শুক্রবার রথযাত্রা। আর এই রথযাত্রা উপলক্ষে শহরে খিদিরপুরের শ্রী জগন্নাথ সেবা সমিতির সাংস্কৃতিক শাখা, উৎকলা, ‘রথযাত্রা এবং ওড়িশা ফেস্টিভ্যাল ২০২৫‘ মহাউৎসব উৎযাপনের কথা ঘোষণা করা হল। প্রত্যেক বছরের মতো এ বছরও এই রথযাত্রা উৎসব পালিত হবে একটি জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে, যেখানে তুলে ধরা হবে ওডিশার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।আর তারই জন্য একাধিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে খিদিরপুরের শ্রী জগন্নাথ সেবা সমিতির সাংস্কৃতিক শাখা, উৎকলা।
কলকাতা প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ ব্যাপারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে, শ্রী জগন্নাথ সেবা সমিতি, খিদিরপুরের সভাপতি শ্রী চন্দ্রশেখর পানিগ্রাহী জানান, ‘এই উৎসবটি কেবল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানই নয়, তার চেয়েও বেশি কিছু। এই অনুষ্ঠান আদতে ওড়িশার কালজয়ী সংস্কৃতি এবং আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের উদযাপন। উৎকলা সবসময়েই শিল্প, ঐতিহ্য এবং ভক্তির মাধ্যমে সম্প্রদায়গুলিকে একত্রিত করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে। আর সেই কারণেইআমরা সকলকে এই রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে একটি ঐশ্বরিক অভিজ্ঞতার বাতাবণ তৈরির জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’
শ্রী জগন্নাথ সেবা সমিতি, খিদিরপুরের উপদেষ্টা রেণুকা রথের উদ্যোগে, উৎকলা ৩০শে জুন ‘শ্রী জগন্নাথ ইজ দি ট্র্রু অস্মিতা অফ কনশাসনেস’ শীর্ষক একটি সেমিনারের আয়োজন করছে। এই বছর সেমিনারে ওড়িশা এবং বাংলার বিশিষ্ট বক্তারা উপস্থিত থাকবেন। এর পাশাপাশি ‘গার্ডিয়ানস অফ দ্য টেন ডিরেকশনস’ নামে একটি বই প্রকাশিত হবে। এই বইটিতে শ্রী জগন্নাথ মন্দির কর্তৃক প্রণীত এক উদ্বোধনী সংকলন, যেখানে দশজন বিশিষ্ট ওড়িয়া লেখকের ত্রিশটি নির্বাচিত গল্প রয়েছে। এঁদের মধ্যে ফকির মোহন সেনাপতি এবং মনোজ দাসের মতো সাহিত্যিক আইকনও রয়েছেন। এই বইটি ওড়িয়া থেকে ইংরেজিতে অনূদিত। ফলে এটি ওড়িয়া সাহিত্যকে বৃহত্তর, অ–ওড়িয়া ভাষাভাষী পাঠকদের কাছে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য একটি বিশাল পদক্ষেপ তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
একইসঙ্গে এদিন রথযাত্রার অনুষ্ঠান সম্পর্কে বলতে গিয়ে উৎকলার তরফ থেকে জানানো হয়, ২৭ জুন থেকে শুরু হবে রথযাত্রার বর্ণাঢ্য রোড শো । যেটি হবে খিদিরপুর জগন্নাথ মন্দির থেকে ভবানীপুরের নর্দার্ন পার্ক পর্যন্ত। আর এখানেই দেবতারা ৫ জুলাই পর্যন্ত অবস্থান করবেন। রোড শোতে কীর্তন মণ্ডলী, ঘন্টা, শঙ্খ ,বদন, পরিবেশনা করবেন যার স্পনসর করেছে EZCC। এটি পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং ভারত সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার বিভাগ এর অধীনে ।
এর পাশাপাশি ওড়িশা ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধন করবেন প্রতিবন্ধী অধিকার কর্মী এবং জাতীয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার কমিটির সদস্য ডঃ শ্রুতি মহাপাত্র। সাত দিনব্যাপী এই উৎসবেও থাকবে বেশ কিছু পরিবেশনা। দর্শনার্থীরা এই অনুষ্ঠানে ওড়িশার হস্তশিল্পের এক ঝলকও উপভোগ করতে পারবেন। ২০০৩ সাল থেকে প্রতি বছর শিল্প ও সংস্কৃতিতে অসামান্য অবদানের জন্য প্রদত্ত উৎকলা সম্মান, এ বছর লেখক ও গবেষক শ্রী গৌরাঙ্গ চরণ দাসকে প্রদান করা হবে।
