প্রাকৃতিক রূপ বদলের মতো রাজনৈতিক আবহাওয়ায় বদলাচ্ছে পাহাড়ের।অধীর চৌধুরীর হাত ধরে কংগ্রেসে যোগ দিলেন বিনয় তামাং। ফলে, লোকসভা নির্বাচনের আগে পাহাড়ে কংগ্রেসের শক্তি এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে গেল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই। সূত্রে খবর, রবিবার কালিম্পংয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীর হাত ধরে কংগ্রেসে যোগ দেন তিনি।
রবিবার যোগদানের পর বিনয় জানান, তিনি যখন তৃণমূলে ছিলেন, তাঁর হাত-পা বাঁধা ছিল। কাজ করতে পারছিলেন না ঠিক ভাবে। পাহাড়বাসীর উন্নয়নের স্বার্থেই তিনি কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। বিনয় আরও বলেন, ‘পাহাড় থেকে তিন বার বিজেপিকে জিতিয়েছিলাম। বিজেপি কোনও কাজ করেনি। তাই এ বার কংগ্রেসে যোগ দিলাম। আশা করি, কংগ্রেস আমাকে পাহাড়বাসীর জন্য কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ দেবে।’
এদিনের দল বদলের পর তিনটি রাজনৈতিক দলেই ঘোরা হল বিনয়ের। এক সময় পাহাড়ে সুবাস ঘিসিংয়ের হাত ধরে জিএনএলএফ এবং পরে বিমলের সঙ্গে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা তৈরি করেছিলেন এই নেতা। পরে বছরখানেকের জন্য তৃণমূলেও নাম লিখিয়েছিলেন। কিন্তু বিনয়ের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, পাহাড়ের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভাল ছিল না। শেষে হামরো পার্টির প্রধান অজয় এডওয়ার্ড, বিমলের সঙ্গে নতুন করে নানা কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে দলের থেকে দূরত্ব বাড়িয়ে ফেলেন বিনয়। এরপর গত বছর ডিসেম্বর মাসে দার্জিলিং পুরসভার অনাস্থা ভোটের পরে তিনি দলই ছাড়েন। তিনি জিটিএ-র নির্বাচিত সদস্য। তৃণমূল কংগ্রেসের হয়েই তিনি জিটিএ নির্বাচনে লড়েওছিলেন। এরপর গত ডিসেম্বরেই তিনি তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়েন। শাসক তৃণমূলের সঙ্গত্যাগের পিছনে তাঁর দাবি ছিল, দলে যোগদানের সময় পাহাড়বাসীর জমির পাট্টার বন্দোবস্ত করার আশ্বাস দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। তাঁর আরও অভিযোগ, পাহাড়ের ‘পরিবেশ’, ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা’ ঠিক রাখার ব্যাপারেও তৃণমূল নেতৃত্বকে জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁরা বিষয়টি নিয়ে একেবারেই চিন্তিত ছিলেন না। এরপর গত বছরের শেষের দিকে দার্জিলিং পুরসভায় ক্ষমতার হাতবদল হতেই জোট বাঁধার সলতে পাকানো শুরু করেছিলেন পাহাড়ের নেতারা। বিনয়, অজয় এবং বিমলেরা পাহাড়ে গণতন্ত্র ফেরানোর দাবিতে এক সঙ্গে হাঁটা শুরু করেন। পরে তাতে যোগ দেয় বিজেপিও। পরে সেখান থেকেও নিজেকে একটু একটু করে সরে যেতে থাকেন বিনয়। এরপর থেকে তিনি কোন দলে যোগ দেবেন, তা নিয়ে প্রায় এক বছর ধরে জল্পনা চলেছে। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসেরই হাত ধরলেন তিনি। সব দিক থেকে বিচার করলে রাজনৈতিক দিক থেকে চতুর্থ ইনিংস খেলতে নামলেন বিনয়।
তবে বিনয়ের এই যোগদানের ফলে পাহাড়ের রাজনৈতিক সমীকরণ অনেকটাই বদলে যেতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিনয়ের যোগদান প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা সৌম্য আইচ রায় বলেন, ‘পাহাড়ের মানুষ বুঝেছেন, তাঁদের অধিকার ও দাবির লড়াইয়ের কংগ্রেস একমাত্র রাজনৈতিক শক্তি। বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তৃণমূলের থেকে কংগ্রেস বেশি বিশ্বাসযোগ্য। আগামী লোকসভা ভোটে এর প্রভাব পড়বে।’
রবিবার কালিম্পংয়ের টাউন হলে কংগ্রেসের এক কর্মসূচি ছিল। সেখানেই কংগ্রেসে যোগ দেন বিনয়। সভায় জন আন্দোলন পার্চির নেতা তথা প্রাক্তন মোর্চা নেতা হড়কা বাহাদুর ছেত্রীও উপস্থিত ছিলেন বলে সূত্রে খবর। এমন খবরও শোনা যাচ্ছে, তিনিও খুব শিগগিরই কংগ্রেসে যোগ দিতে পরেন। এদিকে পাহাড়ে এই মুহূর্তে কংগ্রেসের কোনও শক্তিই নেই বললেই চলে।এই অবস্থায় বিনয় তামাংয়ের যোগদানে পাহাড়ে অন্তত কংগ্রেসের পতাকা ধরার অন্তত কেউ থাকল। এদিকে রাজনাতিক বিশ্লেষকদের একাংসের মতে বিনয় তামাং বা হড়কা বাহাদুর ছেত্রী – কারোরই পাহাড়ের রাজনীতিতে এই মুহূর্তে বিশেষ প্রাসঙ্গিকতা নেই।ফলে সব মিলিয়ে কংগ্রেস কতটা লাভবান হবে সেই নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।