২০২২-এর ডিসেম্বরের ভূপতিনগর বিস্ফোরণের ঘটনায় শনিবার দুজনকে গ্রেফতার করল এনআইএ। ধৃতদের নাম বলাই চরণ মাইতি ও মনোব্রত জানা। এই দুজনকে গ্রেফতার করতে গিয়েই বাধার মুখে পড়তে হয় কেন্দ্রীয় সংস্থাকে। বিক্ষোভের মুখে পড়ে আহতও হন এক আধিকারিক। শনিবার ভোরের এই ঘটনা নিয়ে এবার বিবৃতি প্রকাশ করা হয় ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি বা এনআইএ-এর তরফ থেকে। সেখানেই তারা উল্লেখ করেছে, যে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁরা বিস্ফোরণ তথা বোমা বাধার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন।
বিবৃতিতে এনআইএ জানিয়েছে, বলাই চরণ মাইতি ও মনোব্রত জানাকে গ্রেফতার করা হয়েছে ভূপতিনগর থেকে। মোট ৫ জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়েছিল। মনোব্রত জানার বাড়িতে যেতেই গ্রামবাসীরা বিক্ষোভ দেখান বলেও অভিযোগ। এই বিক্ষোভের ঘটনা প্রসঙ্গে এনআইএ-র তরফ থেকে জানানো হয়েছে, সংস্থার গাড়ি ভাঙা হয়েছে, একজন আধিকারিক আহত হয়েছেন। তাঁরা যাতে গ্রেফতার করতে না পারেন, সেই চেষ্টা করা হয়েছিল বলেও উল্লেখ করেছে এনআইএ। প্রসঙ্গত, ২০২২-এর ডিসেম্বরে ভূপতিনগরের বিস্ফোরণের ঘটনায় ৩ জনের মৃত্যু হয়। হাইকোর্টের নির্দেশে ঘটনার তদন্তভার পায় এনআইএ। সেই সূত্র ধরেই এদিন তল্লাশি শুরু করে কেন্দ্রীয় সংস্থা।
এদিকে পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরে ২০২২ সালের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় এনআইএ-র অভিযান এবং তৃণমূলের অঞ্চল ও বুথ সভাপতিকে গ্রেফতার করা নিয়ে রায়গঞ্জের সভা থেকে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে শনিবার আক্রমণ করতে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাঁর দাবি, ভোটের মুখে এলাকায় তৃণমূলের সংগঠনকে দুর্বল করে দিতেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকার চক্রান্ত করে এজেন্সিকে দিয়ে এই কাজ করাচ্ছে। জয় নিয়ে নিশ্চিত থাকলে কেন তৃণমূল কর্মীদের গ্রেফতার করাতে হচ্ছে, এদিন ফের সেই প্রশ্নও তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। নাম না করে ‘গদ্দার’ বলে আক্রমণ করেন শুভেন্দু অধিকারীকেও।
এনআইএ প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘মধ্যরাতে কেন লোকের বাড়িতে ঢুকে গ্রেফতার করেছে? অচেনা লোকজনকে মাঝরাতে দেখলে এলাকার মা-বোনেরা যা করার, তাই করেছেন।’ উল্লেখ্য, ভূপতিনগরে গিয়ে স্থানীয়দের বাধার সম্মুখীন হতে হয় কেন্দ্রীয় আধিকারিকদের। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে সরাসরি স্থানীয়দের এই বাধা দেওয়াকে সঠিক কাজ বলেই জানান মমতা। এরই পাশাপাশি বিজেপির উদ্দেশে একপ্রকার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে মমতা এও জানান, ‘ভোটের আগে আমাদের বুথ এজেন্টদের গ্রেফতার করে নেওয়া হচ্ছে। ভোটের প্রচারের কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে। আমিও চ্যালেঞ্জ করছি, যাঁদের গ্রেফতার করেছে, তাঁদের পরিবারের সদস্যদের, মা বোনেদের আমি এজেন্ট করব। আমাদের আটকাতে পারবে না।’ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কর্তাদের উদ্দেশেও বার্তা দিয়ে মমতা জানান, ‘চকলেট বোমা ফাটালেও এনআইএ চলে আসছে। আরশোলা, ছারপোকা কামড়ালেও মানবাধিকার কমিশনকে পাঠাচ্ছে। আমরা সব নজরে রাখছি। ভুলে যাচ্ছি না। যে অফিসারেরা এটা করছেন, আমি কাউকে ভয় দেখাচ্ছি না, বিজেপি কিন্তু সারাজীবন থাকবে না।’