পশ্চিমবঙ্গ সরকার গ্লোবাল ক্যাপাবিলিটি সেন্টার (জিসিসি) এবং সেমিকন্ডাক্টরে নিয়ে আসছে নয়া নীতি, জানালেন মন্ত্রী বাবুল

বৃহস্পতিবার কলকাতায় সিআইআই ইস্টার্ন রিজিয়নের উদ্যোগে আইসিটি ইস্টএর ২৩তম সংস্করণের আয়োজন করা হয়। এদিনের এই অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিক্স দপ্তরের মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলিতে রাজ্য সরকার গ্লোবাল ক্যাপাবিলিটি সেন্টার (জিসিসি) এবং সেমিকন্ডাক্টর নিয়ে নীতি নিয়ে আসছে, যা পশ্চিমবঙ্গকে ভারতের পরবর্তী তথ্যপ্রযুক্তি গন্তব্য হিসাবে পরগণিত করবে।

এর পাশাপাশি মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় এও বলেন, আগামী বছরগুলিতে, পশ্চিমবঙ্গ বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রযুক্তি সংস্থাগুলির জন্য পরিবেশের সুবিধার্থে ভারতের পরবর্তী আইটি হাব হতে চলেছে। কারণ, এখানে আইটি এবং আইটিইএস সংস্থাগুলিকে ১৫ শতাংশ ফ্লোর এরিয়া অনুপাতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি ১০০ শতাংশ বৈদ্যুতিক শুল্ক মকুব, স্ট্যাম্প শুল্ক এবং নিবন্ধকরণ ব্যয়ের ১০০ শতাংশ মকুব এবং ৫০ শতাংশ সম্পত্তি করে ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে, রাজ্যে আইটি এবং আইটিইএস সংস্থাগুলির জন্য কাজের সময় ৮.৫ ঘন্টা থেকে ৯ ঘন্টা ছাড়ের ফলে সংস্থাগুলি লক্ষ লক্ষ টাকায় তাদের রাজস্ব বৃদ্ধি করতে সহায়তা করছে। একইসঙ্গে তাঁর সংযোজন, রাজ্য সরকার সমস্ত ক্ষেত্রে এব্যাপারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।এখন শিল্পপতিদেরও এই ধরনের এক ধারনা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের জন্যএগিয়ে আসা উচিত।

এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি ও বৈদ্যুতিন দপ্তরের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব রাজীব কুমার জানান, প্রযুক্তির মাধ্যমে নাগরিকদের সমস্যা সমাধান এবং মূল্যবোধ সৃষ্টিতে মনোনিবেশ করা উচিত। উদ্যোক্তারা উদীয়মান প্রযুক্তির মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের জন্য প্রথম পদক্ষেপ নিচ্ছেন এবং কয়েক মাসের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার একটি ডিজিটাল পাবলিক পরিকাঠামো তৈরি করতে গ্লোবাল ক্যাপাবিলিটি সেন্টার (জিসিসি) এবং সেমিকন্ডাক্টর ইউনিট নিয়ে আসছে। এর পাশাপাশি জিসিসি এবং সেমিকন্ডাক্টরের খসড়া নীতি শীঘ্রই আসবে এবং বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও অবশ্যই এই ডিজিটাল পাবলিক পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। এই নতুন নীতিগুলি আইসিটি ক্ষেত্রে রাজ্যকে উন্নত করবে বলে মনে করেন তথ্যপ্রযুক্তি ও বৈদ্যুতিন দপ্তরের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব।

সিসকোর পাবলিক সেক্টরের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ত্রিদেব রায় তাঁর বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, ‘প্রযুক্তি বাজারের বিভিন্ন বিভাগ নির্বিশেষে, প্রযুক্তির চাহিদার দুটি বৃহত্তম চালকের মধ্যে নিরাপত্তা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অন্যতম। সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষা অনুসারে, প্রযুক্তিগতসংস্থাগুলিরব্যয়ের৬২শতাংশ এর জন্য বরাদ্দ করছে।টেকসই এআই এবং ডেটা বিশ্লেষণ প্রযুক্তি শিল্পের ক্ষমতায়ন অব্যাহত রাখবে।পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য স্মার্ট অ্যাজাইল প্রযুক্তিও গ্রহণ করা প্রয়োজন।’

সিআইআই ইস্টার্ন রিজিয়ন আইসিটিই সাবকমিটি এবং গ্রুপ সিডিআইও, আইটিসি লিমিটেডের চেয়ারম্যান প্রসেনজিৎ সেনগুপ্ত এদিনের অনুষ্ঠানে জানান, ভারতে আইটি ব্যয় ২০২৪ সালে ১১.১ শতাংশ দ্বিঅঙ্কের বৃদ্ধি রেকর্ড করবে বলে অনুমান করা হচ্ছে, যা গত বছরের ছিল ১২৪.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এবার তা এসে দাঁড়িয়েছে মোট ১৩৮.  বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। সঙ্গে এও জানান, ভারতের আইটি শিল্প ২০২৬ সালের মধ্যে ৩৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করতে পারে এবং ইনফোমেরিকস রেটিংসের একটি প্রতিবেদন অনুসারে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ১০ শতাংশ অবদান রাখতে পারে। প্রাচ্যের কথা বললে, গত কয়েক বছর ধরে কলকাতা দ্রুত একটি পছন্দের আইটি/বিপিও গন্তব্যে পরিণত হচ্ছে। পূর্ব ভারতের বৃহত্তম তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্র হিসাবে কলকাতা ৯০০টিরও বেশি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় সরাসরি ২ লক্ষেরও বেশি লোককে নিযুক্ত করে যথেষ্ট উন্নয়নের প্রমাণ রেখেছে।

সিআইআই ইস্টার্ন রিজিয়ন আইসিটিই সাবকমিটি অ্যান্ড ডেলিভারি সেন্টার হেড, টিসিএসএর কোচেয়ারম্যান মনোজিত সেনগুপ্ত জানান, ‘উদীয়মান প্রযুক্তি আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্য অর্জনে ইতিবাচক বুস্টার হতে পারে।’ এদিনের অনুষ্ঠান থেকে তিনি এও জানান, ‘রাজ্যে তথ্যপ্রযুক্তি পরিকাঠামো সহ, একটি বাস্তুতন্ত্র এবং শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষার সুবিধা পশ্চিমবঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারে সহায়তা করবে।’

এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাজিদ হুসেন, এভিপি এবং কলকাতার হেড অফ অপারেশনস, কগনিজ্যান্ট টেকনোলজি সলিউশনস, মদন মোহন চক্রবর্তী, ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ইস্ক্রেমেকো সহ আরও অনেকেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

9 + 2 =