বিএ, বিএসসি, বি-কম, বিই, বি-টেক কোর্সে র্যাগিং তো ছিলই, এখন এমবিবিএস পাঠ্যক্রমও পিছিয়ে নেই এতটুকু। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি জানিয়েছে, সারা দেশে যত র্যাগিংয়ের ঘটনা নথিভুক্ত হয়, তার মধ্যে ৩০ শতাংশ ঘটনা ঘটে মেডিক্যাল কলেজেই। ফলে, সম্প্রতি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ কিংবা এনআরএসে ওঠা র্যাগিংয়ের অভিযোগ যে নিছকই বিচ্ছিন্ন নয় তা বোঝা যাচ্ছে ইউজিসি-র রিপোর্টেই।
যাদের হাতে আগামী দিনে ন্যস্ত হবে আমজনতার সুস্থতা সেই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই এমন গুরুতর অভিযোগ ওঠাকে ভালো চোখে দেখছে না স্বাস্থ্য মহলের একটা বড় অংশই। অথচ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কড়া হাতে র্যাগিং দমন করতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের অবস্থান বেশ কঠোর অনেক দিন ধরেই। এর জন্য সব মেডিক্যাল কলেজে রয়েছে অ্যান্টি-র্যাগিং সেল। ডিন অফ স্টুডেন্টস অ্যাফেয়ার পদমর্যাদার অধ্যাপকের নেতৃত্বে কমিটি আছে যারা সর্বোচ্চ তিন মাসের ব্যবধানে একবার অন্তত বৈঠকে বসে। তবে তাতেও কাজের কাজ যে খুব একটা কিছু হয়েছে তা বলা যাবে না। মডার্ন মেডিসিনের চিকিৎসা-শিক্ষা বিষয়ক দেশের নিয়ামক সংস্থা ন্যাশান্যাল মেডিক্যাল কমিশন (এনএমসি)-এর জাতীয় টাস্ক ফোর্স মারফত র্যাগিং সংক্রান্ত যাবতী তথ্য জমা হয় ইউজিসি-র পোর্টালে। তার তথ্য বিশ্লেষণ করেই ৩০ শতাংশ ঘটনা মেডিক্যাল কলেজে ঘটছে বলে শুক্রবার এনএমসি-র টাস্ক ফোর্সের বৈঠকের পর জানিয়েছেন ইউজিসি-র প্রতিনিধি অলকা তোমার। এদিনের বৈঠকে র্যাগিংয়ের জেরে আত্মহত্যার ঘটনার কথাও আলোচিত হয়। এই প্রসঙ্গে অলকা জানান, দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র্যাগিং নির্মূল করতে ২০০৯ সালে কড়া নিয়ম চালু হয়। মূলত তিনটি বিষয়ে জোর দেয় ইউজিসি। প্রথমত, র্যাগিংয়ের অভিযোগ গ্রহণ করা। দ্বিতীয়ত, ভর্তির সময়েই পড়ুয়াদের হলফনামা দিয়ে জানানো যে তাঁরা কোনও ভাবেই র্যাগিংয়ে অংশ নেবেন না এবং র্যাগিংয়ের কথা জানতে পারলে পোর্টালে অথবা কর্তৃপক্ষের গোচরে আনা। আর তৃতীয়ত, র্যাগিং বিরোধী সব নিয়ম মেনে চলা।
র্যাগিং সইতে না পেরে আত্মহত্যা প্রসঙ্গে অলকা বলেন, ‘একটি মৃত্যুও মেনে নেওয়া যায় না। যদি এমন কোনও ঘটনা ঘটে, তা হলে মানতেই হবে যে সিস্টেমের মধ্যেই গলদ রয়েছে।’ তিনি জানান, ইউজিসি-র ২৪ ঘণ্টার হেল্পলাইন রয়েছে যেখানে পরিচয় গোপন রেখেও অভিযোগ জানানো যায়। অভিযোগ জমা পড়ার আধঘণ্টার মধ্যে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট কলেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়।