‘রাজনীতির নামে চলছে আগুন নিয়ে খেলা। চলছে রক্তের খেলা। আর এর দায় পুরোপুরি রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের।‘ পঞ্চায়েত নির্বাচনের ৪৮ ঘণ্টা আগে সাংবাদিক বৈঠকে বসে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস দ্বর্থ্যহীন ভাষায় এমনটাই জানান। সঙ্গে এও বলেন, রাজ্যে যে হিংসার ঘটনা ঘটছে, তার দায় কমিশনারেরই। ভাঙড়, ক্যানিং, বাসন্তী সহ রাজ্যের বিভিন্ন অংশে বেলাগাম সন্ত্রাস চলেছে বলে অভিযোগ করেন রাজ্যপাল। এই সব ঘটনার বিরুদ্ধে অবিলম্বে পদক্ষেপ করার বার্তাও দেন তিনি। বর্তমান বাংলার পরিস্থিতি বোঝাতে এদিন কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে আনেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। কমিশনারের উদ্দেশে বলেন, তিনি যেন ভোটযুদ্ধে ‘অর্জুনে’র মতো ভূমিকা নেন, ‘অশ্বত্থামা’র মতো নয়। কমিশনারের হাতে কতটা ক্ষমতা আছে, তাও উল্লেখ করেন রাজ্যপাল। বক্তব্যের ছত্রে ছত্রে এদিন তাঁর নিশানায় ছিলেন নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা। নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহাকে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়ে রাজ্যপাল বলেন, ‘রাজ্যে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার জন্য নির্বাচন কমিশন দায় নিতেই পারে। বাংলার মাথা নত হয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনার আপনাকে বলছি, এখনও সময় রয়েছে। মানুষের কাছে যান, তাঁদের সঙ্গে কথা বলুন। আপনার এক দফায় ভোট ঘোষণা করেছেন। কেউ আপনাদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। এমনকী কলকাতা হাইকোর্টও নয়। দয়া করে মানুষের দাবি শুনুন।’
এর জন্য কমিশনারের গ্রাউন্ড জিরোতে যাওয়া উচিত বলে মনে করেন বোস। তাঁর মতে, শান্তিপূর্ণ ভোট করার সব ক্ষমতাই আছে কমিশনারের হাতে। রাজ্যপাল বলেন, ‘আমি আপনাকে নিয়োগ করেছি। আপনি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। মানুষ কিন্তু এখনও আপনাকে বিশ্বাস করে। এখনও সময় আছে। মানুষকে সুরক্ষা দিন। তদন্ত করুন। বাংলার মানুষের হৃদয় বোঝার চেষ্টা করুন। তাদের ভয় দূর করুন।’
এরই রেশ ধরে রাজ্যপাল এও বলেন, ‘আমি মা-শিশুদের কান্না শুনেছি। বাসন্তী, ক্যানিং, ভাঙড়, চোপড়া, মুর্শিদাবাদ, মালদা সহ একাধিক জায়গায় বেলাগাম সন্ত্রাস হয়েছে। আগুন নিয়ে খেলা হয়েছে। মানুষের জীবন ও রক্ত নিয়ে খেলা হয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার নিজের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। এই রক্তপাতের রাজনীতি বন্ধ হওয়া উচিত। এখনও সময় আছে, মানুষের নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করুন ভোট কর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করুন। প্রয়োজন অনুযায়ী বাহিনী মোতায়েন করুন। ভুয়ো ব্যালট ছাপানোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করুন। আপানার এটা ফোন মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে।’
এদিন রাজ্যপাল তুলে ধরেন তৃণমূলের তরফ থেকে তাঁকে বিজেপি মুখপাত্রের ভূমিকা বলার ঘটনাকেও। সেই প্রসঙ্গে রাজ্যপাল বলেন, ‘শুধু বিজেপি নয়, কংগ্রেস, তৃণমূল সহ সব রাজনৈতিক দলের লোকেরাই আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। আমি তাঁদের সকলের সঙ্গে কথা বলেছি। রাজনীতি করা আমার কাজ নয়। কিন্তু শেষ রক্তবিন্দু থাকা অবধি সন্ত্রাস বন্ধে আমি আমার দায়িত্ব পালন করে যাব।’
প্রসঙ্গত, রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পর থেকে একের পর এক জেলায় সন্ত্রাস ও খুনের ঘটনা ঘটেছে। অনেকগুলি প্রাণ ঝরে যায়। সন্ত্রাস বন্ধে উদ্যোগী হয়ে রাজভবনে পিস রুম খোলেন রাজ্যপাল। এর পাশাপাশি সন্ত্রাস বন্ধে ভাঙড় থেকে কোচবিহার ছুটে গিয়েছেন তিনি। ফিরে এসে রিপোর্ট তৈরি করে, তা কমিশনেও পাঠিয়ে দিয়েছেন বোস। তিনি চান কমিশনারও যাতে নিজে গিয়ে মানুষের খোঁজ নেন। কারা মানুষকে মারছে, তার জবাবও কমিশনারই দিতে পারবেন বলে উল্লেখ করেন রাজ্যপাল।
তবে বৃহস্পতিবারের মতো চড়া সুর এর আগে রাজ্যপালের গলায় শোনা যায়নি। রাজ্যপালের এই সাংবাদিক বৈঠকের পর তৃণমূল ও রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজভবনের সংঘাত অবশ্যম্ভাবী হয়ে গেল বলেই ধারনা বঙ্গ রাজনীতিবিদদের।