হাইকোর্টের কড়া নির্দেশের পরেও স্কুল শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশন নিয়ে হেলদোল নেই রাজ্য়ের

অলোকেশ ভট্টাচার্য

 

রাজ্যের স্কুল-শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে  হাইকোর্টের কড়া নির্দেশিকা থাকলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। জেলায় জেলায় কারা প্রাইভেট টিউশন করেন, সেই সব স্কুল-শিক্ষককে খুঁজে বের করে রিপোর্ট তৈরি করে পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট বছরখানেক আগে। তবে সে নির্দেশ খাতায় পত্রেই থেকে যায়। আর তারই জেরে গত সপ্তাহে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে আদালত অবমাননার মামলা হয়। এক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, যে কয়েকটি জেলার স্কুল পরিদশর্করা রিপোর্ট দিয়েছেন, তাতে কোথাও প্রাইভেট টিউশন করেন এমন কোনও স্কুল শিক্ষকের ব্যাপারে কোনও তথ্য নেই। রাজ্য মধ্যশিক্ষা পষর্দও মেনে নেয়, গত এক বছরে ন’টি জেলার স্কুল পরিদর্শক এই ব্যাপারে কাজ করলেও তাঁরা প্রাইভেট টিউশন সম্পর্কে তেমন কোনও তথ্য পাননি। এরপরেই হাইকোর্ট কমিশনার অফ স্কুল এডুকেশনকে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবং জেলা স্কুল পরিদর্শকদের নিয়ে এই সমস্যা সমাধানে রূপরেখা তৈরির নির্দেশ দেয়। সেই পরিকল্পনা তৈরি করে আগামী আট সপ্তাহের মধ্যে বিষয়টি বাস্তবায়িত করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

প্রসঙ্গত, স্কুলের শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশন নিয়ে আপত্তি বহু দিনের। সেই নিয়ে গত দু’দশকে মাঝেমধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় স্কুল-শিক্ষকদের সামাজিক অবমাননার ঘটনাও ঘটেছে। তারপরেও পরিস্থিতির বদল হয়নি। এরই মধ্যে স্কুলের শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশন আটকাতে প্রাইভেট টিউটররা সংগঠিত হন। রাজ্য প্রাইভেট টিউটরস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সংগঠন এই নিয়ে হাইকোর্টে মামলাও করে কয়েক বছর আগে। সেই মামলায় ২০২৩-এর ১ মে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে ওই সংগঠনের তরফে জেলা ধরে ধরে কিছু স্কুলের শিক্ষকের প্রাইভেট টিউশন করার ছবি-সহ প্রমাণ পেশ করা হয়। আদালত অবমাননার মামলায় ওই সংগঠনের হয়ে আইনজীবী এক্রামুল বারি অভিযোগ করেন, হাইকোর্ট নির্দেশ দিলেও কার্যত শিক্ষা দফতর বিষয়টিকে গুরুত্বই দেয়নি। আর যে সব জেলার তথ্যপ্রমাণ দেওয়া হয়েছিল, সেগুলি নিয়েও কোনও পদক্ষেপ করেননি ডিআইরা। তাঁদের গা ছাড়া মনোভাবের জন্যেই স্কুলের শিক্ষকদের কাছে বহু ক্ষেত্রে প্রাইভেট পড়তে বাধ্য হচ্ছেন ছাত্র-ছাত্রীরা। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে আইনজীবী কোয়েলি ভট্টাচার্য বলেন, ন’টি জেলার ডিআই এই ব্যাপারে রিপোর্ট দিয়েছেন। কিন্তু সেখানে শিক্ষকরা নিজেরা লিখিত ভাবে জানিয়েছেন, তাঁরা প্রাইভেট টিউশন করেন না। ফলে ডিআইদের রিপোর্টে সেই তথ্যই উঠে এসেছে।

এদিক আদালতের তরফ থেকে জানানো হয়, ২০১৮ সালে শিক্ষকদের জন্যে যে বিধি তৈরি হয়েছে, সেখানে স্পষ্ট বলা আছে, সরকারের থেকে বেতন নেওয়া কোনও স্কুল-শিক্ষক ব্যক্তিগত আয়ের জন্যে প্রাইভেট টিউশনের মতো কোনও কাজ করলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করা যাবে। কাজেই কমিশনার অফ স্কুল এডুকেশনকে এ বার পদক্ষেপ করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four + six =