আজ সকাল থেকেই হুগলি নামে একটি শক্তিশালী নদীর তলা দিয়ে চললো মেট্রো। নদীর তলা দিয়ে মেট্রোর এই যাত্রা ভারতে প্রথম। আর ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর এই য়াত্রার মধ্যে দিয়ে যোগ হবে হাওড়া ময়দান এবং এসপ্ল্যানেড। এই প্রসঙ্গে কলকাতা মেট্রোর তরফ থেকে আগেই জানানো হয়েছিল যে, এটি আমাদের সকলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং এক গর্বের মুহূর্ত হতে চলেছে।
একইসঙ্গে কলকাতা মেট্রোর তরফ থেকে এও জানানো হয় যে, ‘সিটি অফ জয়’ এই মুহূর্তটির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে৷ কলকাতা মেট্রোর তরফ থেকে এও আশা করা হচ্ছে যে, প্রথম দিন থেকেই এই মেট্রোতে প্রচুর লোক সমাগম হবে। কারণ সাধারণ মানুষ নদীর তলা দিয়ে মেট্রো সফরের এই অভিজ্ঞতাকে নিজের মানসপটে বন্দি করে রাখতে চায়। এখানে বলে রাখা শ্রেয়, হাওড়া ময়দান থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত চারটি স্টেশন রয়েছে। যার মধ্য়ে পড়ছে হাওড়া ময়দান, হাওড়া, মহাকরণ এবং এসপ্ল্যানেড। এই প্রসঙ্গে কলকাতা মেট্রোর তরফ থেকে এও জানানো হয়েছে যে, হাওড়া স্টেশন দেশের গভীরতম মেট্রো স্টেশনগুলির মধ্যে একটি।যা হাওড়া স্টেশনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ফলে পূর্ব রেলওয়ের পাশাপাশি দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ের যাত্রীদের স্বপ্নপূরণ করতে চলেছে৷ এরই পাশাপাশি মেট্রো তরফ থেকে এও জানানো হয়েছে যে, হুগলি নদীর তলদেশে ৫২০-মিটার প্রসারিত মেট্রোর এই ট্র্যাক তৈরি করা হয়েছে মাত্র ৬৬ দিনে। যা এক রেকর্ড বলেই জানানো হয়েছে কলকাতা মেট্রোর তরফ থেকে। সঙ্গে এও জানানো হয়েছে যে, নদীর তলদেশের টানেলগুলি (পূর্ব-বাউন্ড এবং পশ্চিম-বাউন্ড) বিশেষভাবে আলোকিত করা হয়েছে এবং একইসঙ্গে জলজ প্রাণীর ছবিও আঁকা হয়েছে যাতে যাত্রীরা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারে যে রেকটি নদীর অংশের নিচ দিয়ে যাচ্ছে। এই প্রসঙ্গে কলকাতা মেট্রোর তরফ থেকে এও জানানো হয়েছে, এসপ্ল্যানেড থেকে হাওড়া পর্যন্ত প্রসারিত মেট্রোয় সোমবার থেকে শনিবার ১২ থেকে ১৫ মিনিটের ব্যবধানে পরিষেবা পাওয়া যাবে। সঙ্গে এও জানানো হয়েছে, হাওড়া ময়দান এবং এসপ্ল্যানেড থেকে শেষ পরিষেবা ছাড়বে রাত ২১টা ৪৫ মিনিটে। তবে রবিবার কোন পরিষেবা থাকবে না।
শুধু এসপ্ল্যানেড থেকে হাওড়া ময়দান-ই নয়, এর সাথে অরেঞ্জ লাইনের কবি সুভাষ থেকে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় প্রসারিত মেট্রোর বাণিজ্যিক পরিষেবাগুলিও আজ সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়েছে। এই লাইনে শেষ মেট্রো মিলবে বিকেল ৪টে ৪০ মিনিটে। সোমবার থেকে শুক্রবার ২০ মিনিটের ব্যবধানে মিলবে মেট্রো। শনি ও রবিবার কোনো পরিষেবা থাকবে না।
এরই পাশাপাশি এদিন পার্পল লাইন মেট্রো পরিষেবাও আজ থেকেই শুরু হল। কলকাতা মেট্রো সূত্রে খবর, জোকা থেকে মাঝেরহাট প্রথম বাণিজ্যিক পরিষেবা শুরু হবে সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে এবং মাঝেরহাট থেকে জোকা সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটে। শেষ পরিষেবা জোকা স্টেশন থেকে মিলবে বিকেল ৩টে ১০ মিনিটে এবং মাঝেরহাট থেকে বিকেল ৩টে ৩৫ মিনিটে। শনি ও রবিবারে পার্পল লাইনে কোনও পরিষেবা উপলব্ধ থাকবে না৷
একইসঙ্গে কলকাতা মেট্রোর তরফ থেকে এও জানানো হয়েছে, মেট্রো কাউন্টার থেকে এই সমস্ত নতুন রুটের জন্য শুধুমাত্র টোকেন এবং স্মার্ট কার্ড পাওয়া যাবে। পাশাপাশি এও জানানো হয়েছে, এই নতুন মেট্রো স্টেশনগুলিতে কোনও হুইল চেয়ার সুবিধা পাওয়া যাবে না। যাত্রীদের ১০ কেজি বেশি কোনও মাল না বহন করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে মেট্রো রেলের তরফ থেকে।কারণ, এতে সহযাত্রীর অসুবিধা হতে পারে বলেই মনে করছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ।
একইসঙ্গে মেট্রোর তরফ থেকে এও জানানো হয়েছে যে, এই ইতিহাসের সাক্ষী হতে আগ্রহী লক্ষাধিক যাত্রীর প্রত্যাশা পূরণের জন্য মেট্রোর তরফ থেকে যথাপোযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আমজনতার প্রত্যাশা পূরণ প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থাও ইতিমধ্যেই নেওয়া হয়েছে কলকাতা মেট্রোর তরফ থেকে৷ আর যে কোনও জরুরি অবস্থা সামাল দিতে মেট্রো কর্মীদের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি পরীক্ষা করার জন্য বৃহস্পতিবার এক মক ফায়ার ইভাকুয়েশন ড্রিলও করা হয়৷কলকাতা মেট্রো সূত্রে খবর, এদিন বিকেলে বর্ষীয়ান এবং বরিষ্ঠ মেট্রো আধিকারিকদের উপস্থিতিতে গ্রিন লাইনের এসপ্ল্যানেড এবং মহাকরণ স্টেশনগুলির পাশাপাশি অরেঞ্জ লাইনের কবি সুভাষ এবং সত্যজিৎ রায় স্টেশনগুলির মধ্যে এই মহড়াগুলি পরিচালিত হয়। একই সঙ্গে মেট্রো কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে এও জানানো হয় যে এই দিনটির জন্য মেট্রো তার মঞ্চ প্রস্তুত করে ফেলেছে। একইসঙ্গে মেট্রো কর্তৃপক্ষ আশাবাদী, শুক্রবার কলকাতা মেট্রোর ইতিহাসে আরও একটি ‘রেড লেটার ডে’ যুক্ত হতে চলেছে। আর সেটাই বাস্তবে হলো।