হাওয়ায় একটা খবর ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল তৃণমূলে যাচ্ছেন দিলীপ। তবে এর পাশে এটাও কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল বড় দায়িত্ব দিয়ে তাঁকে রাখা হবে দলেই। আবার অনেকে বলছিলেন তাঁকে নাকি পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আবার কখনও শোনা গেছে নতুন দল গড়ছেন দিলীপ। এরই মাঝে মঙ্গলবার দীর্ঘ কয়েক বছর পরে সল্টলেকের বিজেপি সদর দফতরে পা রাখেন বঙ্গ বিজেপির দাবাং নেতা দিলীপ ঘোষ৷ এরপর দিন বুধবারই ড়ে যেতে দেখা গেল দিল্লির উদ্দেশে৷ যাওয়ার আগেও দিল্লি যাত্রার কার্য–কারণ নিয়ে রেখে গেলেন ধোঁয়াশা৷ তবে যাওযার আগে কটাক্ষ করে গেলেন যাঁরা একুশের মঞ্চে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা ছড়িযেছিলেন। এই প্রসঙ্গে বলে গেলেন, ‘সেই বন্ধুরা খুব কষ্টে আছে যারা আমাকে তৃণমূল কংগ্রেসে পাঠিয়ে দিয়েছিল। যারা নতুন অন্য পার্টির নাম দিয়ে আমাকে তার নেতা বানিয়ে দিয়েছিল। তাদের কাল থেকে কি ভাবে চলে দেখি। কাল রাত থেকে তারা মিটিং করেছে এইবার কি ফান্ডা বের করা যায়। গল্প তৈরি করে করে তারা মাথা খারাপ করে ফেলছেন৷ গল্প তৈরি করে করে তারা ক্লান্ত৷’
তবে নতুন সভাপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পরদিনই দিল্লি উড়ে যাওয়ার আগে নাম না করে সুকান্ত মজুমদারকে বিঁধতে দেখা গেল দিলীপ ঘোষকে। স্পষ্ট বললেন, ‘২০২১ সাল থেকে গুরুত্ব কমানো শুরু হয়েছে। আমার সময়ে কেউ বলতে পারবেন না বঞ্চিত হয়েছেন। এবার দলের পরিবেশ পজেটিভ হবে।’ তবে এরও আগে বুধবার সকালে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন দিলীপ। তখনই তিনি জানান, ‘পুরনোদের গুরুত্ব সবসময়ই থাকবে। রাখা উচিত। কারণ তাঁরা রক্ত–ঘাম দিয়ে পার্টি দাঁড় করিয়েছে। অনেক ত্যাগ করেছে।’এরপরই তাঁর সংযোজন, ‘পার্টি যখন ক্ষমতার কাছাকাছি আসে তখন বহু লোক এসে যায়। সবাই আদর্শ নিয়ে আসে এমনটা নয়। বিভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে আসে। পরিবেশটা পজেটিভ তৈরি করতে হবে। আমার মনে হয় সেটা হয়ে যাবে এবার।’ সঙ্গে এও জানান, ‘দলের সঙ্গে আমার দেওয়া নেওয়া সম্পর্ক নয়। রাজনীতি কারোর কাছে প্রফেশন। কারোর কাছে অকুপেশন। আমার কাছে মিশন। আমি কিছু দিতে এসেছি। পার্টি দায়িত্ব দিয়েছিল। আমি পালন করেছি মাত্র। ২৬ আমাদের কাছে একটা মাইলস্টোন। আমাদের সেটা পার করতে হবে।’
এর পাশাপাশি আদি–নব্যের য়ে অলিখিত এক সংঘাত তৈরি হয়েছে বঙ্গ বিজেপিতে সেই প্রসঙ্গে দিলী এদিন এও বলেন, ‘নতুন পুরোনোদের সবসময় গুরুত্ব থাকা উচিত। কারণ তারাই রক্ত দিয়ে ঘাম দিয়ে স্যাক্রিফাইস করে পার্টিকে দাঁড় করিয়েছেন। পার্টি ক্ষমতার কাছাকাছি এলে বহু লোক এসে জুটে যায়। সবাই আদর্শ নিয়ে আসে না। বিভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে আসে। তাই নিতে হবে সবাইকে। পরিবেশ পজিটিভ করতে হবে।’ বিশেষত নব্য বলে যাঁরা এই মুহূর্তে পরিচিত তাঁদের সম্পর্কে দিলীপ জানান,’এদের তো আমিই এনেছি। আমার সময়তেই এরা এসেছে। কেউ বলতে পারবে আমি কাউকে বঞ্চিত করেছি? দিলীপ ঘোষ যখন মনে করেছে, দলে আমার গুরুত্ব নেই, আমি সরে গেছি। যখন ডাকা হয়েছে তখন আমি গেছি।’ এরই রেশ ধরে দিলীপ এও বলেন, ‘পার্টি এখন সিনিয়র লোককে সভাপতি করেছে। তিনি নতুন পুরোনো মিলিয়ে কাজ করতে চাইছেন। এগোতে চাইছেন। আমি সঙ্গে আছি।’ এরপর খুব স্বাভাবিক ভাবেই উঠে আসে ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচন এবং ২০২১–এর বিধানসভা নির্বাচন প্রসঙ্গ। ২০১৯–এ এই দিলীপ ঘোষের হাত ধরেই বাংলায় ১৮ টা সিট পেয়েছিল বিজেপি। যা দেখে দিল্লির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও ২০২১– বাংলায় এসে সুর উচ্চগ্রামে তুলে বলে গিযেছিলেন বাংলার কুর্সি এবার দখল করবেই বিজেপি। বাস্তবে দেখা যায়, বিজেপির প্রাপ্ত সিট তিন অঙ্কও ছোঁয়নি। রথ থেমে গেছে তার অনেক আগে, ৭৭–এ।আর এই প্রসঙ্গেই দিলীপ ঘোষ এও জানান, প্রাপ্ত সিটের সঙ্গে আরও ১০০ সিট চেয়েছেন দলের কর্মীরা। আর এখানেই দিলীপ ঘোষ প্রত্যয়ের সঙ্গে জানান, ‘আমরা লড়াই করে এইটা পার্টিকে পাইয়ে দেব।’ তবে দিল্লি উড়ান ধরার আগে এটুকুই জানা গেছে, পার্টির বড় নেতা তাঁকে ডেকেছেন তাই তিনি যাচ্ছেন।তবে কে ডেকেছেন তা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেই রাখেন দিলীপ।