ডেঙ্গির সচেতনতার প্রচারে গিয়ে কলকাতা পুর নিগমের মেয়র পারিষদ তথা কাউন্সিলর তারক সিং সপাটে চড় কষালেন বেহালার স্থানীয় বাসিন্দাকে। কেন জল জমছে এই প্রশ্নের সদুত্তর না পেয়ে আর মেজাজ ধরে রাখতে পারেননি মেয়র পারিষদ। সপাটে চড় মারেন এই যুবককে। এই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসতেই প্রত্যাশিতভাবে নিন্দার ঝড় উঠেছে। সেই ঝড়ের মুখে স্বয়ং তারক সিং-এর সাফাই, ‘সপাট বলাটা বন্ধ করুন। মশলা লাগাবেন না। চড় মেরেছি ঠিক আছে।’
উল্লেখ্য, বর্ষাকাল পড়তেই লাগাতার ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। জেলাগুলিতো রয়েছেই, পাশাপাশি কলকাতাও পিছিয়ে নেই। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। শনিবার ডেঙ্গি রোধে বিভিন্ন জায়গায় সচেতনতামূলক প্রচার চলছিল। এ দিন, ১১৮ নম্বর ওয়ার্ড অর্থাৎ নিজের ওয়ার্ড ঘুরে দেখেন তারক সিং। এলাকায় অবস্থিত নির্মীয়মান বাড়িগুলির অবস্থা কী। সেখানে জঞ্জাল জমে রয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখছিলেন তিনি। সঙ্গে যাঁরা ঠিকাকর্মী ছিলেন তাঁদেরও বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন যাতে এলাকায় জল জমে না থাকে। এরপর একটি নির্মীয়মাণ বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন একাধিক জায়গায় জল জমে রয়েছে। সেখানে উপস্থিত ঠিকা কর্মীদের প্রশ্ন করেন, ‘কেন জল জমে রয়েছে?’ তখন উত্তর দিতে গিয়ে একজন সিকিউরিটি গার্ড বলেন, ‘বৃষ্টি হয়েছে। সেই কারণে জল জমেছে। রোদ উঠলেই শুকিয়ে যাবে।’ এই উত্তর শুনে মেজাজ হারান মেয়র পারিষদ। সপাটে ওই ঠিকা কর্মীকে চড় মারেন তিনি। বলেন যে, এই ধরনের ঘটনা পরবর্তীকালে দেখা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর প্রেক্ষিতে জবাব দিতে গিয়ে তারকবাবু জানান, ‘ওইখানে জল জমে। বারবার বলার পরও শোনে না। আটটা লোক মারা গিয়েছে কলকাতায়। তবুও কেউ কথা শুনছে না।’ নিজের হাতে আইন কেন তুলে নিলেন সেই প্রসঙ্গে মেয়র পারিষদের বক্তব্য, ‘আমি যদি অপরাধ করে থাকি ওই লোকটাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে মামলা করুন আমার নামে। লোক মরে যাচ্ছে, আপনারা সমালোচনা করবেন। মেয়রের পদত্যাগ চাইবেন। কাউকে বারণ করলে শুনবে না আমরা খালি ফাইন করে চুপ করে বসে থাকব। মেয়র পারিষদ তো মানুষ? একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত গার্জেনের কাজ চড় মারা।’
এই ঘটনার কড়া নিন্দা করে সিপিএম নেতা চন্দন ভট্টাচার্য জানান, ‘কড়া ভাষায় নিন্দা করলাম। পুরকর্মীদের নিরাপত্তাহীনভাবে করতে হয়। এই জল জমার দায় কী করে এই ছেলেটির হয়? অবিলম্বে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’ এই প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা সজল ঘোষ জানান, ‘ওই বাড়িটি থেকে মনে তোলাবাজির টাকা পাননি তারকবাবু। সেই কারণে রেগে গিয়ে ঝিকে মরে বৌ-কে শিক্ষা দিতে চেয়েছেন। একজন গরীব মানুষকে চড় মারছে। আরে চড় মারার ইচ্ছা থাকলে নিজের গালে মারুন। নিজের বাড়ির ছেলেমেয়ে সকলেই কাউন্সিলর। ওনাদের মারুন।’