২০২৩-এর জুন মাসে ইন্ডিয়া জোট তৈরি হয়েছিল। জোটের প্রথম উদ্যোক্তা নীতীশ কুমার এনডিএ-তে ফিরে গেছেন। জোট হওয়ার পরে মহারাষ্ট্রে এনসিপি ভেঙে দু’ টুকরো। কংগ্রেসের বড় মাপের এক নেতা প্রয়াত এস বি চহ্বনের পুত্র একদা মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী অশোক চহ্বন চলে গেছেন বিজেপিতে। শুধু তাই নয়, কংগ্রেসের নেতা মিলিন্দ দেওরাও যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। এদিকে জোটের বহু আলোচনার পরে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, এ রাজ্যে জোট হবে না। কারণ, যে কংগ্রেস দলের রাজ্য নেতা রাজ্যে ৩৬৫ ধারা প্রয়োগ করার দাবি জানাচ্ছেন, সে রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট সম্ভব নয়। কাশ্মীরে ফারুক আবদুল্লা জানিয়েছেন, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট নয়, পিডিপির মেহবুবা মুফতি জানিয়েছেন কোনও নির্বাচনী সমঝোতা হচ্ছে না। এদিকে রাহুল গান্ধির দ্বিতীয় পদযাত্রায় ধরা পড়ল বাগাড়ম্বর।সিপিএম ছাড়া ইন্ডিয়া জোটের কোনও শরিক দল সেই ন্যায় যাত্রাতে সামিল হয়নি। এখানে একটা কথা বলতেই হয়, রাহুল গান্ধির প্রথম ন্যায় যাত্রাতেও কেরালায় সিপিএম সামিল হয়নি, আবার পিনারাই বিজয়নের ডাকা দিল্লি সমাবেশে কংগ্রেসের নেতারা হাজির হননি। সেই ইন্ডিয়া জোট তৈরি হওয়ার পরে রাজস্থান, ছত্তিশগড় হারিয়েছে কংগ্রেস, বিরাট পরাজয় মধ্যপ্রদেশে। তেলঙ্গানাতে কোনওভাবে মুখরক্ষা হয়েছে। এরই মধ্যে অখিলেশ যাদব আলটিমেটাম দিয়ে দিয়েছেন, ১৫টা আসন নিলে নিন না হলে জোট হবে না, আর জোটই যদি না হয় তাহলে ন্যায় যাত্রাতেও আমরা থাকব না। ইউপিতে ইন্ডিয়া জোটের শরিক রাষ্ট্রীয় লোকদল আজ বা কাল এনডিএ-তে যাওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করবে, মণীশ তেওয়ারি বা কমল নাথ আর তাঁর পুত্র নকুল নাথ কী করবেন তা নিয়ে সংশয়ে কংগ্রেস নেতৃত্ব। এদিকে জুন মাসে তৈরি হয়েছে ইন্ডিয়া অ্যালায়েন্স। কিন্তু এখনও পর্যন্ত একটা সম্মিলিত জনসভা করতে দেখা যায়নি। প্রত্যেক নেতা মঞ্চে বসে আছেন, দেশের নানান সমস্যা নিয়ে তাঁদের কথা বলছেন, মানুষ শুনছে, এরকম ছবিও সামনে আসেনি। জয়রাম রমেশ, কে সি বেণুগোপাল, পবন খেরাদের দেখলে মনে হচ্ছে হেরে যাওয়া রাজার ক্লান্ত সৈনিক। সব মিলিয়ে এই মূহূর্তে ইন্ডিয়া জোট এক বিশুদ্ধ অশ্বডিম্ব।
এদিকে অবিজেপি বিরোধী দলগুলোকে এক ছাতার তলায় আনার জন্য, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই কংগ্রেসকে অনেক বড় স্বার্থ ত্যাগ করে কাজ করতে হবে। কিন্তু সে বুদ্ধি আর চেষ্টার ছিটেফোঁটাও দেখতে যাচ্ছে না কংগ্রেস শিবির। অত্যন্ত আনাড়ি অ্যাপ্রেনটিসের মতো রাহুল গান্ধি কিছু ভালো ভালো কথা বলছেন। এসব নিয়ে উনি অনায়াসে চার্চের ফাদার হতে পারেন, কলেজের জনপ্রিয় অধ্যাপক হতে পারেন, শান্তিনিকেতনে এসে রবীন্দ্র গবেষকও হতেই পারেন কিন্তু আমাদের দেশের বিরোধী দলের নেতা হিসেবে নিজেকে দাঁড় করাতে পারা তো দূরের কথা সামান্য বিশ্বাসযোগ্যতাও তৈরি করতে পারবেন না, পারছেন না। এবং এরকমটাই চলতে থাকলে, হারার আগেই হেরে বসে থাকলে স্বাভাবিকভাবেই মমতা নিজের মাঠ বাঁচাবেন। সিপিএম কেরালা, স্তালিন তামিলনাড়ু, বিহার তেজস্বী বাঁচাবেন। অন্যদিকে অখিলেশ লড়বেন উত্তরপ্রদেশে। কেজরিওয়াল দিল্লি আর পঞ্জাব বাঁচাবেন। হেমন্ত সোরেন লড়ে যাবেন ঝাড়খণ্ডে। এরপর কংগ্রেস সত্যিই ৪০টা আসন পাবে তো! প্রশ্নের উত্তর মিলতে আর কয়েকটা মাস অপেক্ষায় থাকতেই হচ্ছে।