কলকাতার রাস্তায় বাস নেই বললেই চলে। আর যেগুলো চলছে, সেগুলোতে আবার ভাড়ার ঠিক নেই। অন্তত তেমনটাই বলছেন যাত্রীরা। সরকার বলছে এক, নেওয়া হচ্ছে আর এক। যার ফলে ভোগান্তি সাধারণ মানুষের। একই সমস্যা ক্যাবকে নিয়েও। আর এখানেই জনসাধারণের প্রশ্ন, বাস বা ক্যাবের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই কেন তা নিয়েও।
এই প্রসঙ্গে বলে রাখা শ্রেয়, গত বছর একটি মামলার ভিত্তিতে কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দেয় বেসরকারি বাসে ভাড়ার তালিকা হবে। সে নির্দেশ কারযকর হওয়া তো দূর-অস্ত বরং যাত্রীদের অভিযোগ, কলকাতা ও শহরতলির কোনও বেসরকারি বাস, মিনিবাসে ভাড়ার তালিকা তো নেইই। কনডাক্টরদের মর্জি মাফিক ভাড়া দিতে হয়। অভিযোগ এমনও উঠছে, সরকার নয়, ভাড়া বাড়ানোর মালিক আসলে বাস মালিক কিংবা ইউনিয়নের নেতা। তেমনই তো বলছেন কন্ডাক্টর থেকে ড্রাইভাররা।
লকডাউনের আগে বেসরকারি বাস, মিনিবাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ৭ টাকা ছিল। আর লকডাউনের পর বাসে উঠলেই অন্তত ১০ টাকা ভাড়া।
৬ বছর আগে ভাড়া খাতায় কলমে বাড়ানো হলেও, নিঃশব্দে বেড়ে গিয়েছে বাস ভাড়া। সেখানে বাসের কোথাও রেট চার্ট নেই। বাস চালক থেকে কনডাক্টর, সবাই মানছেন, সরকার ভাড়া না বাড়ালেও বেসরকারি বাস মালিকদের সংগঠন ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়িয়েছে। যাত্রীরাও বলছেন, উঠলেই দিতে হয় ১০ টাকা। অথচ কোনও চার্ট দেখাতে পারছেন না বাসকর্মীরা।
এদিকে বাস ভাড়া নিয়ে মালিকদের সঙ্গে সরকারের একটার পর বৈঠক হয়, আর সমাধানসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। জয়েন্ট কাউন্সিলর অব বাস সিন্ডিকেটের নেতা তপন বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে জানান, ‘ডিজেল তো এখন ১০০ টাকা লিটার। চলবে কী করে! সরকার ভাড়া বৃদ্ধি করে দিক। সরকারের তো গাড়ি রয়েছে। সে তো ভর্তুকি দিয়ে গাড়ি চালায়। আমাদের তো তা নেই। আমরা পরিষেবা দেব, ঘর থেকে টাকা এনে গাড়ি চালাব, তা তো হতে পারে না।’
অন্যদিকে, সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিসেসের সাধারণ সম্পাদক টিটো সাহা জানান, ‘একটা বাস চালাতে গিয়ে অপারেশনাল কস্ট বেড়ে যাচ্ছে দু থেকে আড়াই হাজার টাকা। এই টাকা কোথা থেকে আসবে? রাজ্য সরকার ভাড়া বৃদ্ধির ব্যাপারটাকে উপেক্ষিত করে রেখেছে। বাসকে রাস্তায় রাখতে গিয়ে আমাদের অনুদানের সুযোগ নিতে হয়েছে। মানুষ তা মেনে নিয়েছে বলেই শেষ ২-৩ বছর ধরে রাস্তায় বাস চলছে।’
পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, “বারবার বলা হয়েছে রেট চার্ট ঝোলানোর জন্য। বারবার সরকার নির্ধারিত ভাড়াতেই চলতে বলা হয়। অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে অভিযোগ আমাদের কাছে খবর এলে ব্যবস্থা নেব।’