‘পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে পদক্ষেপ করতে হবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে। এ জন্য কমিশনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে।‘ রবিবার রাজভবনে ঘণ্টা দেড়েকের বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহাকে এই পাঠ-ই দিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।
এদিকে রাজভবন সূত্রে খবর, পঞ্চায়েত ভোটে বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে আলোচনা হয় রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের। এখনও পর্যন্ত ভোটের জন্য কী কী প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে, রাজ্যপালকে তা জানান রাজীব। বৈঠকে রাজ্যপাল পরামর্শ দেন, ‘আপনি স্বাধীন ভাবে কাজ করুন। ভোটে অশান্তি কোনও ভাবেই যেন বরদাস্ত না করা হয়। শান্তিপূর্ণ ভোটের লক্ষ্যে সমস্ত পদক্ষেপ করতে হবে। কমিশনের যেন নিরপেক্ষ ভূমিকা থাকে।’ কেন্দ্রীয় বাহিনীকে যাতে সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে হয়, সে ব্যাপারেও রাজীবকে এদিন বার্তা দেন রাজ্যপাল। স্পর্শকাতর বুথে অতিরিক্ত নজর দেওয়ার কথাও বলতে শোনা গেছে রাজ্যপাল সি বি আনন্দ বোসকে।
প্রসঙ্গত, মনোনয়ন-পর্বে অশান্তির আবহে রাজভবনে ‘পিস রুম’ খোলা হয়েছিল। সেখানে যে সব অভিযোগ পেয়েছে রাজভবন, সেই অভিযোগ নিয়ে রাজীবের সঙ্গে এদিন কথা হয় রাজ্যপালের। রাজীবের যোগদান রিপোর্ট প্রত্যাহার করেছিলেন রাজ্যপাল। সেই নিয়ে টানাপড়েন চলেছিল। এই নিয়েও দু’জনের মধ্যে কথা হয় বলে রাজভবন সূত্রে খবর।
রাজভবন সূত্রে এও জানা গিয়েছে, রাজীবের উদ্দেশে রাজ্যপাল বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে পদক্ষেপ করতে হবে। কোথাও গণ্ডগোলের অভিযোগ পাওয়া গেলেই ব্যবস্থা নিতে হবে। মানুষ যেন নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। ভোটাররা যেন বাধা না পান। অভিযোগ পেলেই গুরুত্বের সঙ্গে তা খতিয়ে দেখতে হবে।’ রাজভবন কোনও বিষয়ে রিপোর্ট চাইলে তা দিতেও কমিশনারকে বলেন রাজ্যপাল। একইসঙ্গে রাজভবন সূত্রে দাবি, রাজ্যপালকে রাজীব জানান, এখনও পর্যন্ত সব কেন্দ্রীয় বাহিনী আসেনি। আবেদন মতো কেন্দ্রীয় বাহিনী এলেই এলাকায় মোতায়েন করা হবে। সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কমিশনের কাছে অভিযোগ জমা পড়লেও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মনোনয়ন দাখিলকে ঘিরে সমস্ত অভিযোগ কমিশন গুরুত্ব দিয়ে দেখেছে বলেও রাজ্যপালকে জানান রাজীব।
তবে এদিন রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে রাজ্যপালের তরফ থেকে এই পাঠ দেওয়ার কারণ, কারণ, নির্বাচন কমিশন ‘নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছে না’ বলে সরব হতে দেখা যায় বিরোধীদের। এই আবহে গত বুধবার রাজীবের জয়েনিং রিপোর্ট ফেরত পাঠান রাজ্যপাল। এর আগে পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন-পর্বে অশান্তির আবহে রাজীবকে তলব করেছিলেন রাজ্যপাল। কিন্তু ভোটের কাজে ব্যস্ত থাকার কারণ দেখিয়ে সেবার রাজভবনে যাননি রাজীব। এর পরেই গত বুধবার রাজীবের যোগদান রিপোর্ট ফেরত পাঠান রাজ্যপাল। যা ঘিরে শোরগোল পড়ে বঙ্গ রাজনীতিতে। এরপর রবিবার বিকেল ৫টা ২৫ মিনিটে রাজভবনে যান রাজীব। সন্ধ্যা ৭টা ৩৪ মিনিটে রাজভবন থেকেবৈঠক শেষে রাজভবন থেকে বের হতে দেখা যায় তাঁকে। এদিকে রবিবার সকালে রাজ্যপাল স্বয়ং জানান, রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে তিনি ডাকেননি। সঙ্গে এও বলেন, রাজীবই দেখা করার জন্য সময় চেয়েছেন।