দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ড চতুর্থ দিনের শেষ ২১–০, টার্গেট ৩৭১। অর্থাত্ পঞ্চম দিনে আর করতে হবে ৩৫০ রান। হাতে ১০ উইকেট। এই টার্গেট অনেক বড় হতেই পারতো, তবে হল না ভারতের টেল এন্ডারদের সৌজন্যে।এ দিন ৩৩৩–৪ থেকে ৩৬৪–তে শেষ! অর্থাৎ৩১রানে৬উইকেট। ৩৩৩ রানে ৪ উইকেট যখন ভারতের সেই সময় অনেকেই ভেবেছিলেন ইংল্যান্ডের সামনে বড় রানের পাহাড় তৈরি করতে চলেছে ভারত। কিন্তু সমস্যা তো সেই টেল এন্ডারদের নিয়ে। এ সমস্যা ভারতীয ক্রিকেটের বহুকালের। মাঝে সমস্যার সমাধান কিছুটা হলেও আবার তা ফিরে এসেছে নিজের রূপে। তবে সব মিলিয়ে চমকপ্রদ একটা থ্রিলারের মঞ্চ হেডিংলেতে তৈরি।
এখন যা টার্গেট, তাতে ওভার পিছু ৪ রান করলে অতি সহজেই জয় আসবে ইংল্যান্ডের। টি–২০–র দৌলতে এই রান তাড়া করা বোধহয় খুব কঠিন নয় ইংল্যান্ডের কাছে। এদিকে উইকেট ব্যাটারদের জন্য সমস্যার কারণ এখনও হয়ে ওঠেনি। ক্রিকেটীয় পরিভাষায় পিচ ভাঙা বলতে যা বোঝায় তার বিন্দুমাত্র নজরে আসেনি চতুর্থ দিনের শেষেও। ফলে ভারতীয় ক্রিকেটদলের সদস্যরা আজ কতটা নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবেন তা ওপরওয়ালাই জানেন। এদিকে ভারতীয় বোলিংয়ের হতশ্রী দশাটা ফুটে উঠল চতুর্থ দিনের শেষেও। ছন্নছাড়া প্রসিধ কৃষ্ণ আর দিশাহীন শার্দূল ঠাকুর। একা বুমরা কুম্ভ হয়ে কতটা ভারতের গড় রক্ষা করতে পারবে তা বলা এই মুহূর্তে কঠিন। তাঁকেই দাযিত্ব নিয়ে বিপক্ষের ব্যাটারদের শিরদাঁড়ায় শিহরণ বইয়ে দিতে হবে এমনটা প্রতিদিন সম্ভব কি না তা নিয়েও বড় প্রশ্ন রয়েছে।
এবার আসা যাক প্রথম ইনিংসের পরিসংখানে। সিরাজ আর প্রসিধ মিলে প্রথম ইনিংসে ৪৭ ওভার বোলিংয়ে দিয়েছিলেন ২৫০ রান। আর উইকেট পেয়েছেন দুজনে মিলে পাঁচটা। প্রসিধের উইকেটগুলো এসেছে শর্ট বলে। অর্থাত, এগুলো ব্যাটারদের ছুড়ে দেওয়া উইকেট। অন্যদিকে বড় মাথাব্যথার কারণ শার্দূল। য়েন ব্যাটিং তেমনই বোলিংয়ে হতশ্রী অবস্থা। ইতিমধ্যেই সামজমাধ্যমে ট্রোল হওয়া শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, কার হাত মাথার ওপর আছে এই শার্দূলের। ফলে এই দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁকে প্রমাণ করতেই হবে, ৬ ওভার বোলিং করার জন্য তাঁকে ভারতীয় দলে নেওয়া হয়নি।
