প্রায় দু’দশক আগে যে বামিয়ানের বুদ্ধ মূর্তি উড়িয়ে দিয়েছিল তালিবানরা এবার সেখানেই টিকিট কেটে দেখার ব্যবস্থা করল আফগানিস্তানের শাসকরা। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, বামিয়ানের ওই এলাকায় একটি টিকিট ঘর তৈরি করেছেন তালিবান শাসকরা। ওই এলাকায় ঢুকতে আফগান নাগরিকদের ৫৮ সেন্ট দিয়ে টিকিট কাটতে হবে আর বিদেশিদের দিতে হবে ৩.৪৫ মার্কিন ডলার। যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২৮২ টাকা।
বামিয়ানের ওই এলাকায় কেন হঠাৎ টিকিটের ব্যবস্থা করল তালিবান তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের দাবি, বর্তমানে চরম আর্থিক সংকটে ভুগছে আফগানিস্তান। এই অবস্থায় পর্যটনকে গুরুত্ব দিয়ে আর্থিক ভাবে কিছুটা লাভের মুখ দেখতে চাইছে তালিবান। এছাড়া আরও একটি কারণ রয়েছে। প্রায় প্রায় দু’বছর হল আফগানিস্তানের ক্ষমতায় রয়েছে তারা। কিন্তু আমেরিকা-সহ অধিকাংশ পশ্চিমী দেশ এখনও তাদের স্বীকৃতি দেয়নি। ফলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক স্থাপন বা ব্যবসা-বাণিজ্যের থেকে চরম সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই অবস্থায় নিজের মানবিক মুখ তুলে ধরার মরিয়া চেষ্টা করছে তালিবান শাসকরা।
প্রসঙ্গত, ২০০১-এ বামিয়ানের ওই বুদ্ধ মূর্তি ধ্বংসের কথা ঘোষণা করেন তালিবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমর। গোটা বিশ্বের থেকে এই নিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়। যদিও তাতে মন গলেনি তালিবানের। বিস্ফোরক দিয়ে বামিয়ানের অতিকায় বুদ্ধ মূর্তি উড়িয়ে দেয় তারা।
এদিকে এই নয়া সিদ্ধান্তে প্রসঙ্গে তালিবানের ডেপুটি সংস্কৃতি মন্ত্রী আতিকুল্লা আজিজ জানান, ‘আমাদের কাছে বামিয়ান ও বৌদ্ধ সংস্কৃতির গুরুত্ব রয়েছে। সেই কারণেই এক হাজারের বেশি গার্ড বামিয়ানে মোতায়েন করা হয়েছে। আফগানিস্তানের সংস্কৃতি রক্ষা করতে আমরা বদ্ধপরিকর।’ উল্লেখ্য, গত মাসে কাবুলের জাতীয় সংগ্রহশালায় বৌদ্ধ সংস্কৃতির একটি গ্যালারির উদ্বোধন করা হয়। সেই অনুষ্ঠানেও উপস্থিত ছিলেন তালিবান সরকারের এক শীর্ষ আধিকারিক। এদিকে ঠিক উল্টো সুর বামিয়ানের প্রাদেশিক গভর্নর আবদুল্লাহ সারহাদির গলায়। তিনি মূর্তি উড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে ভালো বলে উল্লেখ করেন। তাঁর কথায়, ‘পর্যটকদের ঘোরার অন্য জায়গাগুলিতে নিয়ে যাওয়া উচিত। কারণের ভেবে চিন্তেই মূর্তি উড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।’
এদিকে এই সিদ্ধান্তে জঙ্গি হানার সিঁদুরে মেঘ দেখছেন অনেকেই।কারণ, আফগানিস্তানে তালিবান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিভিন্ন সময় হামলা চালিয়েছে আইএস খোরাসান। পর্যটকদের জন্য বামিয়ানের পুরাতাত্ত্বিক জায়গা খুলে দেওয়া হলে বড় হামলা করতে পারে এই জঙ্গি সংগঠন।