অভাবের জেরে স্ত্রীকে দেহ ব্যবসায় নামার প্রস্তাব, স্ত্রী রাজি না হওয়ায় খুন, ৩ বছর বাদে ঘটনার পর্দা ফাঁস সিআইডির

লকডাউনের বাজার। রোজগার বন্ধ। সংসারে অভাব অনটন নিত্য সঙ্গী। তা থেকে রেহাই পেতে স্ত্রী টুম্পা মণ্ডলকে দেহ ব্যবসায় নামাতে চেয়েছিলেন স্বামী ভোম্বল মণ্ডল। এদিকে স্ত্রী স্বামীর প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় খুন করে তার দেহ সেপটিক ট্যাঙ্কে ফেলে দেওয়া হয়। এই ঘটনার ৩ বছর পর অবেশেষে সিআইডির আধিকারিকদের কাছে নিজের এই অপরাধের কথা স্বীকার করল অভিযুক্ত ভোম্বল। ঘটনাস্থল দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুর। ধৃতের বয়ান অনুসারে সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে উদ্ধার করা হয় স্ত্রী টুম্পার কঙ্কাল।

স্থানীয় সূত্রে খবর, টুম্পা মণ্ডলের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল ভোম্বল মণ্ডলের। কোনও কাজ না করায় খুব স্বাভাবিক ভাবেই সংসারে ছিল আর্থিক অনটন। যার জেরে পরিবারিক অশান্তিও ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। এদিকে গত ২০২০ সালে সোনারপুরের মিলনপল্লিতে বাড়ি ভাড়া নেয় ভোম্বল। এদিকে কাজ না থাকায় হাতে নেই টাকা। তখনই স্ত্রী টুম্পাকে দেহ ব্যবসায় নামার প্রস্তাব দেয়। শুধু প্রস্তাব দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি ভোম্বল, তার জন্য ৩ জনের থেকে টাকাও নেয় সে। এমনকী ওই ৩ জনকে বাড়িতেও নিয়ে আসে সে। কিন্ত স্ত্রী টুম্পা রাজি না হওয়ায় ভোম্বল তাঁকে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করে। এরপর এই ঘটনার যাতে কোনও সূত্র না মেলে তার জন্য টুম্পার দেহ ফেলে দেওয়া হয় সেপটিক ট্যাঙ্কে।

এদিকে টুম্পার  হঠাৎ এই নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনায় পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয় তাঁর বাপের বাড়ির তরফ থেকে। অভিযোগের ভিত্তিতে ভোম্বলকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ চালালেও টুম্পার এই হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যাওয়া সম্পর্কে কোনও সূত্র মেলেনি ভোম্বলের কাছ থেকে। যার জেরে এক সময় জামিন পেয়ে যায় ভোম্বল।

সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টে নির্দেশে এই ঘটনার তদন্তভার হাতে পায় সিআইডি। এরপর সিাইডি-র দীর্ঘ জেরার মুখে পড়ে স্ত্রীকে খুনের কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয় ভোম্বল। এরপরই গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। পাশাপাশি ধৃতের বয়ানের ভিত্তিতে সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে কঙ্কাল উদ্ধার করে সিআইডি।

টুম্পার দেহ উদ্ধারের পর মৃতার বোন পম্পা নস্কর জানান, ‘সিআইডি জানতে পেরেছে, আমার জামাইবাবু ৩টে ছেলেকে নিয়ে এসেছিল। জোর করে আমার দিদির সঙ্গে মেলামেশা করতে চেয়েছিল। দিদি মেলামেশা করতে দেয়নি বলে ওরা প্রাণে মেরেছে আমার দিদিকে। আমার ওর ফাঁসি চাইছি।’

অন্যদিকে যে বাড়িতে ভোম্বল ভাড়া থাকত বাড়ির সদস্য রুপালি মণ্ডল বলেন, ‘ভোম্বলরা এখানে দু’মাসের মতো ছিল। সিআইডি-র দল এখান থেকে পেয়েছে হার, মাথার খুলি, শাখা, পলা ও নোয়া।’ তবে এই ঘটনায় একা ভোম্বল, নাকি আরও কেউ জড়িয়ে সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন সিআইডি-র আধিকারিকরা।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 − four =