ওডিশা ফেস্টিভ্যাল সম্পর্কে বিশদভাবে গুরু প্রসাদ পট্টনায়েক, সভাপতি, উৎকলা জানান, ‘ভগবান জগন্নাথের বার্ষিক রথযাত্রার সাথে মিল রেখে, তাঁর ভ্রমণ শুরু হওয়ার দিন থেকে তাঁর আবাসে ফিরে আসা পর্যন্ত ‘ওড়িশা ফেস্টিভ্যাল ’ নামে একটি উৎসব অনুষ্ঠিত হয় যাতে কলকাতায় ওড়িশার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কিছু ঝলক দেখা যায়।’ সাত দিনব্যাপী ওড়িশা উৎসবে ওডিশা নৃত্য পরিবেশনা, নৃত্য ও বসার স্থান ও অঙ্কন প্রতিযোগিতা, ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গের খ্যাতিমান শিল্পীদের ভজন সন্ধ্যা, ভগবান জগন্নাথের উপর সেমিনার, ওডিশা সরকার কর্তৃক আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রাবণ ছায়া, অদিতি মুন্সি ও দল কর্তৃক পরিবেশিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ওড়িশা কর্তৃক আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
এই উপলক্ষে খিদিরপুর জগন্নাথ মন্দির কর্তৃক ‘ শ্রী জগন্নাথ ইন বেঙ্গলি আইজ ’ নামে একটি বইও প্রকাশিত হবে। প্রখ্যাত ওড়িশি নৃত্যশিল্পী পদ্মশ্রী দুর্গা চরণ রণবীর ও ট্রুপ, মীরা দাস, গুঞ্জন ড্যান্স একাডেমি, ভজন গায়ক রবীন্দ্র মহাপাত্র, অদিতি মুন্সি, লোপিতা বেহেরা ওডিশা ফেস্টিভ্যালে পরিবেশন করবেন। এর পাশাপাশি, জগন্নাথের রান্নাঘরের স্বাদ, মুখরোচক খাবার, সম্বলপুরী ও কটকি কাপড়ের জটিল বোনা কাপড় এবং অনবদ্য ওড়িশা হস্তশিল্পের কাজও দেখতে পাওয়া যাবে। এর পাশাপাশি থাকছে শিশুদের জন্য বিশেষ অনুষ্ঠান। তাঁদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য, ২৯ জুন ২০২৫ (রবিবার) ভেন্যুতে নাচ, বসা ও আঁকা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। এছাড়াও ঐতিহ্যবাহী রন্ধনপ্রণালীর দক্ষতা প্রদর্শনের জন্য, অত্যন্ত জনপ্রিয় ক্ষিরী পিঠা প্রতিযোগিতা ৪ জুলাই ২০২৫ (শুক্রবার) আয়োজনকরাহবে।
এদিনের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কলকাতা পৌরসংস্থার ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের মাননীয় কাউন্সিলর অসীম বসু জানান, ‘নর্দার্ন পার্কে প্রভুর উপস্থিতি এই স্থানটিকে একটি আধ্যাত্মিক অভয়ারণ্যে রূপান্তরিত করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষকে ভক্তি, উদযাপন এবং সম্প্রীতির মাধ্যমে একত্রিত করে। এই ওয়ার্ডের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে, আমি এমন উদ্যোগগুলিকে সমর্থন এবং উৎসাহিত করতে পেরে গর্বিত যা বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যকে উৎসাহিত করে এবং আমাদের ভাগ করা সাংস্কৃতিক মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখে। আমি জগন্নাথ সেবা সমিতি এবং উৎকলার কাছে তাদের উদ্যোগের জন্য কৃতজ্ঞ এবং কলকাতার সকল বাসিন্দাকে এই ঐশ্বরিক উদযাপন প্রত্যক্ষ করার এবং অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’
এদিনের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শ্রী জগন্নাথ সেবা সমিতি, খিদিরপুর জগন্নাথ মন্দিরের সহ–সভাপতি পরশুরাম বিশয়ী, প্রমোদ কুমার জেনা, সেক্রেটারি, শ্রী জগন্নাথ সেবা সমিতি, কিদারপুর জগন্নাথ মন্দির, সরোজ মল্লিক, সেক্রেটারি, উৎকলা।