৫০ শতাংশ রোগের উৎস ত্রুটিপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস, জানাল আইসিএমআর

আম ভারতীয়র খাদ্যাভ্যাসে জড়িয়ে নুন-চিনি-তেল-মশলা। আর এখানেই বিপদ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে চিনিকেই সবচেয়ে ‘তেতো’ বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় চিকিৎসা গবেষণা সংস্থা আইসিএমআর-এর অধীন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউট্রিশন (এনআইএন)-এর এক্সপার্ট কমিটির সদস্যরা। ভারতীয়দের জন্যে ১৭ দফা ডায়েটের একটি গাইডলাইনও প্রকাশ করা হয়েছে তাঁদের তরফ থেকে। যেখানে  বলা হয়েছে, দেশবাসীর ৫৬ শতাংশেরও বেশ মানুষের অসুখবিসুখের নেপথ্যে রয়েছে ত্রুটিপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস। আর এই ত্রুটিপূর্ণ খাদ্যাভ্যাসের জেরেই ২৮.৪ শতাংশ টিন-এজার ভুগছেন অ্যানিমিয়ায়। এরই পাশাপাশি ১০.৪ শতাংশ কিশোর-কিশোরী প্রি-ডায়াবিটিক। সঙ্গে এও জানানো হয়েছে, অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া ও জীবনশৈলীর কারণেই প্রায় ২৩.৫ শতাংশ ভারতীয় ওবেসিটির শিকার। এ সবেরই নেপথ্যে রয়েছে খাবারে নুন-চিনি-তেল-এর অতিরিক্ত ব্যবহার।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৮ সালে প্রথম ‘ডায়েটারি গাইডলাইন্স ফর ইন্ডিয়ান্স’ প্রকাশ করেছিল ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের অধীন হায়দরাবাদের সংস্থা এনআইএন। তারপর ১৯৯৯, ২০০৩, ২০০৫, ২০০৭ এবং ২০১১-তেও সেই নির্দেশিকা পরিমার্জন করা হয়েছিল। তার পর দীর্ঘদিন আর এমন কিছু প্রকাশ করেনি এনআইএন। এতদিকে এর মধ্যে দেশের শহরাঞ্চলে খাদ্যাভ্যাস থেকে শুরু করে রোগব্যাধির চরিত্র অনেকটাই বদলেছে। আর সেই কারণেই সম্প্রতি এনআইএন-এর অধিকর্তা আর হেমলতার নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়ে আইসিএমআর। তাঁদের উপরেই দায়িত্ব দেওয়া হয় এই নতুন গাইডলাইন তৈরির। এরপরই ১৩ বছর পর ফের গাইডলাইন প্রকাশ করল এনআইএন।

১৭ দফা এই গাইড লাইনে সুষম খাদ্যে জোর দেওয়ার পাশাপাশি খাবার থেকে চিনি, নুন ও তেল কমাতে বলা হয়েছে। কারণ, নুনে রক্তচাপ বাড়ে, হার্টের সমস্যা হয়। চিনিতে ডায়াবিটিসের আশঙ্কা না বাড়লেও ওবেসিটি দেখা দিতে পারে। পরে সেই ওবেসিটিই জন্ম দিতে পারে ডায়াবিটিসের। রান্নায় তেলের ব্যবহার কমিয়ে সুপারিশ করা হয়েছে ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ নানা রকমের বাদাম খাওয়ার উপরে। এর পাশাপাশি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া অযথা প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট খেতেও নিষেধ করা হয়েছে। কেন এমন সব সুপারিশ করা হলো, ১৪৮ পাতার গাইডলাইনে তারও ব্যাখ্যা দিয়েছে এনআইএন। বলা হয়েছে, নুন-চিনি-তেলের মাত্রা কমিয়ে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস তৈরি হলে উচ্চ রক্তচাপ ও করোনারি হার্ট ডিজ়িজ়ের বহর ব্যাপক হারে কমবে। ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাবে ডায়াবিটিসের বহরও। ফলে অনেকাংশেই এড়ানো যাবে অকালমৃত্যু। সেই কারণেই প্রসেসড ফুড, ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে দেশবাসীকে। এই ১৭ দফা গাইড লাইনে দিনে ২০-২৫ গ্রামের বেশি চিনি খেতে নিষেধ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, প্রতি কেজি বডি-ওয়েটের জন্যে বড়জোর ১.৬ গ্রাম প্রোটিনই যথেষ্ট। অতিরিক্ত বডি-মাস তৈরির জন্যে প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট না খাওয়াই ভালো।

একইসঙ্গে পাতের খাবারে যে ক্যালোরি মেলে শরীরে, তার হিসেবও দেওয়া হয়েছে। গাইডলাইন বলছে, ক্যালোরির উৎস হিসেবে চিনি বা মিষ্টি খাওয়া যেতে পারে বড়জোর ৫ শতাংশ। ৪৫ শতাংশ ক্যালোরি নিতে হবে চাল, গম, মিলেটের মতো শস্য থেকে। ১৫ শতাংশ ক্যালোরি নিতে হবে ডাল, বিনস ও মাংস থেকে। বাকি ৩৫ শতাংশ ক্যালোরির জন্যে বাদাম, শাকসব্জি ও ফলের মতো ফাইভার সমৃদ্ধ খাবার এবং দুধ খাওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × 2 =