বাংলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জর্জরিত ‘থ্রেট কালচার’-এ

আরজি করের ঘটনার সূত্রে সামনে এসেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দাদাদের ‘থ্রেট কালচার’। তবে যাদবপুরের ঘটনা দেখিয়ে দিল এই হুমকি সংস্কৃতি রাজ্যের অন্য কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও বহাল। আর শুধু রাজ্য সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই নয়, এই কালচার রয়েছে কেন্দ্রীয় ইনস্টিটিউশনগুলিতেও।

আমহার্স্ট স্ট্রিট এলাকার একটি কলেজের কথাই ধরা যাক। অভিযোগ, সেখানে তৃণমূলপন্থী প্রাক্তনীদের এতটাই দাপট যে তাঁদের দলবলকে তো বটেই, সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রেও হেয়ার স্টাইল নিয়ে কার্যত ফতোয়া জারি করা হয়। সেক্ষেত্রে নির্দেশ আসে নেতাদের মতো করে চুলের ছাঁট দিতে হবে বলেই। কোনও নেতা যদি নেড়া হন, তা হলে তাঁর অনুগতদের থেকে শুরু করে সাধারণ পড়ুয়াদেরও অনেককে বাধ্য করা হয় নেড়া হতে! বছর কয়েক আগে এই কলেজেই কমন রুমে উলঙ্গ করে এক ছাত্রকে র‍্যাগিংয়ের ভিডিয়ো ভাইরাল হয় বলে সূত্রে খবর। সেই ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রনেতারা গ্রেফতারও হন। অন্যদিকে দক্ষিণ কলকাতার একটি কলেজে আবার প্রতিষ্ঠানেরই নানা অগণতান্ত্রিক কাজকর্ম নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হন তিন পড়ুয়া। অভিযোগ, প্রথমে তাঁদের ক্যাম্পাসের মধ্যেই ঘিরে ধরে একদল ‘দাদা’। বলা হয়, পোস্ট ডিলিট করে ক্ষমা চাইতে হবে। না হলে পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড মিলবে না। তবে এই তিনজনের মধ্যে মাত্র একজনই ক্ষমা চান। অভিযোগ, ফর্ম ফিল আপের পরে দেখা যায়, যিনি ক্ষমা চেয়েছিলেন, শুধু তাঁরই অ্যাডমিট কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। বাকি দু’জন সেবার পরীক্ষাতেই বসতে পারেননি।

পাশাাপাশি নিউ ব্যারাকপুর এলাকার একটি ডিগ্রি কলেজে এক ছাত্রী ক্যাম্পাসের মধ্যে মদ-গাঁজার চক্র নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কড়া ভাষায় সরব হন। যে ছাত্রনেতারা ক্যাম্পাসে এই আসর বসান, তাঁদের বিরুদ্ধেও সহপাঠীদের কাছে মুখ খোলেন ওই ছাত্রী। এরপর কলেজে একাধিক বার থ্রেটের পর তাঁর বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। কলেজ ছাড়তে একপ্রকার বাধ্য হন তিনি। শিয়ালদহ এলাকার একটি কলেজে আবার দিনের পর দিন পড়ুয়াদের চাপ দিয়ে দলীয় মিটিং-মিছিলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ আছে। মিছিলে যাওয়ার আগে নাকি ‘হেড কাউন্ট’ করা হয়। অনুপস্থিত পড়ুয়াদের নাম নোট করে রাখা হয় এবং পরে ইউনিয়ন রুমে নিয়ে গিয়ে তাঁদের কান ধরে ওঠবোস করানো হয় বলে অভিযোগ! বাদ নেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিও।

বালিগঞ্জে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এক গবেষক-ছাত্রীকে দীর্ঘদিন ধরে এক শিক্ষক উত্ত্যক্ত করছিলেন বলে জানা যায়। অভিযোগ, ছাত্রী যখন এ নিয়ে মুখ খোলার সিদ্ধান্ত নেন, তখন ওই শিক্ষক তাঁকে হুমকি দেন, ‘ডিগ্রি আটকে যাবে। কোথাও কাজের জন্য আর রেকমেন্ডেশন পাবি না।’ গত বছর অগাস্টে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে র‍্যাগিংয়ের সূত্রেও মেন হস্টেল ও ক্যাম্পাসের একাংশে এমন হুমকির ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। এর পাশাপাশি হাওড়ার একটি কেন্দ্রীয় সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও পড়ুয়াদের একাংশকে হুমকির সম্মুখীন হতে হয় বলে খবর। কোন শোভাযাত্রায় কী গান গাওয়া হবে, তা-ও ঠিক করে দেন প্রভাবশালী দাদারাই।

এই প্রসঙ্গে এসএফআইয়ের সহ সভাপতি শুভজিৎ সরকারের বক্তব্য, ‘দিনের পর দিন ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে তৃণমূলের পার্টি অফিসে পরিণত করা হয়েছে।’ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সহ সভাপতি সুদীপ রাহা অভিযোগ একেবারে অস্বীকার করেননি। তাঁর পাল্টা বক্তব্য, ‘যাদবপুর, প্রেসিডেন্সিতে এসএফআই এবং তাদের সহযোগীরা কী করে? তারপরেও অবশ্য বলছি, এই থ্রেট সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ জানাতে চাইলে নির্ভয়ে জানান। আমরা আক্রান্ত ছাত্রছাত্রীদের পাশে থাকব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 − 6 =