সময় যত গড়াচ্ছে একের পর এক সন্দীপের ঘটনা সামনে আসছে। আর তাতে সন্দীপ সম্পর্কে সবারই এক অদ্ভুত ধারনা তৈরি হচ্ছে। এ প্রশ্নও উঠছে, সন্দীপ কী ভাবে মাতা উঁচু করে বাঁচবেন! আর যাঁরা সন্দীপকে প্রশ্রয় দিয়ে চলেছেন তাঁদেরই বা ভবিষ্যত কী!
এই বাক্যবন্ধ ব্যবহারের পিছনে রয়েছে আরজি করে প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ। যা আগেই প্রকাশ্যে এনেছেন আরজি করের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি। আরজিক কাণ্ডের পর আবার সামনে আসছে আরজি করের নানা ঘটনা। যা ঘটে গেছে সন্দীপের আমলে। আখতার আলি জানাচ্ছেন, আরজি করের অন্দরেই নাকি বাইরে মেয়ে নিয়ে আসা হত, চলত মচ্ছব! সঙ্গে এও জানান, ‘আরজি করে পরিবেশ খারাপ হয়ে গিয়েছিল। আর পরিবেশ খারাপ হওয়ারও ছিল। যদি জুনিয়র ডাক্তারকে বসিয়ে মদ খাওয়ানো হয়, জুনিয়র ডাক্তাররা যদি গেস্ট হাউজ়ে বাইরে থেকে মেয়ে নিয়ে আসে, তাহলে পরিবেশ কীভাবে ঠিক থাকবে।’
বায়োমেডিক্যালের বর্জ্য পাচার থেকে শুরু করে আর্থিক দুর্নীতি, বেআইনি মৃতদেহ ব্যবহার- প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে কী না কী অভিযোগ রয়েছে! নন মেডিক্যাল ডেপুটি সুপার হিসাবে আখতার আলি দীর্ঘদিন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে কর্মরত ছিলেন। এক গুচ্ছ অভিযোগ তুলে তিনি আগেই সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। আরজি কর পর্বে তা নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। কিন্তু তখনই আখতার আলি বুঝে গিয়েছে, অত্যন্ত প্রভাবশালী সন্দীপ ঘোষ। কীভাবে সন্দীপ ঘোষ এতটা প্রভাবশালী হয়ে উঠলেন?
আখতার আলি এই প্রসঙ্গে জানান, ‘সন্দীপ ঘোষ আসার আগে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ায় ১ নম্বর মেডিক্যাল কলেজ ছিল। আমি পাঁচ জন প্রিন্সিপ্যাল ৬ জন মেডিক্যাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট, ভাইস প্রিন্সিপ্যালের সঙ্গে কাজ করেছি। কিন্তু ওঁর মতো নোংরা লোক আমি দেখিনি। ওঁ ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের পর থেকেই নোংরা রূপ দেখাতে শুরু করেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমে ছাত্রদের পেছনে লাগা, ছাত্রদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা, ফেল করানো, তোলাবাজি, একের পর এক পর্দাফাঁস হয়। আমি যে দুর্নীতিগুলো দেখেছিলাম, আমি আওয়াজ তুলি, বিভিন্ন দফতরে জানাই। আমি রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যানকেও জানিয়েছিলাম।’
শুধু তাই নয়, তাঁর জন্য নাকি নিয়মই বদলে ফেলেছিল প্রশাসন। আখতারের কথায়, ‘আমি ১৬ বছর ওই মেডিক্যাল কলেজে দিবারাত্র থেকেছি। ওঁ কিছু ছাত্রকে জেন্ডার হ্যারাসমেন্টে ফাঁসিয়ে দিয়েছিলেন। ওঁ কতটা প্রভাবশালী, তার উদাহরণ দিই। ওঁকে যখন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বদলি করা হয়, তখন ওর ডিমোশন হয়, ওঁ তখন অধ্যাপক হন। প্রফেসর থেকে আবার যখন প্রিন্সিপ্যাল পোস্টে দেওয়া হয়, তখন নিয়ম হচ্ছে অ্যাজ পার গ্যাজেট নোটিফিকেশন রিক্রুটমেন্ট রুলস সিলেকশন কমিটি হবে। আবার ইন্টারভিউ হবে, বিজ্ঞাপন হবে। ওঁর জন্য সরকার নিজের নিয়মই বদলে দিত। এটার পিছনে একটা চক্র রয়েছে। এর পিছনে বড় মাথাদের হাত রয়েছে।’ আখতার আশাবাদী আরজি কর কাণ্ড সামনে আসার পর এই সব দুর্নীতির বিচার হবে। এখন আদালতের ওপর ভরসা রেখেছেন তিনি।