রবিবার সকালে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বাড়িতে হানা দিল সিবিআই। সঙ্গে শুরু হয় তল্লাশি আর ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ। সূত্রে খবর, সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার আধিকারিকেরা পৌঁছে যান তাঁর বাড়িতে। ফিরহাদের বাড়িতে পা রেখেই প্রথমে কেন্দ্রীয় তদন্ত আধিকারিকেরা নিয়ে নেন তাঁর মোবাইল। পরে তাঁর ঘরে প্রবেশ করে ফাইলপত্র ঘেঁটে দেখা হয় বলে সূত্রের খবর। এর আগে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে একাধিক নেতা-মন্ত্রীর বাড়িতেও চলেছে তল্লাশি। এরই সঙ্গে এদিন পুর নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ফিরহাদের বাড়িতে প্রথমবার চলে সিবিআই তল্লাশি। সূত্রের খবর, এক আমলাযোগেই রাজ্যের রাজ্যের এই হেভিওয়েট মন্ত্রীকে আতস কাচের তলায় রাখেন তদন্তকারীরা।
তবে সিবিআই বেরোতেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ফিরহাদ হাকিম। আর সেই সাংবাদিক বৈঠকে কখনও চোখ ছলছল ফিরহাদের, কখনও চূড়ান্ত ক্ষোভে ফেটে পড়তেও দেখা যায় তাঁকে। প্রিয়দর্শিনী হাকিমকে পাশে বসিয়ে ফিরহাদ প্রশ্ন ছুড়ে জানতে চান, ‘আমি কি চোর? বারবার আমাকে, আমাকে পরিবারকে হেনস্থা করা হচ্ছে।’ ফিরহাদ বলেন, কখনও তাঁকে গ্রেফতার করা হচ্ছে, কখনও দিনভর তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চলছে।
সঙ্গে এও জানান, এদিন তাঁর ভাইয়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান থাকলেও তাঁকে যেতে দেওয়া হল না। এরই রেশ ধরে ফিরহাদের প্রশ্ন, ‘কী অপরাধ করেছি? মানুষের পাশে যে কোনও সময় দাঁড়িয়েছি, সেটাই অপরাধ। বারবার কেন হেনস্থা করা হচ্ছে? আইন অনুযায়ী, পুরমন্ত্রীর পুরনিয়োগের সঙ্গে কী সম্পর্ক আছে? পুরনিয়োগের কোনও ফাইল পুরমন্ত্রীর কাছে আসে? না আইন অনুযায়ী হয়, না প্রসিডিওর অনুযায়ী হয়। কেন এটা করা হচ্ছে?’
এখানেই শেষ নয়, ফিরহাদ এদিন এও জানান, ২৫ বছর ধরে চেতলার কাউন্সিলর তিনি। কেউ কোনওদিন যদি বলে ববি হাকিমকে একটা পয়সা দিয়েছেন, পদ ছেড়ে চলে যাবেন তিনি। সিবিআই বেরিয়ে যেতেই ক্ষোভ উগরে ফিরহাদ বলেন, ‘পাপ করেছি মানুষের সেবা করে। সবসময় রিলেটেড কেস রিলেটেড কেস বলে। কীসের রিলেটেড কেস?’
এদিকে এদিন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বাড়ি থেকে সিবিআই আধিকারিকরা বের হন ৯ ঘণ্টা ৪২ মিনিট পর সিবিআই সূত্রে খবর, পুরনিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে এদিন মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রবিবার সকাল ৯টা ১৪ নাগাদ ফিরহাদ হাকিমের বাড়িতে আসে সিবিআইয়ের একটি দল। এদিন সিবিআইয়ের ৬ সদস্যর প্রতিনিধি দল চেতলার বাড়িতে যান। তিনজন ফিরহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন বলে সূত্রের খবর। বাকিরা তথ্য়তালাশ করেন। এরপর সন্ধে সাড়ে ৬টা নাগাদ তারা বের হন। সূত্রের খবর, মন্ত্রীকে দিয়ে বেশ কিছু নথির সত্যতা যাচাইও করা হয়। সিবিআই সূত্রে খবর, পুরনিয়োগের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়ে ফিরহাদ অবগত, কোন কোন ফাইল তিনি সই করেছেন তা নিয়েই প্রশ্ন করা হয় ফিরহাদকে। এদিকে ফিরহাদের পরিবার সূত্রে খবর, সিবিআইয়ের সমস্ত প্রশ্নের জবাবই দেন ফিরহাদ।
প্রসঙ্গত, পুর নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গত বৃহস্পতিবারও বেশ কয়েকটি জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তা মধ্যেই ছিল জ্যোতিষ্মান চট্টোপাধ্যায় নামে এক আমলার বাড়িও। ওই আমলার বাড়িতে গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পাশাপাশি বেশ কিছু নথিও উদ্ধার করা হয় তাঁর বাড়ি থেকে। এখানে বলে রাখা শ্রেয়, এই জ্যোতিষ্মান চট্টোপাধ্যায় ছিলেন ডিরেক্টরেট অব লোকার বডিজ-এর ডিরেক্টর। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ডিরেক্টর হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি। এই ডিরেক্টরেট অব লোকার বডিজ বা ডিএলবি- পুরসভাগুলির নিয়োগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। এরাই সিদ্ধান্ত নেয় নিয়োগের ক্ষেত্রে বরাত কাকে দেওয়া হবে। এদিকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, এই আমলার বাড়িতে এমন কিছু নথিপত্র উদ্ধার হয়েছে, যা থেকে সন্দেহ বেড়েছে বলেই সূত্রের খবর। আর সেখান থেকেই এ প্রশ্নও উঠেছে পুর নিয়োগে ডিএলবি-র যোগ থাকলে মন্ত্রী কিছুই জানবেন না, সেটা আদৌ সম্ভব কি না তা নিয়ে। সেই কারণেই আচমকা ফিরহাদের বাড়িতে সিবিআইয়ের এই হানা বলে সূত্রে খবর।