তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বক্তব্য শেষ করতেই বিরোধিতা আসে সরকার পক্ষ থেকে। তৃণমূল সাংসদকে কটাক্ষ করেছেন কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডিও। তাঁর মতে, অভিষেক যে সকল অভিযোগ করেছেন, তা পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে এই কথাগুলি খাটে না।
এদিন লোকসভায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একটি ‘নড়বড়ে এবং দুর্বল’ জোট সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। শিগগিরই ভেঙে পড়বে এই সরকার। তাই, এই বাজেট শুধুমাত্র দুটি রাজ্যের স্বার্থ রক্ষা করার চেষ্টা করেছে। দেশের অন্যান্য নাগরিকদের উপেক্ষা করা হয়েছে। নির্মলা সীতারামনের এবারের বাজেট ‘জনবিরোধী’ এবং এনডিএ-র জোট শরিকদের ‘তুষ্ট’ করার লক্ষ্যেই এটা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। অভিষেক এদিন স্পষ্টই জানান, ‘এই বাজেটের কোনও দিশা নেই, কোনও অ্যাজেন্ডা নেই। সাধারণ মানুষের জন্য কোনও স্বস্তি নেই এবং বাজেটে দেশের ১৪০ কোটি মানুষকে অবহেলা করা হয়েছে।’
‘বাজেট’ শব্দটির ভাব সম্প্রসারন করে তিনি বলেন, বি মানে বিশ্বাসঘাতকতা, ইউ মানে বেকারত্ব, ডি মানে বঞ্চনা, জি হল সরকারের গ্যারান্টি যা তারা রক্ষা করতে পারে না, ই হল খামখেয়ালিপনা আর টি হল ট্র্যাজেডির প্রতীক। অভিষেক বলেন, এনডিএ সরকারের আমলে নাগরিক, কৃষক, গৃহবধূ, দিনমজুর এবং আরও অনেক সম্প্রদায়ের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, পাশপাশি পরিবারগুলির সঞ্চয় কমেছে। ঋণের বোঝা বেড়েছে। তৃণমূল নেতা বলেন, ‘এটা প্রান্তিক জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।’ এর পাশাপাশি তিনি আরও দাবি করেন, লোকসভা, রাজ্যসভায় বিজেপির একজনও মুসলিম সাংসদ নেই। এর থেকেই স্পষ্ট এই দলে বৈচিত্র্যের অভাব রয়েছে। তিনি আরও দাবি করেন, বিজেপি যুবকদের প্রতি বছর ২ কোটি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। শুধু তাই নয়, পশ্চিমবঙ্গ এবং দেশের অন্যান্য অনেক রাজ্যকে মোদি সরকার মনরেগা, আবাসন প্রকল্প সহ বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেছে। তিনি অভিযোগ করেন, ‘আপনারা পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিকভাবে আমাদের হারাতে পারেননি বলে, এখন রাজ্যের জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। কেন্দ্রীয় সরকার যে গ্যারান্টিগুলি দিয়েছে তা পূরণ করতে পারেনি। কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াই, সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা, দরিদ্রদের বিনামূল্যে বাড়ি দেওয়া – সব গ্যারান্টিই ফাঁপা বলে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি দাবি করেন, অপরিকল্পিতভাবে লকডাউন জারি, কৃষি আইন এবং নোট বাতিলের মতো মোদী সরকারের খামখেয়ালি সিদ্ধান্তে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন। যা অর্থনীতিতে হতাশা তৈরি করেছে। মণিপুরের জাতি-হিংসা চলছে। কিন্তু, এই ট্র্যাজেডির কথা নেই বাজেটে।’
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বক্তৃতার পরই, ওই প্রতিক্রিয়া দেন কয়লা মন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি। তবে তিনি একাই নন, ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সম্পাদকের বক্তৃতার আরও বিরূপ প্রতিক্রিয়া আসে। বিজেপি সাংসদ বাঁশুরি স্বরাজ দাবি করেছেন, বক্তৃতায় তিনটি আপত্তিকর এবং অসংসদীয় শব্দ ব্যবহার করেছেন অভিষেক। এর জন্য তাঁর ক্ষমা চাওয়া উচিত। বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন জানিয়েছেন লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা।