আরজি করের ঘটনায় ১০ দফা দাবিকে সামনে রেখে অনশন শুরু করেছিলেন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁদের পাশে দাঁড়াতে রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে শ’পাঁচেক ফ্যাকাল্টি গণ–ইস্তফা দিয়েছিলেন।এরপর ৮ থেকে ১৪ অক্টোবর একে একে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষক-চিকিৎসকরা সম্মিলিত ভাবে পদত্যাগ করেছিলেন আন্দোলনকে সংহতি জানাতে। কিন্তু ওই পর্যন্তই! সরকারের বিরুদ্ধে যতই ক্ষোভ থাকুক না কেন, তাঁদের কেউ পরে আর নিয়ম মেনে ব্যক্তিগত ইস্তফার রাস্তায় হাঁটেননি।
আদতে যা দেখা যাচ্ছে গত এক মাসে একটিও ব্যক্তিগত পদত্যাগপত্র জমা পড়েনি স্বাস্থ্যভবনে। আর এই কারণেই স্বাস্থ্যকর্তারা মনে করছেন, আন্দোলনে নিছক ইন্ধন জোগাতেই গণ ইস্তফার পথে হেঁটেছিলেন অধিকাংশ চিকিৎসক। যা স্বাভাবিক ভাবেই তীব্রতর করেছিল গণ–আন্দোলনকে। মোট ১১২ জন শিক্ষক–চিকিৎসক গত ৮ অক্টোবর হঠাৎ করেই গণ–ইস্তফা দিয়ে দেন সরকারকে চাপে রাখতে। স্বাস্থ্যভবনের কর্তারা জানাচ্ছেন, সেই পর্বের পর বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর, একমাস সময় পেরিয়ে গিয়েছে। স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, যে ভাবে সাদা কাগজে গণ–স্বাক্ষরের মাধ্যমে ইস্তফা দিয়েছিলেন ওই চিকিৎসকরা, যা সরকারি নিয়ম বহির্ভূত। এ ভাবে সকলে মিলে একসঙ্গে পদত্যাগ করা যায় না।নিয়মানুসারে সরকারি চাকরিতে ইস্তফা দিতে গেলেন নির্দিষ্ট ফর্ম্যাট পূরণ করে, জয়েনিংয়ের বিভিন্ন বিস্তারিত তথ্য দিয়ে সরাসরি স্বাস্থ্য অধিকর্তা কিংবা স্বাস্থ্য–শিক্ষা অধিকর্তা অথবা সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের সুপার এবং মেডিক্যাল কলেজের ক্ষেত্রে অধ্যক্ষের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিতে হয়। এই পদত্যাগপত্র মেমো নম্বর–সহ নির্দিষ্ট ফাইল হিসেবে ঊর্ধ্বতনের টেবিলে পৌঁছয়। সরকার যদি তা গ্রহণ করে, তা হলে এ নিয়ে সরকারি আদেশনামাও জারি হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা হয়নি।
এই প্রসঙ্গে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, ‘সে সময়ে ৭২ জন ফ্যাকাল্টি গণ–ইস্তফা দিয়েছিলেন। পরে যদিও আর কেউ ব্যক্তিগত ভাবে পদত্যাগ করেননি।’ সাগর দত্তের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান জানান, ‘৩৬ জন গণ–ইস্তফা দিয়েছিলেন তখন। পরে আলাদা করে আর কেউ পদত্যাগপত্র জমা করেননি।’ একইসুরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ইন্দ্রজিৎ সাহা জানান, সে সময়ে ৩৭ জন শিক্ষক–চিকিৎসক গণ–ইস্তফা দিলেও পরে আর কেউ ব্যক্তিগত ভাবে পদত্যাগ করেননি।
যদিও আন্দোলনকারী সিনিয়র ডাক্তারদের তরফে চিকিৎসক সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টর্সের সাধারণ সম্পাদক উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘তখন বিভিন্ন দাবিতে জুনিয়র ডাক্তাররা অনশন করছেন। অথচ সরকার কোনও ভাবেই সাড়া দিচ্ছিল না। সরকারের সেই অনড় মনোভাবের প্রতিবাদে আমরা প্রায় ৫০০ সিনিয়র ডাক্তার সে সময়ে গণ–ইস্তফা দিয়েছিলেম। সেই পদত্যাগ ছিল প্রতীকী। তাই ব্যক্তিগত ভাবে কেউ ইস্তফা দেননি। তবে পরিস্থিতি যদি সে রকম হয়, ভাবতে বাধ্য হব আমরাও।’