গম্ভীর ফিরতেই কেকেআর আবার চ্যাম্পিয়ন। আর অন্যদিকে ইডেনে হার, প্লে অফে হার, ফাইনালে হার— বৃত্ত সম্পূর্ণ হল কামিন্সদের।কেকেআরে প্রথম দিন পা রেখেই চেন্নাই চলোর ডাক দিয়েছিলেন গৌতম গম্ভীর। কেকেআরের মেন্টর খুব ভালো করেই জানতেন, টিমকে যদি ট্রফি দিতে হয়, রাসেল-নারিনকে ফর্মে থাকতে হবে। টিমের দুই ক্যারিবিয়ান তারকা এই আইপিএলে সেরা পারফরম্যান্স দিয়ে গেলেন। দু’জনেই ঝুলি ভরিয়েছেন উইকেটে। দু’জনেই রানের খাতায় রেখেছেন বড়সড় ছাপ। হায়দরাবাদ নাকি এই আইপিএলের সবচেয়ে বিস্ফোরক টিম। যাকে-তাকে, যখন-তখন মাঠের বাইরে ফেলে দেয়। কেকেআর ব্যতিক্রম। শুরু থেকে শেষ যদি ধরা হয়, প্যাট কামিন্সের টিম একবারও নারিন-রাসেলকে সামলাতেই পারেননি। ফাইনালেও ব্যতিক্রম হল না। বল হাতে নারিন এবং রাসেল প্রতিপক্ষকে মাটি ধরিয়ে দিলেন।
রবিবার টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদের অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। লক্ষ্য ছিল কেকেআরকে বড় টার্গেট দেওয়া। চেন্নাইয়ের এমএ চিদম্বরম স্টেডিয়ামে টস জিতে যখন প্য়াট কামিন্স ব্য়াট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তখনই অনেকে মনে করেছিলেন যে, এসআরএইচ এক ধাপ এগিয়েই গেল ফাইনালে। কারণ আইপিএলের ইতিহাস বলছে, এদিনের আগে পর্যন্ত মোট ৮২বার আইপিএলের খেলা হয়েছে চিপকে। প্রথমে ব্যাট করা দল ৪৭ বার জিতেছে। ৩৫ বার জয় পেয়েছে পরে ব্যাট করা টিম। তা আর হল কই! আইপিএল ফাইনালের ইতিহাসে সর্বনিম্ন রান এতদিন ছিল ১২৫। যা হয়েছিল ২০১৩ সালে। সে বার মুম্বই ইন্ডিয়ান্স এবং চেন্নাই সুপার কিংস ম্যাচে সিএসকে ৯ উইকেটে ১২৫ রান তুলেছিল। এ বার সেই রেকর্ড ভেঙে গেল। স্টার্ক-রাসেলদের দাপুটে বোলিংয়ের সুবাদে ১১৩ রানেই গুটিয়ে গেল হায়দরাবাদ।
এদিন কেকেআরের দাপুটে বোলিংয়ে অরেঞ্জ আর্মির অবস্থা বেশ শোচনীয় হয়ে পড়েছিল। পাওয়ার প্লের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে হায়দরাবাদ। প্রথম কোয়ালিফায়ার ম্যাচের মতো ফাইনালেও কেকেআরের হয়ে উইকেটের সূচনা করেন মিচেল স্টার্ক। এরপর বৈভব আরোরা, আন্দ্রে রাসেল, হর্ষিত রানারা একের পর এক উইকেট তুলে নিয়ে অরেঞ্জ আর্মিকে মাত করে দেন। হায়দরাবাদের টপ অর্ডারে এইডেন মার্কব়্যাম (২০) ছাড়া আর কেউ দাগই কাটতে পারেননি। ২ রানে ফেরেন অভিষেক শর্মা। তাঁর উইকেট গিয়েছে স্টার্কের ঝুলিতে। হেডকে শূন্যে ফেরান বৈভব। এরপর রাহুল ত্রিপাঠীর (৯) উইকেট ঝুলিতে ভরেন স্টার্ক। পাওয়ার প্লে-র পরের ওভারে বার্থ ডে বয় নীতীশ কুমার রেড্ডিকে (১৩) ডাগআউটে পাঠান হর্ষিত রানা। নিয়মিত ব্যবধানে এক এক করে উইকেট হারাতে থাকে হায়দরাবাদ। অরেঞ্জ আর্মির গত ম্যাচের নায়ক শাহবাজ আহমেদকে (৮) ফেরান বরুণ চক্রবর্তী। ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে নামা আব্দুল সামাদ ফাইনালে কোনও ছাপ রাখতে পারেননি। আন্দ্রে রাসেল তুলে নেন সামাদের (৪) উইকেট। শেষ অবধি ক্যাপ্টেন কামিন্স কিছুটা লড়াই করেন। না হলে ১০০-র বেশি রান স্কোরবোর্ডে তুলতে পারত না হায়দরাবাদ। ১৯ বলে ২৪ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন হায়দরাবাদের ক্যাপ্টেন প্যাট কামিন্স। সেই সুবাদে হায়দরাবাদ পৌঁছায় ১১৩ রানে। ১৮.৩ ওভারে এই রান তুলে অল আউট হয় সানরাইজার্স।
১১৩ রান তাড়া করতে কেকেআর নিল মাত্র ১০.৩ ওভার। কেকেআর ব্য়াটাররা ঠিকই করে নিয়েছিলেন যে দ্রুত খেলা শেষ করে সেলিব্রেশন শুরু করে দিতে হবে। রহমানুল্লাহ ও সুনীল নারিন ওপেন করতে নেমেছিলেন। তবে নারিন মাত্র ছয় রান করেই ফিরে যান। কিন্তু রহমানুল্লাহ (৩২ বলে ৩৯) ও ভেঙ্কটেশ আইয়ার (২৬ বলে অপরাজিত ৫২) মিলেই যা করার করে দেন। রহমানুল্লাহ ফেরার পর ভেঙ্কটেশ আইয়ার (৩ বলে ৬) নেমে বাকি কাজটা করে দেন। আট উইকেটে হায়দরাবাদকে হারিয়ে কেকেআর তৃতীয়বারের মতো আইপিএল চ্যাম্পিয়ান হল।
কেকেআরএ-র ব্যর্থতার দশক কাটানোর রাত শেষ করে জন্ম দিল উৎসবের। এর রেশ অনেকদিন থাকবে। হয়তো তিন পুরনো বন্ধুও (পড়ুন নারিন, রাসেল, গম্ভীর) হয়তো থাকবেন। শুধু বদলে যাবে ভূমিকা।