অবশেষে শনিবার চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসছেন রাজীব সিনহা। যেখানে স্বয়ং রাজ্যপাল নজিরবিহীন ভাষায় সমালোচনা করেছেন, সামনে এসেছে একাধিক মামলা, এমনকী কলকাতা হাইকোর্টের একাধিক বিচারপতি তাঁর সম্পর্কে চোখা-চোখা মন্তব্য করেছেন। ঘটনা এমন জায়াগাতেও পৌঁছায় যে, প্রধান বিচারপতিও মন্তব্য করে বসেন, কমিশনারের উপর কোনও ‘চাপ’ থাকলে তিনি ইস্তফা দিতে পারেন!সেই সব পেরিয়ে এবার কার্যত অগ্নিপরীক্ষার সামনেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা।
জুন মাসের ৭ তারিখে রাজ্যের নির্বাচন কমিশনার পদে শপথ নিয়েছিলেন রাজীব। লোকসভা ভোটের এক বছর আগে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ পঞ্চায়েত ভোট সামলানোর দায়িত্ব কাকে দেওয়া যায়, তা নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের মধ্যে বিস্তর আলোচনা হয়। দু’তিনটি নাম নিয়ে জল্পনা হচ্ছিল। প্রশাসন তাঁর নাম ঠিক করলেও গোড়াতে জট পেকেছিল রাজীবকে নিয়ে। নবান্ন থেকে পাঠানো তাঁর নামে অনুমোদন করছিলে না রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। সেই পর্বে রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের চেয়ার কয়েক দিন ফাঁকাও ছিল। তখন থেকেই নবান্ন-রাজভবনের সংঘাতের বাতাবরণও তৈরি হয়। যে গ্রাফ পরবর্তীকালে শুধু ঊর্ধ্বমুখীই হতে দেখা গেছে।
দায়িত্ব নেওয়ার পরের দিনই রাজ্যের ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করে দেন রাজীব। সেই সূচিতে বলা হয়, পর দিন অর্থাৎ ৯ জুন থেকে মনোনয়ন জমা দেওয়া যাবে। মনোনয়ন পর্ব চলবে ১৫ জুন পর্যন্ত। তখন থেকেই বিরোধীরা রুষ্ট ছিলেন। তারই জেরে কমিশনে শুরু হয় বিক্ষোভ, অবস্থান, স্লোগান। এরই পাশাপাশি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীরা আদালতের দ্বারস্থ হন। সেই মামলার শুনানিতে রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং কমিশনারকে বিঁধে কড়া কড়া মন্তব্য করতে শোনা যায় হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চকে। এরপর গত এক মাসে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে পঞ্চায়েত ভোট সংক্রান্ত বিবাদ এবং সংঘর্ষে। তবে তথ্য বলছে, গত এক মাসে যা যা ঘটেছে, তাতে এটা স্পষ্ট যে, কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে হাই কোর্টের নির্দেশ মানতে ‘বাধ্য’ হওয়া ছাড়া আর প্রায় কোনও কিছুতেই কমিশনের ভাবনা বা সিদ্ধান্তের বদল ঘটাতে হয়নি রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিবকে। এর মধ্য়ে রাজীবকে আপোস করতে হয়েছে একটা ক্ষেত্রেই, পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা।
গত এক মাসে রাজীব যা যা নির্দেশ দিয়েছিলেন, সেগুলি থেকেও তাঁকে পিছু হটতে দেখা যায়নি। বিরোধীদের মামলার অন্যতম আর্জি ছিল, মনোনয়নের সময়সীমা বাড়াতে হবে। কিন্তু তা হয়নি। কমিশনের দেওয়া সময়সীমাই বহাল থেকেছে। এমনকী ভাঙড়ের ঘটনাতেও এখনও কমিশনের সিদ্ধান্তই সঠিক বলে জানানো হয়েছে আদালত থেকে। তবে শুনানি এখনও বাকি।
এরপর আসে ভোটের দফা নিয়েও মামলা হয়। বিরোধীরা আর্জি জানিয়েছিলেন, পঞ্চায়েত ভোট কয়েক দফায় ভেঙে দেওয়া হোক। কিন্তু শুনানির শেষে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ বিবিধ পর্যবেক্ষণ জানালেও নির্দেশনামায় বলেছে, ক’দফায় ভোট হবে, তা ঠিক করার এক্তিয়ার একমাত্র নির্বাচন কমিশনেরই রয়েছে। সেখানে আদালত কিছু ‘পরামর্শ’ দিতে পারে। কিন্তু কমিশনের কাজে নাক গলাতে পারে না।
এখানেই রাজনৈতিক নেতাদের ধারনা, কেন্দ্রীয় বাহিনী সংক্রান্ত নির্দেশ বাদ দিয়ে সে ভাবে আর কোনও বিষয়েই রাজ্য নির্বাচন কমিশন তথা কমিশনারকে বড় ধাক্কা খেতে হয়নি।
তবে রাজীবের পরীক্ষা শনিবারেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না। আগামী মঙ্গলবার ভোটের গণনা। ব্যালট পেপারে ভোট হওয়ায় গণনা এক দিনেই শেষ হওয়া দুষ্কর। ফলে ফলপ্রকাশ পর্যন্ত রাজীব থাকবেন বিরোধীদের স্ক্যানারেই।