প্যারিস অলিম্পিক্সে পদক জয়ে যাঁদের ঘিরে বেশি প্রত্যাশা

প্য়ারিস অলিম্পিক্স। ১১৭ জন প্রতিনিধিত্ব করছেন ভারতের হয়ে। এঁরা প্রত্যেকে দারুণ কিছু করে দেখাক সেই আশাতেই বুক বেঁধেছেন সবাই। তাও এঁদের মধ্যে বিশেষ করে কয়েকজনের ওপর পদক জয়ে ভরসা করছেন দেশের মানুষ। এই তালিকায় রয়েছেন,

নীরজ চোপড়াঃ দেশের সর্বকালের সেরা অ্যাথলিট হিসেবে নিজের নামটা জোরাল করেছেন নীরজ চোপড়া। অলিম্পিক্সে ভারতের পদক জয়ের অন্যতম দাবিদার গতবারের সোনা জয়ী অলিম্পিয়ান।  টোকিও অলিম্পিক্সে জ্যাভলিন ছুড়ে ভারতকে এনে দিয়েছিলেন ব্য়ক্তিগত দক্ষতায় দ্বিতীয় সোনা। রয়েছেন দুরন্ত ফর্মে। অলিম্পিক্সের পর এশিয়াড, ডায়মন্ড লিগ, বিশ্ব চ্য়াম্পিয়নশপিও দেখেছে নীরজের কামাল। গত মে মাসে জাতীয় সোনাও জিতেছেন। নীরজ আর পদক এখন সমার্থক। প্য়ারিসেও নীরজের ‘বর্শামঙ্গল’ হবে বলেই আশাবাদী ১৪০ কোটির দেশ।

রয়েছেন সিন্ধুও। পরপর দুই অলিম্পিক্সেই পদক! রুপো (রিয়ো ডি জেনেইরো  ২০১৬) ও ব্রোঞ্জ (টোকিয়ো ২০২০) জেতা সিন্ধুর চোখে এখন সোনার চকমকে স্বপ্ন। তিনি সোনা ছাড়া আর কিছুই ভাবছেন না। টানা তৃতীয়বার অলিম্পিক্স পদকজয় লক্ষ্যে দেশের তারকা ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়।  তিনি যদি এবার পদক জিততে পারেন সে ক্ষেত্রে ইতিহাস করবেন তেলেঙ্গনার তরুণী। অলিম্পিক্স হ্য়াটট্রিক ও অধরা সোনাতেই সিন্ধুর চোখ। সিন্ধু প্য়ারিসে পাড়ি জমিয়েছেন নতুন কোচ আগাস স্য়ান্টোসোর সঙ্গে। আর মেন্টর হিসেবে পাচ্ছেন আটের দশকের অল ইংল্য়ান্ড চ্য়াম্পিয়ন প্রকাশ পাড়ুকোনকে।

একইসঙ্গে নাম উঠে আসছে সাত্ত্বিকসাইরাজ ও চিরাগেরও। আজ তাঁরা বিশ্ববন্দিত। ব্যাডমিন্টনে ভারতের এই জুটি এখন বিশ্বের এক নম্বর। মালয়েশিয়ান ওপেন এবং ইন্ডিয়ান ওপেনে হেরে গেলেও পরে ফরাসি ওপেন এবং থাইল্য়ান্ড ওপেনে জেতেন তাঁরা। নিজেদের সেরা ফর্মে খেলতে পারলে এই জুটির থেকে পদকের আশা করতেই পারে ভারত।

নজর রয়েছে পড়শি রাজ্য অসমের গোলাঘাট জেলার বারোমুখিয়া গ্রামের মেয়ে লভলিনা বড়গোহাঁইয়ের ওপরেও। টোকিও অলিম্পিক্সে ভারতের মুখ উজ্জ্বল করেছেন তিনি। মেরি কমের পর দ্বিতীয় মহিলা বক্সার হিসেবে, ভারতকে বক্সিংয়ে পদক দিয়েছেন লভলিনা। বক্সিংয়ে ৬৯ কেজি বিভাগে টোকিয়োতে ভারতকে ব্রোঞ্জ এনে দিয়েছিলেন তিনি। তবে এই বিভাগ আর অলিম্পিক্সে নেই এখন। লভলিনা এখন খেলেন ৭৫ কেজি বিভাগে। গতবছর এই বিভাগে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সোনাও জেতেন তিনি। ফের একবার ভারতকে অলিম্পিক্সে পদক এনে দিতে পারেন লভলিনা।

পাশাপাশি মীরাবাঈয়ের ওপরেও ভরসা রয়েছে অনেকেরই। কারণ, টোকিওতে ৪৯ কেজি বিভাগের ভারোত্তোলনে রুপো জিতেছিলেন মীরাবাঈ। ২১ বছর পর ভারোত্তোলনে ভারতকে অলিম্পিক্স পদক এনে দেন ইম্ফলের মেয়ে। এবারও মীরার উপরেই বাজি অনেকের। কারণ মীরা অলিম্পিক্সের প্রস্তুতি শুরু করেছেন বহু আগেই।

ভরসা রয়েছে ভারতীয় হকি দলের ওপর। কারণ, ভারত অলিম্পিক্সের মঞ্চে মোট আটবার সোনার পদক জিতেছে। টোকিও অলিম্পিক্সে এসেছিল ব্রোঞ্জ। গতবারের চ্যাম্পিয়ন বেলজিয়াম ছাড়াও ভারতের গ্রুপে রয়েছে আর্জেন্টিনা, নিউজিল্যান্ড,অস্ট্রেলিয়া,  আয়ারল্যান্ডের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষ।  গ্রুপ থেকে চারটি দল যাবে পরের রাউন্ডে। গ্রুপের বাধা টপকাতে পারলে ভারতের পদক জয়ের আশা থাকছে বলেই মত হকিমহলের।

নীরজ-সিন্ধুরা ছাড়াও ব্যাডমিন্টনে এ লক্ষ্য সেন, শ্য়ুটিংয়ে মনু ভাকের, বক্সিংয়ে নিখাত জারিন, তীরন্দাজিতে দীপিকা কুমারী, টেবিল টেনিসে মনিকা বাত্রাদের দিকেও আলাদা করে নজর থাকবে। অবশ্যই চোখ থাকবে ২৩ বছরের ভারতীয় সাঁতারু শ্রীহরি নটরাজের দিকে। প্যারিস মহাযুদ্ধে তেরঙা তুলে ধরার গুরুদায়িত্বে রয়েছেন ১১৭ জন (৭০ পুরুষ, ৪৭ মহিলা) ভারতীয় অ্যাথলিট। ৬৯টি ইভেন্টে ৯৫টি পদকের জন্য় লড়াই। তাঁদের সঙ্গে এসেছেন ১৪০ জন সাপোর্ট স্টাফ। ২৫৭ সদস্য়ের টিম রয়েছে  প্যারিসে। টোকিয়ো অলিম্পিক্সে ভারত জিতেছিল ৭টি পদক। যা সর্বাধিক। এবার দেখার ভারত পদকের ডাবল ডিজিট স্পর্শ করতে পারে কিনা!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eight − 7 =