২ মাসের মধ্যে ২৬ ক্যামেরা বসবে যাদবপুর ক্যাম্পাসে

যাদবপুর ক্যাম্পাসে সিসিটিভি বসানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ওয়েবেলের ওপর। ওয়েবেল সূত্রে খবর, পুরো কাজ শেষ হতে সময় লাগবে ২ মাস। মোট ২৬টি ক্যামেরা বসছে যাদবপুরের দুই ক্যাম্পাসে, হস্টেলের গেটেও। এর জন্য খরচ হবে ৩৭ লক্ষ টাকা।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, সিদ্ধান্ত হয়েছে যাদবপুরের মূল ক্য়াম্পাস ও সল্টলেক ক্যাম্পাসের সর্বত্রই বসছে এই সিসিটিভি ক্যামেরা। ক্যামেরা বসছে মেইন হস্টেলের গেটে। পাশাপাশি এ খবরও মিলেছে, যাদপুরের মূল ক্যাম্পাসের ৩ ও ৪ নম্বর গেটে বসবে তিনটি করে সিসি ক্যামেরা। বাকি ১, ২, ৫ নম্বর গেটে বসবে ২টি করে সিসি ক্যামেরা। অরবিন্দ ভবনে বসছে ডোম ক্যামেরা। ৩৬০ ডিগ্রি পাক খেতে খেতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রশাসনিক ক্ষেত্র অরবিন্দ ভবনের চারপাশে নজর রাখতে পারবে এই অত্যাধুনিক ক্য়ামেরা। প্রসঙ্গত, শিক্ষক, কর্মচারিদের বিক্ষোভ হোক বা ছাত্র আন্দোলন, অবস্থান, অনশন সবই হয় এই অরবিন্দ ভবনে। একইসঙ্গে রেজাল্ট তোলা, সার্টিফিকেট নেওয়া, ফি জমা- সহ যাবতীয় কাজ করতে এখানেই আসতে হয় পড়ুয়াদের। এখানেই বসেন, উপাচার্য, সহ-উপাচার্যেরা। কিন্তু, এখানে বসছে একটিই ক্য়ামেরা। সূত্রে এ খবরও মিলেছে যে বসানো হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যুক্ত সিসি ক্যামেরাও।

সূত্রের খবর, অর্ডার করার চার সপ্তাহের মধ্যে ক্যামেরা আসবে ক্য়াম্পাসে। তবে এখনও ফাইনাল অর্ডার হয়নি বলে খবর। শুরু হয়েছে প্রস্তুতি। সূত্রের খবর, দিনে ও রাতে রঙিন ছবি তুলতে সক্ষম এই ক্যামেরাগুলি। অডিয়ো ও ভিডিয়ো রেকর্ড করতেও সক্ষম। যে কোনও ব্যক্তির মুখ সহজেই চিহ্নিত করতে পারবে এই ক্যামেরার মধ্যে থাকা এআই টেকনোলজি। গাড়ির গতিবিধিও নজরে রাখবে এই এআই কোনও ব্যক্তিক বয়স, চশমা পরে আছেন কিনা, দাড়ি আছে কিনা-এসব স্টোর করে রাখতে পারবে নিজের মাথায়। যা দেখে কোনও ব্যক্তির বিবরণ শুনে তাঁকে সহজেই চিহ্নিত করা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সূত্রে খবর, যে ক্যামেরাগুলি আসতে চলেছে তারমধ্যে দুটি ক্য়ামেরায় থাকছে অত্যাধুনিক এএনপিআর ক্যামেরা। একটি বসছে গেট চারে, একটি বসছে গেট তিনে। তবে এরপরও কিন্তু সিসিটিভি নজরদারির বাইরে থেকে যাচ্ছে ক্যাম্পাসের বিস্তীর্ণ এলাকা।

এদিকে সিসিটিভির পাশাপাশি নিরাপত্তারক্ষী হিসাবে প্রাক্তন সেনাকর্মীদের নিযুক্ত করার বিষয়েও ভাবনা চালাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সূত্রের খবর, যাদবপুর ও সল্টলেক ক্যাম্পাস এবং মেন হস্টেল মিলিয়ে মোট দশটি জায়গায় মোতায়েন করা হবে প্রাক্তন সেনাকর্মীদের। তিনটি শিফটের জন্য মোট ৩০ জনকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ‘ডিরেক্টরেট রিসেটলমেন্ট জোন (পূর্ব)’-এ রিকুইজিশন পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। রাতে মূলত খোলা থাকে চার নম্বর গেটটি। সেক্ষেত্রে বন্ধ গেট বা যে জায়গায় প্রয়োজন নেই সেগুলিতে নাইট শিফটে থাকা প্রাক্তন সেনাকর্মীদের দিয়ে ক্যাম্পাস টহল দেওয়ানো হতে পারে। জানা গিয়েছে, সরাসরি রেজিস্ট্রারের অধীনে থেকে কাজ করবে নিরাপত্তারক্ষীদের বিশেষ দলটি। ৩০ জন প্রাক্তন সেনাকর্মীর জন্য বার্ষিক প্রায় সাড়ে তিন কোটি অর্থব্যয় হবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।

প্রসঙ্গত, প্রথমবর্ষের পড়ুয়ার রহস্যমৃত্যুর পর থেকেই বারবারই আম-আদমির আক্রমণের মুখে পড়েছে যাদবপুরের মুক্তমনা পরিবেশ। প্রশ্ন উঠেছে ক্য়াম্পাসের অন্দরে যত্রতত্র নেশা করা নিয়েও। অভিযোগ, সবথেকে বেশি নেশা করা হয় ঝিলপাড়, গ্রিন জোন, ওএটি, মাঠ, রবীন্দ্রভবন সংলগ্ন এলাকাগুলিতে। এই জায়গাগুলির কোথাওই থাকছে না সিসিটিভি। অভিযোগ এই জায়গাগুলিতে সবথেকে বেশি মদ্যপদের আনাগোনা দেখা যায়। সিসিটিভি থাকছে না সেন্ট্রাল লাইব্রেরি, সায়েন্স আর্টস মোড়ের মতো ব্যস্ততম জায়গাগুলিতেও। সিসিটিভি থাকছে না যাদবপুরের মধ্যে থাকা কোনও ক্যান্টিনেই। আর সেখানেই ফের একবার প্রশ্ন উঠছে যাদবপুরের নিরাপত্তা নিয়ে। এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, যে সংখ্যায় সিসিটিভি বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে তাতে আদৌও কী ক্যাম্পাসে ঠেকানো যাবে বহিরাগতদের দৌরাত্ম্য, নেশামুক্তি ঘটবে যাদবপুরের কি না তা নিয়েও।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

11 − six =