ফের খুনের ঘটনা খোদ কলকাতায়। পুলিশের ধারনা, ব্যবসায় টাকা পয়সা না মেলায় এই খুনের ঘটনা। পুলিশ সূত্রে খবর, মঙ্গলবার রাতে ঘোলা থানার কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে একটি অ্যাপ ক্যাবে রাখা ট্রলি ব্যাগের মধ্যে মেলে যুবকের মৃতদেহ। তবে যে ক্যাবে করে এই ট্রলি ব্য়াগটি নিয়ে আসা হচ্ছিল সেই ক্যাব চালকের মনে সন্দেহ হয় ট্রলি ব্যাগটির ওজন দেখে। তখনই তিনি জানতে চান, ট্রলি ব্যাগে কী রয়েছে সে ব্য়াপারে। একইসঙ্গে এও জানতে চাওয়া হয় ওই ফাঁকা জায়গায় কেন গাড়ি থামাতে বলা হল তা নিয়েও। এরপরই ক্যাব চালকের সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়ে দুই যুবক। সেই সময় ঘোলা থানার টহলরত ভ্যান সেখান দিয়ে যাচ্ছিল। ঝামেলা দেখে পুলিশ এগিয়ে গেলে এক যুবক পালিয়ে যায়। অন্যজনকে পুলিশ ধরে ফেলে। ট্রলি ব্যাগ খুলতেই দেখা যায় তার ভেতরে এক যুবকের মৃতদেহ। মৃত যুবকের মুখ সেলোটেপ দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় রয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ঘোলা থানা ও নাগেরবাজার থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী আসে। মৃতদেহ উদ্ধার করার পাশাপাশি বেশ কিছু নথি উদ্ধার করেছে পুলিশ। ব্যাগের ভিতর একটি রক্তমাখা ধারালো অস্ত্র ও ৬৫ হাজার টাকা পাওয়া গিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় একজনকে। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করে ঘোলা ও নাগেরবাজার থানার পুলিশ।
তদন্তে নেমে জানা যায়, মৃত যুবক ও অভিযুক্তদের পরিচয়। কীভাবে ওই যুবককে খুন করা হল, অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদে সামনে এল সেই তথ্যও। তবে ট্রলি ব্যাগে অভিযুক্তরা কেন ৬৫ হাজার টাকা রেখেছিলেন, তা নিয়ে ধন্দে তদন্তকারী অফিসাররা।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত ও অভিযুক্তদের বাড়ি রাজস্থানে। মৃত যুবকের নাম ভাগারাম। অভিযুক্ত দুই যুবকের নাম কৃষ্ণরাম সিং ও করণ সিং। অভিযুক্ত ২ জন গিরিশ পার্কের একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। তাঁদের কাছ থেকে চুড়িদারের পিস কিনতেন ব্যবসায়ী ভাগারাম। ২ জনের কাছে ৮ লক্ষ টাকা দেনা হয়ে গিয়েছিল তাঁর। দীর্ঘদিন ধরে টাকা চাইতেন এই দুই অভিযুক্ত। একইসঙ্গে পুলিশ এও জানিয়েছে, টাকা না পেয়ে ভাগারামকে খুনের পরিকল্পনা করেন করণ ও কৃষ্ণরাম। তাঁদের ভাড়াবাড়িতে ডেকে পাঠান ভাগারামকে। তিনি এলে প্রথমে কফির সঙ্গে বিষ মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। ভাগারাম অচৈতন্য হয়ে গেলে তাঁকে প্রথমে শ্বাসরোধ করা হয়। তারপর গলার নলি ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে দেন দুই অভিযুক্ত।
এরপর মঙ্গলবার রাত ৯টা ১৫ মিনিট নাগাদ দমদম নাগেরবাজার এলাকা থেকে দু’জন যুবক একটি অ্যাপ ক্যাব বুকিং করে। একটি ট্রলি ব্যাগ ও বস্তা নিয়ে গাড়িতে ওঠে তারা। প্রথমে নাগেরবাজার নিয়ে আসেন। নাগেরবাজার থেকে আবার ক্যাব গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে আসা হয় ঘোলা এলাকায়। নিমতা দিয়ে মুড়াগাছা ব্রিজ হয়ে ঘোলা মহিষপোতার কাছে কল্যাণী এক্সপ্রেসের ধারে অন্ধকার জায়গায় গাড়ি দাঁড় করাতে বলে ওই দুই যুবক। আর এই ঘটনাতেই পুলিশের ধারনা,
মঙ্গলবার রাতে ট্রলি ব্যাগে মৃতদেহ নিয়ে এসে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে ফেলে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল অভিযুক্তদের। কিন্তু, ক্যাব চালকের সন্দেহ হওয়াতেই ধরা পড়েন এক অভিযুক্ত। মঙ্গলবার রাতেই গ্রেফতার করা হয় করণ সিংকে। সেইসময় পালিয়ে যায় কৃষ্ণরাম সিং। এরপর করণকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে কৃষ্ণরাম সিংকে গ্রেপ্তার করে ঘোলা থানার পুলিশ।