ভারতের পক্ষে পজিটিভ বলতে অপ্রতিরোধ্য বুমরা। যাঁকে নিয়ে ইংল্যান্ড আতঙ্কে থাকতে বাধ্য। আর চতুর্থ ইনিংসে ৩৭১ রানটাও খুব একটা কম নয়। হেডিংলের ইতিহাসে একবারই ৪০৪–৩ তুলে জিতেছিল ব্র্যাডম্যানের অস্ট্রেলিয়া। এটা ১৯৪৮ সালের ঘটনা। তারপর ৩৬২। এবার ৩৭১ তাড়া করে জিততে পারলে সেকেন্ড বেস্ট হবে। এতোগুলো নেগেটিভ কথা বলা হল ভারতকে নিয়ে। তবে এই চারদিনে বিরাট–রোহিতহীন ভারতীয় ব্যাটিং লাইন আপে প্রথম টেস্টেই পাঁচটা সেঞ্চুরি মোটেই কম পাওয়া নয়। ঋষভের দুটো, যশস্বী, শুভমান আর রাহুলের একটা।নতুন জমানায় শুভমান ক্যাপ্টেন হিসেবে প্রথম টেস্টটা জিততে পারলে নতুন দিনের আলো দেখবে ভারতীয় ক্রিকেট।
চতুর্থ দিনের প্রথম দুটো সেশন অবশ্যই ভারতের। শুরুতে শুভমানের উইকেট পড়লেও ৯২–৩ থেকে শুরু হয় এক পাল্টা প্রতিরোধের লড়াই। একদিকে ধরে খেলতে থাকেন বর্তমান প্রজন্মের টেস্ট ব্যাটিংয়ের সংযমের প্রতিমূর্তি কেএল রাহুল। অন্যদিকে নিজের ডিফেন্সে ভরসা রাখা ঋষভ পন্থ। এর নিট ফল, প্রথম ঘন্টায় মাত্র ২৫ রান, দ্বিতীয় ঘণ্টায় ৩৮ রান। সকালের সেশনে রাহুল–ঋষভ জুটি চাপটা নিয়েছেন। রান বাড়ানো বোধহয় লক্ষ্য ছিল না। লক্ষ্য ছিল উইকেটে টিকে থাকা। যা করলে রান পরে আসতে বাধ্য। এরপর দ্বিতীয় সেশনে ইংল্যান্ড দেখল ঋষভ পন্থের তাণ্ডব। অবিশ্বাস্য সব ব্যাকরণ বহির্ভূত শট যেমন আছড়ে পড়েছে বাউন্ডারির বাইরে ছিক তেমনই প্রয়োজনে করেছেন ডিফেন্স। এককথায় জমাট।
ঋষভ ধ্বংস ও সৃষ্টির যোগফলে ১৪৮ বছরের টেস্ট ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয় কিপার হিসেবে দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করে তৈরি করলেন বিশ্ব ক্রিকেটে এক মাইলস্টোন। ওপেনার রাহুল প্রথম ইনিংসেও ভালো শুরু করেছিলেন, কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর ব্যাটিং প্রায়শই মনে করিয়ে দিয়েছে ২০১১–১২ সালের সিরিজ়ের রাহুল দ্রাবিড়কে। ২৪৭ বলে খেলা ১৩৭ রানের ইনিংসে একটাই ভুল শট। সৌভাগ্যক্রমে ক্যাচটা ফেলেন হ্যারি ব্রুক। রাহুলের এই ফর্মে টিম ম্যানেজমেন্টকে অনেক স্বস্তিতে রাখবে এটা প্রায় চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায়। তবে ভারতীয় থিঙ্ক ট্যাঙ্ককে এবার ভাবতেই হবে টেল এন্ডারদের নিয়ে। দুটো ইনিংসেই খুব খারাপ পারফর্ম্যান্স। ছয় নম্বরে করুণ খারাপ খেলছিলেন না, তবে ওকসের বলে কট অ্যান্ড বোল্ড, উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসা ছাড়া অন্য কোনও বাক্যবন্ধ ব্যবহার করা যাচ্ছে না।