি বাকি তিনটি রাজ্যেও যথাসম্ভব বেশি সিট বের করার রণকৌশলও শরিকদের উপস্থিতিতে মঙ্গলবারের বৈঠকে আলোচিত হতে পারে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা ১৬০টি দুর্বল সাংগঠনিক ভিত্তি সম্পন্ন লোকসভা আসনের কথাও মাথায় রয়েছে মোদি-শাহদের। এই আসনগুলিতে কীভাবে বিরোধীদের প্রতিহত করা হবে, তার উপায় খোঁজাও বিজেপির কাছে বড় চ্যালেঞ্জ৷
এই আবহে বিজেপি বিরোধিতায় বিরোধী শিবিরকে যত বেশি জোটবদ্ধ মনে হচ্ছে,ততই চাপ বাড়ছে বিজেপি তথা এনডিএ জোটের উপরে। সব দিক বিচার করে মঙ্গলবার মোদি কীভাবে বিজেপির জোটসঙ্গীদের সামনে আগামীর রূপরেখা তুলে ধরেন, সেদিকেই এখন তাকিয়ে এনডিএ-র শরিকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × five =